ঢাকা, সোমবার, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

‘মিয়ানমারে মুসলমানদের ওপর হামলা দাঁড়িয়ে দেখে পুলিশ’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:৪০, এপ্রিল ২২, ২০১৩
‘মিয়ানমারে মুসলমানদের ওপর হামলা দাঁড়িয়ে দেখে পুলিশ’

ঢাকা: মিয়ানমারের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কতিপয় ব্যক্তি সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। আর তা দাঁড়িয়ে দেখছে পুলিশ।



যুক্তরাজ্যভিত্তিক এক সংবাদ মাধ্যম একটি নতুন ভিডিওচিত্র পেয়েছে। ওই ভিডিওচিত্রে মিয়ানমারের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের এমন নিস্ক্রিয়তার দৃশ্য দেখা গেছে।

ভিডিওচিত্রটি দেখা যায়, উচ্ছৃঙ্খল একজন এক মুসলমান মালিকের একটি সোনার দোকানে ভাঙচুর করছে। এরপর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। আগুনে পুড়ে মারা যাচ্ছে এক ব্যক্তি। নিহত ওই ব্যক্তিটি মুসলমান ছিলেন।

গায়ে আগুন লাগা ওই ব্যক্তিটি মাটিতে গড়াগড়ি দিচ্ছে। আর তা দর্শক হয়ে দেখছে পুলিশের সদস্যরা। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিদের বলতে শোনা যায়, “তাকে কেউ পানি দিও না-মরতে দাও তাকে। ”

অন্য এক দৃশ্যে দেখা যায়, একদলে লোকের হাতে ধরা পড়ার পর পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে এক যুবক। ওই দলে একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুও ছিলেন। ওই যুবককে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয়। মাটিতে পড়ে কাতরাতে থাকে। বোঝা যায়, যুবকটি পরে মারা গেছে।

ধারণকৃত ওই ভিডিওচিত্রে একবারের মতো পুলিশকে দেখা গেছে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করার। ওই দৃশ্যে দেখা যায়, আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলে ছারখার হয়ে যাচ্ছে এমন বাড়ি থেকে মুসলমান নারী ও শিশুকে উদ্ধার করছে পুলিশ।

ভিডিওটিতে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যও রয়েছে।

২০ মার্চ মুসলমান মালিকানাধীন একটি সোনার দোকানে হামলার মাধ্যমে নতুন করে মিয়ানমারে সহিংসতা শুরু হয়। এক বৌদ্ধ দম্পতিকে ঘিরে বিতর্ক শুরু হলে তা সংঘাতে পরিণত হয়। পরে এক বৌদ্ধ ভিক্ষুর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ভিক্ষু পরে হাসপাতালে মারা যান। এভাবে সহিংসতা ছড়িয়ে পরে।

গত বছরের মে মাসে এক বৌদ্ধ নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বৌদ্ধ ও মুসলমানদের মধ্যে দাঙ্গা শুরু হয়। এর জুন ও অক্টোবর সহিসংতার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় কমপক্ষে ২০০ জন নিহত  হয় যাদের অধিকাংশই ছিল মুসলমান। হাজার হাজার মুসলমান জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় করে এসে পাশ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করে।

সোমবার নিউইয়র্ক ভিত্তিক  মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নৃগোষ্ঠী নিধন ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে সরকারের সংশ্লিষ্টতার স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

এইচআরডব্লিউ ‍অভিযোগ, নিরাপত্তা বাহিনী পাশে দাঁড়িয়ে ছিল বা আবার কখনও মুসলমানদের ওপর হামলা, হত্যার ঘটনায় উচ্ছৃঙ্খল জনতার সঙ্গে যোগ দিয়েছিল।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এইচআরডব্লিউ রাখাইন রাজ্যে চারটি গণকবরের সন্ধান পেয়েছে তারা।

নিরাপত্তা বাহিনী হত্যার প্রমাণ মুছে ফেলতে নিহতদের এসব কবর পুঁতে ফেলেছে বলে দাবি আন্তর্জাতিক এ মানবাধিকার গোষ্ঠীটির।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাখাইন রাজ্যের এক সরকারি মুখপাত্র। উইন মিয়াং নামের ওই মুখপাত্র বলেন, “এইচআরডব্লিউর তদন্তকারীরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেনি। ”

তিনি আরও জানান, সরকার আগে থেকেই হামলার বিষয়টি জানতে পারেনি। অস্থিতিশীলতা রোধে সরকার নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করেছিল।

মিয়ানমার সরকারের সাম্প্রতিক সংস্কারের প্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) দেশটির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে কিনা তা বিবেচনা করছে।

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার পরও মিয়ানমারের ওপর  থেকে স্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে পারে ব্রাসেলস। মিয়ানমারের বেসামরিক সরকারের কিছু রাজনৈতিক সংস্কারের প্রেক্ষিতে এক বছর আগে সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে ইইউ।

তবে কিছু মানবাধিকার গোষ্ঠী মিয়ানমারের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছে। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, সম্প্রতি সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর সহিংসতাসহ বিভিন্ন ইস্যু সরকার সমাধান না করা পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া উচিত হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৩
সম্পাদনা: শরিফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর, eic@banglanews24.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।