ঢাকা, বুধবার, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

কাঠমান্ডুতে সেনা টহল, আন্দোলন ‘হাইজ্যাক’ হয়েছে বলে দাবি জেন-জির

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:১৬, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫
কাঠমান্ডুতে সেনা টহল, আন্দোলন ‘হাইজ্যাক’ হয়েছে বলে দাবি জেন-জির

নেপালে বিক্ষোভ-সংঘাত পরবর্তী পরিস্থিতি বেশ টালমাটাল। রাজধানী কাঠমান্ডুতে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী।

এরই মধ্যে দুই দিনের সফল হওয়া আন্দোলন ‘হাইজ্যাক’ হয়ে গেছে বলে দাবি করেছে জেনারেশন-জেড (জেন-জি) বিক্ষোভকারীরা।  

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে হিমালয়কন্যা দেশটি। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ার মতো ঘটনায় জেন-জির আন্দোলনে সরকারের কার্যত পতন হয়েছে।  

গতকাল মঙ্গলবার আন্দোলন ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগ, রাজনৈতিকদের বাড়িঘর হামলা এবং সরকারি ভবন ও সংসদে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনের পর এখন পর্যন্ত ২৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

জেন-জিরা যা চাইছিল, সেটিতে তারা সফল হয়েছে। এর মধ্যে আবার বিতর্কও শুরু হয়েছে। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণ প্রজন্মের সংগঠনগুলো বলছে, সহিংসতা তাদের আন্দোলনের অংশ নয়। সুযোগসন্ধানীরাই বরং আন্দোলন ‘হাইজ্যাক’ করেছে।  

বিক্ষোভকারীদের দাবি, আন্দোলনে অনুপ্রবেশকারীরা ভাঙচুর ও লুটপাটে লিপ্ত হয়েছে। সেনাবাহিনীও একে সমর্থন করেছে।

বিক্ষোভকারীদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, তাদের আন্দোলন অহিংস ছিল এবং থাকবে। তারা নাগরিক সুরক্ষা ও সরকারি সম্পদ রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে মাঠে কাজ করছে। বুধবারের পর আর কোনো কর্মসূচি নেই বলেও জানানো হয়।

বুধবার কাঠমান্ডুতে কারফিউ জারি রয়েছে। ফলে পরিস্থিতি তুলনামূলক শান্ত। দেশটির বিমানবন্দরও চালু করা হয়েছে। অবশ্য বহু সরকারি ভবন এখনো আগুনে জ্বলছে।  

সংকট নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী বিক্ষোভকারীদের শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। জেন-জির পক্ষ থেকে এক ছাত্রনেতা বিবিসিকে জানিয়েছেন, তারা নতুন দাবি-দাওয়ার তালিকা প্রস্তুত করছেন।

জাতীয় পর্যায়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকবে। সেনাবাহিনী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, সহিংসতা ও ভাঙচুরে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে লুটপাট ও হামলার অভিযোগে ২৭ জনকে গ্রেপ্তার এবং ৩১টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। কাঠমান্ডু জুড়ে এখন একাধিক সেনা চেকপয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে। যানবাহনের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে। লাউডস্পিকারে সেনারা ঘোষণা দিচ্ছে, ‘অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ নয়, ঘরে থাকুন। ’

নেপাল সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রাজারাম বসনেত জানিয়েছেন, তারা মূলত সেসব উপাদানকে নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন, যারা সুযোগ নিয়ে লুটপাট ও আগুন লাগাচ্ছে।

কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের পর নেপাল এখন নেতৃত্বশূন্য অবস্থায়। সমাজচিন্তকরা অন্তর্বর্তী সরকারের কথা বলছেন। তবে কে দায়িত্ব নেবেন বা সামনে কী ঘটবে, এ ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

গতকাল মঙ্গলবার আগামী সরকার নিয়ে একটি বিবৃতিতে দিয়েছে জেন-জি বিক্ষোভকারীরা। তারা বলেছে, নেপালের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব অবশ্যই স্বাধীন হতে হবে, দলীয় রাজনীতির বাইরে থাকতে হবে এবং যোগ্যতা ও সততার ভিত্তিতে নির্বাচিত হতে হবে। জনগণের স্বার্থে স্বচ্ছ ও স্থিতিশীল সরকার গঠন করতে হবে, দুর্নীতিগ্রস্ত গোষ্ঠীর নয়।

কাঠমান্ডুর সামাজকর্মী তারা কার্কি বলেন, নিরপরাধ তরুণদের প্রাণ গেছে। দেশ আজ গভীর উদ্বেগের মধ্যে আছে। এখন আমাদের দরকার শান্তি এবং সেই দুর্নীতির অবসান, যা মানুষকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করেছে। যথেষ্ট হয়েছে। এসব বন্ধ হোক।  

এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।