ঢাকা: জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন আসন্ন নির্বাচনকে নিয়ে উত্তেজনা প্রশমিত করার জন্য বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
নিউইয়র্ক সময় সোমবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানিয়েছেন বলে তার মুখপাত্র মার্টিন নেসিরকি জানান।
মার্টিন নেসিরকি জানান, বৈঠকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নিয়ে মুন তার ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
নেসিরকি জানান, আসন্ন নির্বাচনকালে সরকার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য ও উত্তেজনা কমানোর জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের গঠনমূলক আলোচনার ওপর গুরুত্ব দেন মুন।
বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনি জাতিসংঘ মহাসচিবকে আশ্বস্ত করেন, নির্বাচন নিয়ে সরকার আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি আশাব্যক্ত করেন, তাড়াতাড়ি না হলেও সরকারের প্রস্তাবে সাড়া দেবে বিরোধী দলগুলো।
শান্তি রক্ষা মিশনে সহায়তা অব্যাহত রাখায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন বান কি মুন। বর্তমানে মালিসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন শান্তি মিশনে অব্যাহতভাবে সৈন্য সরবরাহ করার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
মুন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা স্বীকার করে জানান, বিষয়টির ইতি টানা দরকার। মুন-দীপু মনির বৈঠকে সাভার ট্র্যাজিডি নিয়েও আলোচনা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন কোন ধরনের সরকারের অধীনে হবে তা নিয়ে দেশের দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে।
বিএনপি ও তার নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের দাবি, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া অন্য কোনো সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তারা সে নির্বাচনে অংশ নেবে না।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার সংবিধানে সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। আওয়ামী লীগ যাচ্ছে, মেয়াদ শেষ হলে বর্তমান সরকারই অন্তবর্তী সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। আর এ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে।
বিএনপির অভিযোগ, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তা স্বচ্ছ হবে না।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলকে আলোচনার প্রস্তাব দেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, আলোচনা হতে হবে নিশর্ত। কিন্তু বিএনপি জানায়, তারা আলোচনায় যাবে যদি তত্ত্বাধায়ক ইস্যু আলোচনার প্রধান ইস্যু হয়।
এমন রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের রায় নিয়ে শুরু হয় সহিংসতা। দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা। এ সহিংসতায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ অনেক নিহত হয়।
এরই মধ্যে সরকারের কাছে ১৩ দফা দাবি পেশ করে ইসলামপন্থি সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। গত ৫ মে এ সংগঠনটি রাজধানী মতিঝিলে অবরোধ সমাবেশ পালন করে। ওই দিন রাজধানীতে হেফাজতিদের আড়ালে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা তাণ্ডব চালায়। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে হেফাজতের কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে জাতিসংঘ মহাসচিব তার সহকারী অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো বাংলাদেশে পাঠান। চার দিনের সফরে শুক্রবার ঢাকা আসেন অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো।
সফরকালে দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে আগামী নির্বাচন নিয়ে তাদের মতানৈক্য দূর করতে এবং দ্রুত সংলাপ শুরু করার তাগিদ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসি ও বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে বান কি মুনের চিঠি পৌঁছে দেন অস্কার ফার্নান্দেজ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৩
সম্পাদনা: শরিফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর, eic@banglanews24.com