ঢাকা: সালমান খান জানতেনই না তার নামে একটি একাডেমি খুলবে। পৌঁছে যাবেন বিশ্বের প্রতিটি মানুষের কাছে।
তার পদ্ধতির কথা শুনে অনেকে প্রথমে তাকে পাগলও ভেবেছন। কিন্তু কারও কথায় কান না দিয়েছে এগিয়ে গেছেন সালমান। দৃঢ়তার সঙ্গেই তিনি তার লক্ষকে বাস্তবে রূপদানের জন্য শুরু করলেন অন-লাইন শিক্ষা প্লাটফর্ম “খান’স একাডেমি”। ২০০৯ সাল থেকে নিজেকে পুরোপুরি নিয়োগ করেন খান’স একাডেমিতে।
পাগলামো হোক আর যাই হোক তার এই প্রচেষ্টা ডাউনিং স্ট্রিট থেকে শুরু করে ওয়াশিংটন ডিসি পর্যন্ত সকলেরই মনো্যোগ আকর্ষণ করেছে।
বিশ্বের দুটি শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় এমআইটি(MIT)ও হাভার্ড পড়ুয়া সালমান ২০০৪ সালে আর্থিক বিশ্লেষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। লুইজিয়ানায় অবস্থানরত চাচাত বোনকে অঙ্ক সহজে বোঝানোর জন্য শুরু করেন অনলাইনেই শিক্ষাদান। এর চাচাত বোনের সঙ্গে শিক্ষার্থীর তালিকায় যোগ হয় আরো কিছু আত্মীয়।
ক্রমান্বয়ে তার এই অনলাইন শিক্ষার চাহিদা বাড়তে থাকে। এভাবে সালমানের দূরশিক্ষণ প্রক্রিয়ার চাহিদা বাড়তে থাকলে তার এক বন্ধু তার পড়ানোর ভিডিও গুলো ইউটিউবে পোস্ট করতে উপদেশ দেন যেন তাকে তার আত্মীয়-স্বজন যেকোনো সময় তা দেখতে পারে।
“ইউটিউব মানেই তা কোনো পিয়ানো-বাদক বিড়ালের ভিডিওর জন্য। জটিল অঙ্কের সমাধানের জন্য নয়”-এমনটাই ছিল তার অভিব্যক্তি।
২০০৬ সালের ১৬ নভেম্বর ইউটিউবে একটি অ্যাকাউন্ট খুলেন সালমান। ২০০৯ সাল থেকেই খান নিজেকে পুরোদমে খান একাডেমির কাজে নিয়োজিত করেন। গড়ে তোলে একটি শিক্ষনীয়, পরামর্শদাতা ও পরীক্ষামূলক ওয়েব সাইট khanacademy.org যেখানে যে কেউ যে কোনো সময় যে কোনো জায়গা থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিনামূল্যে পেতে পারবে জটিল সব অঙ্কের সমাধান।
নিজের বাড়ি থেকে ছোট পরিসরে শুরু করেছিলেন তার এই শিক্ষাদান পদ্ধতি। উইকিপিডিয়ার হিসাব মতে, ২০১৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ইউটিউবে খান একাডেমির গ্রাহকের সংখ্যা ৮ লাখ ৫০ হাজার।
তার এই প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে ডাউনিং স্ট্রিটের প্রযুক্তি বিষয়ক ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টা রোহান সিলভা বলেন, “এটা অত্যুক্তি হবেনা যদি বলি তার এই প্রচেষ্টার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় বিপ্লব আসছে। ”
লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সের থিয়েটারে হাজারো অতিথির সামনে তার একাডেমির আর্থিক অলাভজনক অবস্থা সম্পর্কে অবশ্যম্ভাবী এক প্রশ্নের পর.৩৬ বছরের খান বলেন, “আমি শখের বশে এটা শুরু করি। আমাকে যখন আমার বন্ধুরা প্রশ্ন করে আমার ব্যবসায়িক রীতি-নীতি কি, তখন আমি তাদের জানাই আমার কোনো ব্যবসায়িক রীতি-নীতি নেই। ”
কোনো ব্যবসায়িক রীতি-নীতি থাকুক আর নাই বা থাকুক,খান একাডেমির রয়েছে অসংখ্য ভক্ত, মাসিক প্রায় ৬০ লাখ নিয়মিত ব্যবহারকারী আর ৪ হাজার অনলাইন টিউটোরিয়াল।
তবে বিল দেয়া ক্রমেই সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল যতক্ষন না এন দ্যোর নামক জনৈক হিতৈষী নারী এগিয়ে আসেন খান একাডেমির সাহায্যার্থে। তিনি প্রথমে ১০ হাজার মার্কিন ডলার অনুদান দেন। পরবর্তীতে একাডেমির দ্ব্যর্থহীন সফলতায় তিনি আরো এক লাখ মার্কিন ডলার অনুদান দেন।
মজার বিষয় হল বিল গেটস তার নিজের সন্তানকে পড়ানোর জন্যও খানের ভিডিও ব্যবহার করেন। এ প্রসঙ্গে খান বলেন, “এটি আসলে আমাকে খনিকটা বিচলিত করে ফেলে। কেননা এটা আমার বোন নাদিয়ার জন্য বানানো একটি ভিডিও ছিল, বিল গেটস এর জন্য নয়”।
তবে খানের এই প্রচেষ্টা যতই প্রশংসনীয় হোক না কেন সমালোচনার ঝড়ে তিনিও বিতর্কিত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তার প্রতিক্রিয়া ছিল খুবই নমনীয়। তিনি বলেন, “৩০ বছর ধরে শিক্ষকতা করে আসার পরে যদি হঠাৎ কোনো তথাকথিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিশ্লেষককে বিশ্বের ‘শিক্ষক’ বলে অভিহিত করা হয় তবে তাতে আমিও চটে জেতাম। ”
নিজের এই অসামান্য কাজের জন্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেয়েছেন সালমান। ২০১২ সালে টাইমসের প্রভাবশালী ১০০ জনের তালিকায় তার নামটা শোভা।
১৯৭৬ সালে জন্মগ্রহণ করা সালমানকে ‘এডুকেটর’ হিসেবে স্বীকৃতি হিয়েছে বিশ্বজ্ঞানকোষ ভিত্তিক ওয়েবসাইট উইকিপিডয়া।
তার বাবা ছিলেন বাংলাদেশের বরিশালের অধিবাসী। যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের নিউ অরিলিন্সে বড় হযেছেন।
গণিত, ইলেক্ট্রিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং ও কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক করার পর ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সের ওপর করেছেন মার্স্টাস। হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করেছেন ব্যবসায় নিয়ে। সাফল্যের সঙ্গে সেখান থেকে অর্জন করেছেন এমবিএ ডিগ্রী।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৩
সম্পাদনা: বুশরা ফারিজমা হুসাইন ও শরিফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর, eic@banglanews24.com