ঢাকা : বৃহস্পতিবার কলকাতার বিধাননগর এসিজেএম আদালতে হাজির করা হল বুধবার ট্রানজিট রিমান্ডে নিয়ে আসা সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন, সংস্থার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায় ও শীর্ষ কর্মকর্তা অরবিন্দ সিংহ চৌহানকে।
গত ১৬ এপ্রিল দায়ের করা ৩টি এবং ২২ এপ্রিল ২টি মিলিয়ে মোট পাঁচটি ধারায় (৪২০, ৪০৬, ১২০বি, ৫০৬, ৩৪) ধৃতদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়।
তবে এদিন শুধুমাত্র ‘তারা নিউজ চ্যানেলে’র তরফ থেকে নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষের দায়ের করা প্রতারণার অভিযোগে ধৃতদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা শুরু হয়।
জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা শুরু হওয়ায় প্রথমেই অভিযুক্তদের জামিনের আবেদন খারিজ করা হয়।
তাদের ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, আগামী ৭ দিনের মধ্যে ধৃতদের বিরুদ্ধে আর কোন কোন ধারায় অভিযোগ রয়েছে তা স্পষ্ট করে জানাতে হবে। ১৪ দিন পর তাদের ফের আদালতে পেশ করতেও বলা হয়।
সারদা গোষ্ঠীর যে সব এজেন্ট এবং আমানতকারী সম্প্রতি আত্মহত্যা করেছেন, তার দায় সারদা গোষ্ঠীর প্রধান সুদীপ্ত সেনের উপরেই চাপাতে চায় পুলিশ।
যে সব এলাকায় ওই সব ঘটনা ঘটেছে, সেখানে মৃতের পরিবারকে দিয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের করানো হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র দফতর।
সূত্রের খবর- ওই সব মামলায় সুদীপ্তর বিরুদ্ধেই সরাসরি অভিযোগ আনা হবে।
শুধু তাই নয়, সুদীপ্তর বিরুদ্ধে ১৪ বছরের পুরনো একটি খুনের মামলাও পুনরুজ্জীবিত করার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার। দক্ষিণ শহরতলির বিষ্ণুপুর থানা এলাকায় ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি মাসে খুন হন বিশ্বনাথ অধিকারী।
সেই মামলায় সুদীপ্তর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও শেষ পর্যন্ত তাঁকে অভিযুক্ত করেনি পুলিশ। নতুন পরিস্থিতিতে সুদীপ্তকে অভিযুক্ত করে সেই মামলাটি ফের আদালতে তোলা হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।
সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে বুধবার পর্যন্ত সল্টলেকের ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় ছ’টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। প্রথম অভিযোগটি দায়ের করা হয় ১৬ এপ্রিল। অভিযোগকারিণী নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষ।
তিনি সারদা গোষ্ঠীর একটি চ্যানেলের প্রাক্তন কর্মী। বেতন না পাওয়ার অভিযোগে তিনি পুলিশের দ্বারস্থ। ওই একই থানায় একই ধরনের অভিযোগ নিয়ে ফের ১৯ এপ্রিল সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ দায়ের করেন সারদা গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরা।
বুধবার সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস ও সারদা রিয়েলটির আমানতকারীরা আরও দু’টি অভিযোগ দায়ের করেন। এই ছ’টি অভিযোগের ভিত্তিতেই আপাতত সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪২০ এবং ৫০৬ ধারায় বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণা এবং ভয় দেখানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০৬ ধারাটি জামিনযোগ্য।
পুলিশ কর্তারা জানাচ্ছেন, সুদীপ্ত এবং তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, সত্য গোপন করে প্রতারণা, জমির দলিল বা অন্য গুরুত্বপূর্ণ নথি নকল করা এবং কারচুপির অভিযোগও আনা হতে পারে।
বেআইনি ভাবে টাকা লেনদেন সংক্রান্ত কিছু অভিযোগও আসতে পারে। নিজেদের আইনে মামলা করতে পারেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সেবি এবং প্রভিডেন্ট ফান্ড কর্তৃপক্ষও।
যেমন যেমন অভিযোগ মিলবে, সেই মতো নতুন অভিযোগ দায়ের করা হবে বলে খবর। সারদার সব ধরনের টাকার ‘আউট ফ্লো’ এবং ‘ইন ফ্লো’ বন্ধ করা হয়েছে।
এই সংস্থার তিন মাসের অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। ধৃতদের সবার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময় : ২২০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৩
সুকুমার সরকার, আউটপুট এডিটর