ঢাকা, শনিবার, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানের ভোট গ্রহণের সময় বাড়ল এক ঘণ্টা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:৫৬, মে ১১, ২০১৩
পাকিস্তানের ভোট গ্রহণের সময় বাড়ল এক ঘণ্টা

ঢাকা: পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন এক ঘণ্টা ভোট গ্রহণের সময় বাড়িয়েছে। বিভিন্ন ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে সহিংসতার তালেবান হামলার হুমকির ঝুঁকি মাথায় নিয়ে পাকিস্তানের জনগণ দেশটির সাধারণ নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন।

ভোটগ্রহণ পাকিস্তান সময় ৬টা পর্যন্ত চলবে।

দেশজুড়ে বিভিন্ন ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন থাকায় সময় বাড়ায় নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র খুরশিদ আলম স্থানীয় সময় ৫টার কয়েক মিনিট  আগে জানান, ভোট গ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর আগে পাকিস্তান পিপল’স পার্টি (পিপিপি) ও তেহরিক-ই-ইনসাফ ভোটগ্রহণের সময় বাড়ানোর আহ্বান জানায় নির্বাচন কমিশনের কাছে।

১৪তম পার্লামেন্টে নির্বাচনে শনিবার পাকিস্তান সময় সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়। পাকিস্তান সময় শনিবার বিকেল ৫টায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার কথা ছিল। দেশজুড়ে ৭০ লাখ ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে এক যোগে ভোট গ্রহণ চলছে।

শনিবার দুপুরের দিকে ৩০ শতাংশ ভোট পড়ে বলে জানায় নির্বাচন কমিশন। কমিশনের প্রত্যাশা, প্রায় ৬০ শতাংশ ভোট পড়ছে।   পাকিস্তান সময় সাড়ে ৩ টার দিকে  নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র খুরশিদ আলম জানান, “ভোট পড়ার বিষয়টি আসলে উৎসাহজনক। আমরা আশা করছি দিনের শেষে ভোট ৬০ শতাংশের কাছাকাছি হবে। ”

২০০৮ সালের নির্বাচনে মাত্র ৪৪ শতাংশ ভোট পড়েছিল।

দেশটির আট কোটি ৬০ লাখ ভোটার ৩৪২ আসন বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ও খাইবার পাখতুনখওয়া, পাঞ্চাব, সিন্ধু ও বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক অ্যাসেম্বেলির নির্বাচনে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রধান দলগুলো হচ্ছে পাকিস্তান পিপল’স পার্টি (পিপিপি), পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন), মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএম), পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টি (এএনপি), মুত্তাহিদ মজলিস-ই-আলাম (এমএমএ) ও জামায়াতে ইসলামি।

ধারণা করা হচ্ছে, ফের ক্ষমতায় আসতে পারে পাকিস্তান পিপল’স পার্টি (পিপিপি)। কেননা সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভোটে ভাগ বসাবেন সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খান। তবে মধ্য-ডানপন্থি পাকিস্তান মুসলিম লিগ-এনের (পিএমএল-এন) নেতা নওয়াজ শরিফ তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। তবে সংস্কার আর দুর্নীতির অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছেন তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ইমরান খান।

এদিকে ভোট কারচুপি আর জালিয়াতির অভিযোগ এনে করাচি ও হায়দ্রাবাদে নির্বাচন বয়কট করেছে জামায়াতে-ইসলামি। তাদের অভিযোগ, মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্টের (এমকিউএম) কর্মীরা ভোটার দেয় হুমকি দিয়েছে।

তাৎক্ষণিক প্রেস কনফারেন্স ডেকে করাচি ও হায়দ্রাবাদের বিভিন্ন আসনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় দলটির প্রধান সৈয়দ মনোয়ার হাসান। তিনি অভিযোগ করেছেন, এমকিউএম সরাসরি সহিংসতা আর জাল ভোট দেওয়ার সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, “এমনকি হায়দ্রাবাদে আমাদে কর্মীদের ওপর অস্ত্র দিয়ে হামলা করা হয়েছে এভং দু’টি আসনের ভোট কেন্দ্রকে বের করে দিয়েছে। ”

এদিকে এমকিউএমের এক নেতা দাবি করেছে, তার দলের পক্ষের ভোট হাইজ্যাক করা হয়েছে।

কুয়েটা, চারসাদ্দা ও চামান শহরের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। করাচিতে সকালের দিকে জোড়া বোমা হামলায় ১৩ জন নিহত ও অর্ধ শতাধিক লোক আহত হয়েছে।

তালেবানদের হামলার হুমকিকে উপেক্ষো করে শনিবার সকাল থেকে পাকিস্তানজুড়ে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ায় পাকিস্তানিরা। কড়া নিরাপত্তা আর সহিংসতা ঘটনার মধ্যে ভোটগ্রহণ শুরু করা হয়। কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকার সেনাবাহিনী, রেঞ্জার, পুলিশ ও জাতীয় স্বেচ্ছাসেবকের পাঁচ লাখের মতো সদস্য বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করেছে। কিন্তু তারপরেও বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

শনিবার সকালে করাচিতে একটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে জোড়া বোমা হামলায় ১১ জন নিহত ও ৩৭ জন আহত হয়েছে। পেশোয়ারেও বোমা হামলার কথা জানিয়েছে একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।

দেশটির ধর্ম নিরপেক্ষ দলগুলোর ওপর হামলার হুমকি দিয়েছে পাকিস্তানি তালেবান। নির্বাচনের আগে সহিংসতায় ১৩০ জনের বেশি লোক নিহত হয়েছে।

ন্যাশনাল ‍অ্যাসেম্বলি অব পাকিস্তানের ৩৪২টি আসনের মধ্যে ৬০টি আসন নারীদের জন্য এবং ১০টি আসন সংখ্যালঘু অমুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত। বাকি ২৭২ জন সদস্যকে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন।

২৭২টি আসনের মধ্যে কেন্দ্রীয় রাজধানীতে (ফেডারেল ক্যাপিটাল) ২টি, কেন্দ্রশাসিত উপজাতি ভূখণ্ডে (ফেডারেল এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবাল এরিয়া-ফাতা) ১২টি, বেলুচিস্তানে ১৪টি, খাইবার পাখতুনখওয়া প্রদেশে ৩৫টি, সিন্ধু প্রদেশে ৬১টি ও পাঞ্চাব প্রদেশে ১৪৮টি আসন।

কোনো দল বা জোটকে এককভাবে ক্ষমতায় যেতে হলে কমপক্ষে  ১৭২টি আসন পেতে হবে। আর ১৭২টি আসন পেতে ব্যর্থ হলে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট গঠিত হবে। পাকিস্তানের ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হচ্ছে কোনো দল বা জোট এককভাবে ১৭২টি আসন পেতে ব্যর্থ হলে দুই দল মিলে যে সরকার গঠিত হয়। ঝুলন্ত পার্লামেন্ট গঠিত হওয়ার সম্ভাবনায় বেশি দেখছেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৬ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৩
সম্পাদনা: শরিফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর-eic@banglanews24.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।