ঢাকা, শনিবার, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

ইতিহাস গড়ার পথে নওয়াজ শরিফ

শরিফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:৩২, মে ১২, ২০১৩
ইতিহাস গড়ার পথে নওয়াজ শরিফ

ঢাকা: পাকিস্তানের রাজনীতিতে একজন শক্তিশালী রাজনীতিবিদ নওয়াজ শরিফ। পাকিস্তানের ১৮তম প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন মিয়া মুহাম্মদ নওয়াজ শরিফ।

আর পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন তিনি। এর আগে দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রেকর্ডটি যৌথভাবে ছিল বেনজির ভুট্টো ও নওয়াজ শরিফের।

পাকিস্তানের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানসহ ৬ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসাব করলে নওয়াজ হবেন পাকিস্তানের ২৪তম প্রধানমন্ত্রী।

শনিবার পাকিস্তানের ১৪তম সাধারণ নির্বাচনে জয় পাওয়ার দ্বারপ্রান্তে নওয়াজ শরিফের দল।

বয়স যখন ৩০ এর কোটায় তখনই জড়ান রাজনীতিতে। পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউল হকের শাসনামলে রাজনীতিতে নিজের খ্যাতি ছড়ান নওয়াজ শরিফ।

জুলফিকার আলির ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন সরকার জাতীয়করণ নীতি হাতে নিলে বেশ ক্ষতির মুখে পড়ে শরিফের পরিবার। তাদের ইস্পাতের ব্যবসা চলে যায় সরকারের হাতে। ঠিক সেই সময়ে নিজে রাজনীতিতে জড়ান তিনি।

১৯৭৬ সালে নিজেকে নিজেই উৎসাহ দেন রাজনীতি করার।   রক্ষণশীল পাকিস্তান মুসলিম লিগে যোগ দিয়েই প্রথমে মনোনিবেশ করেন পরিবারের ব্যবসা উদ্ধারের। ১৯৮০ সালে পাঞ্জাবের অর্থমন্ত্রী হিসে নিয়োগ পান তিনি। ১৯৮১ সালে জেনারেল জিয়াউল হকের নিয়ন্ত্রণাধীন পাঞ্চাব উপদেষ্টা পরিষদে যোগ দেন। জিয়াউল হকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। এরই সুবাদে ১৯৮৫ সালে জেনারেল জিয়া তাকে পাঞ্চাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন।

জেনারেল জিয়ার মৃত্যুর পর পাকিস্তানে সামরিক শাসন বিরতিতে যায়। ১৯৮৮ সালে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোর মেয়ে বেনজির ভুট্টো। নির্বাচনে হেরে পাকিস্তান মুসলিম লিগ থেকে বিরোধী নেতার ভূমিকা পালন করেন তিনি।

১৯৯০ সালে গোলাম ইশহাক খান বেনজিরকে সরিয়ে দিয়ে নওয়াজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেই ভুট্টো পরিবারের প্রতি প্রতিশোধপ্রবণ হয়ে পাকিস্তানে বেসরকারিকরণ ও অর্থনৈতিক উদারকরণ নীতি বাস্তবায়ন শুরু করেন। কিন্তু সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় বেনজিরের মতো তাকেও সরিয়ে দিতে চেষ্টা চালান প্রেসিডেন্ট ইসহাক। কিন্তু নওয়াজ শরিফ সুপ্রিম কোর্টে প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেন। অবশেষে ইসহাক ও শরিফ দুই জনেই সেনাপ্রধান আবুল ওয়াহেদ কাকার অনুরোধে পদত্যাগ করেন।

১৯৯৭ সালের নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে শরিফের দল পিএমএল-এন। এসময় পাকিস্তানকে পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরেন তিনি। তারই তত্ত্বাবধানে ও গ্রহীতি নীতির প্রেক্ষিতে পাকিস্তান পরমাণু কর্মসূচি শুরু করে। কিন্তু দুই বছরের মাথায় তাকে রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।

সামিরক আদালতে সন্ত্রাস, অপহরণের দায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর ২০০০ সালে তাকে সৌদি আরবে নির্বাসনে পাঠায় জেনারেল পারভেজের সামরিক সরকার।

২০০৭ সালে পাকিস্তানে ফিরে আসেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তার পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) দ্বিতীয় হয়।

নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, কর ফাঁকি দেওয়া ও অর্থপাচারের অভিযোগ থাকলেও এর কোনোটিই আদালতে প্রমাণিত হয়নি।

১৯৪৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর পাকিস্তানের পাঞ্চাব প্রদেশের একটি বিত্তশালী পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন নওয়াজ শরিফ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৩
সম্পাদনা: শরিফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর, eic@banglanews24.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।