ঢাকা: পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে জয়ের পথে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)। হয় পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ নয়ত বিদায়ী ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান পিপল’স পার্টির (পিপিপি) অবস্থান হবে দ্বিতীয়।
পিএমএল-এন জয় পেলেও এককভাবে সংখ্যা সরকার গঠন করতে পারবে না। পাকিস্তানের ৩৪২ আসন বিশিষ্ট ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি অব পাকিস্তানের ২৭২টি আসনে সরাসরি নির্বাচন হয়। বাকি ৭০টি আসনের মধ্যে ১০টি সংখ্যালঘু অমুসলিম এবং ৬০টি নারীদের জন্য সংরক্ষিত।
কোনো দল বা জোটকে এককভাবে সরকার গঠন করতে হলে সরাসরি ভোট হওয়া ২৭২টি আসনের মধ্যে ১৭২টি আসন পেতে হবে।
পার্লামেন্টের সরাসরি নির্বাচনের ২৭২টি আসনের ২৫১ টি আসনের প্রকাশিত ফলাফলে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ ও পাকিস্তান পিপল’স পার্টির (পিপিপি) চেয়ে তিনগুণ আসন বেশি পেয়েছে পিএমএল-এন।
পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম ডন.কমে ২৫১টি আসনের ফল প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময় সাড়ে ৯টার দিকে প্রকাশিত এ ফলাফলে দেখা গেছে, ১২৮টি আসনে জয় পেয়েছে পিএমএল-এন। আর ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পেয়েছে ৩০টি, বিদায়ী ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান পিপল’স পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে ৩৩টি আসন, মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএম) পেয়েছে ১৫টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ২৫টি আসনে জয় পেয়েছে, অন্যান্য দলগুলো পেয়েছে দুটি, একটি করে আসন।
কোনো দল বা জোট ১৭২টি আসন পেতে ব্যর্থ হলে একাধিক দল মিলে সরকার গঠন করতে হবে। পাকিস্তানে এ ধরনের জোট সরকার ঝুলন্ত পার্লামেন্ট বা সরকার নামে পরিচিত।
নিজের দল বিজয়ী হলেও এককভাবে সরকার গঠনে যে আসন লাগে তা পাওয়া যাবে না-এমনটি উপলব্ধি করেই ইতোমধ্যে বৈঠক ডেকেছেন নওয়াজ শরিফ। ধারনা করা হচ্ছে, এ বৈঠকে জোট সরকার গঠন নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করবেন নওয়াজ শরিফ।
নির্বাচনের আগেই নির্বাচন বিশ্লেষকরা ধারণা করেছিলেন, ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হবে পাকিস্তানে। সেটা হওয়ার পথে। তবে নওয়াজ শরিফ কোন দলকে বেছে নেবেন তা এখনও নিশ্চিত নয়।
পাকিস্তান পিপল’স পার্টির সঙ্গে নওয়াজের রাজনীতির মাঠে প্রবেশ করা থেকেই বিরোধ। আর ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান খানের দলের এক নেতা জানিয়েছেন, তারা বিরোধী দলের ভূমিকা পার্লামেন্টে বেশ ভালোভাবেই পালন করতে পারবে।
শনিবার পাকিস্তান ইতিহাসের পাতায় নাম লেখায়। ৬৬ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দেশটিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই একটি নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে আরেকটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা নিতে যাচ্ছে।
শনিবার দেশের ১৪তম সাধারণ নির্বাচনে পাকিস্তানের আট কোটি ৬০ লাখের বেশি ভোটারের ৬০ শতাংশ ভোট দিয়েছে বলে রোববার জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার
বিচ্ছিন্ন সহিংসতার মধ্যে শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলে। তালেবানের হামলার হুমকি উপেক্ষা করে পাকিস্তানিরা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে সারিবদ্ধ হয়ে ভোট দেন।
তবে করাচিতে সুষ্ঠ ও স্বচ্ছ নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন। করাচিতে জামায়াতে ইসলামি, সুন্নি তেহরিক, জামিয়াত উলামা-ই-পাকিস্তান, সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিল ও মুহাজির কওমি মুভমেন্ট নির্বাচন বর্জন করেছে।
অনিয়ম আর জালিয়াতির অভিযোগ এনে দলগুলো নির্বাচন বর্জন করে। মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্টের (এমকিউএম) বিরুদ্ধে সহিংসতা সৃষ্টি আর ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছে জামায়াতে ইসলামি। পাকিস্তান জুড়ে স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হলেও করাচিতে ভোট গ্রহণ চলে রাত ৮ টা পর্যন্ত।
নির্বাচন বর্জনকারী পাঁচটি দলের সঙ্গে পিএমএল-এন, পিটিআই, পিপিপির মতো রাজনীতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সমালোচনা করেছে। দলগুলোর দাবি, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠ নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন।
দেশের ভেতর সমালোচনার মুখে পড়লেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পাকিস্তানের নির্বাচনের প্রশংসা করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫১ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৩
সম্পাদনা: শরিফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর, eic@banglanews24.com