ঢাকা, শনিবার, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

‘সম্পাদকরা না বুঝে বিবৃতি দিয়েছেন’

ষ্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:৪৮, মে ২০, ২০১৩
‘সম্পাদকরা না বুঝে বিবৃতি দিয়েছেন’

ঢাকা: দৈনিক আমার দেশ ‘হ্যাকিং’ বা চুরি করে প্রকাশ এবং মিথ্যা-উস্কানিমূলক সংবাদ ও ছবি ছেপে দেশে নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে, উন্মাদনা সৃষ্টি করেছে।

এসব ফৌজদারি ও তথ্য-প্রযুক্তি আইনবিরোধী অপরাধ। তাই সুনির্দিষ্ট অপরাধে দায়ের মামলার ভিত্তিতেই দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সোমবার তথ্য অধিদফতরের সম্মেলনকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি।

আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি চেয়ে ১৬ জন জাতীয় দৈনিকের সম্পাদককের বিবৃতির প্রেক্ষিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সম্পাদকদের বিবৃতি প্রসঙ্গে ইনু বলেন, “আমার বিশ্বাস মাহমুদুর রহমানের মুক্তি এবং আমার দেশ পত্রিকার ছাপাখানা খুলে দেওয়ার দাবি যারা জানিয়েছেন তারা তথ্য-প্রযুক্তি আইন খতিয়ে দেখেননি বলেই বিভ্রন্তির সৃষ্টি হয়েছে। তারা না বুঝেই ওই বিবৃতি দিয়েছেন। ”

তথ্যমন্ত্রী বলেন, “সংবাদপত্রের যেমন স্বাধীনতা রয়েছে, তেমন দায়িত্বশীলতাও রয়েছে। কোনো সংবাদপত্র ইচ্ছামত সংবাদ প্রকাশ করতে পারে না। অথচ মাহমুদুর রহমান সে বিষয়ে গুরুত্ব দেন নি। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক সংবাদ এবং প্রযুক্তিগত কারসাজি করা ছবি প্রকাশ করে দেশে একটি অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি করতে চেষ্টা করছিলেন। ”

আমার দেশ পত্রিকার ছাপাখানা বন্ধ থাকলেও পত্রিকাটি ছাপাতে আইনগত কোনো বাধা নেই এবং বৈধ অনুমতি নিয়ে অন্য ছাপাখানায় তা ছাপাতে পারে বলে উল্লেখ করে ইনু বলেন, “সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় বদ্ধপরিকর। সরকার গত ৪ বছরে সরকারবিরোধী মতামত প্রকাশ, রাজনৈতিক কোনো বক্তব্য প্রচার বা প্রকাশ করার জন্য কোনো সংবাদ মাধ্যম বন্ধ বা এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করেনি। আ‍মার দেশ পত্রিকার ‍ছাপাখানা বন্ধের সঙ্গে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্বের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, সরকার পত্রিকা প্রকাশের অনুমতি বাতিল করেনি। বৈধ অনুমতি নিয়ে অন্য যে কোনো ছাপাখানা থেকে পত্রিকা প্রকাশ করা যাবে। ”

আমার দেশ বন্ধ প্রসঙ্গে ইনু বলেন, “তথ্য-প্রযুক্তি আইন অনুসারে পত্রিকাটির ছাপাখানায় তল্লাশি চালানো হয় এবং সেখানে অপরাধ সংঘটিত করার যন্ত্রপাতি ও হ্যাকিংয়ের প্রমাণাদি জব্দ করা হয়েছে এবং ছাপাখানায় তালা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিচার কার্যের স্বার্থে যতোক্ষণ পর্যন্ত তদন্ত শেষ না হবে, ততোক্ষণ পর্যন্ত পত্রিকার ছাপাখানা বন্ধ থাকবে। ”

মাহমুদুর রহামান তার মাকে নিয়েও জালিয়াতি করেছেন উল্লেখ করে ইনু বলেন, “অন্য ছাপাখানা থেকে সংবাদপত্র প্রকাশের যে নিয়ম রয়েছে দৈনিক আমার দেশ তা পালন করেনি। যে কারণে দৈনিক সংগ্রামের ছাপাখানা আল-ফালাহর বিরুদ্ধেও আমাদের প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। মাহমুদুর রহমানের মাকে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান দেখিয়ে সত্যি গোপন করে সংগ্রাম পত্রিকার ছাপাখানা থেকে তারা পত্রিকা প্রকাশ করেছে। অর্থাৎ মাহমুদুর রহমান তার মাকে নিয়েও জালিয়াতি করেছেন। ”

তথ্য-প্রযুক্তি আইন অনুসারে সরকারের অনুমতি নিয়ে অন্য কোনো ছাপাখানা থেকে পত্রিকা প্রকাশে কোনো বাধা নেই বলেও উল্লেখ করেন তথ্যমন্ত্রী।

বিবৃতি দেওয়া সম্পাদকদের উদ্দেশ্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “সংবাদপত্রের নিয়ম-নীতি ভেঙে বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রকাশ করে তিনি দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সাংবাদিকতার ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত অধ্যায় রচনা করেছেন। ”

সংবাদ সম্মেলনে ইনু আরও বলেন, “আমার দেশ পত্রিকার ছাপা খানায় হ্যাকিং এবং অপরাধ সংঘটিত করার যন্ত্রপাতি পাওয়া গেছে। ” সেসব যন্ত্রপাতি জব্দ করা এবং বিচারের স্বার্থে ছাপাখানা বন্ধ করে দেওয়ার অধিকার সরকারের আছে কিনা? এবং মাহমুদুর রহমান শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে কি না? বলেও সম্পাদকদের কাছে প্রশ্ন রাখেন তিনি।

উল্লেখ্য, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকের কথিত স্কাইপ সংলাপ প্রকাশ এবং রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গত ১১ এপ্রিল গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই দিনই পুলিশ পত্রিকাটির ছাপাখানায় তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরে তাকে কাবা শরীফের গিলাফ পরিবর্তনের ছবি বিকৃত ও মিথ্যা ক্যাপশানে ছাপার অভিযোগে দায়ের করা মামলায়ও গ্রেফতার দেখানো হয়।

জাতীয় দৈনিক অনলাইন দৈনিকের ১৬ জন সম্পাদক শনিবার এক যুক্ত বিবৃতিতে ছাপাখানা খুলে দিয়ে দৈনিক আমার দেশ প্রকাশ, দিগন্ত ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচার চালু এবং সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করেন।

বিবৃতিতে মিডিয়ার ওপর সরকারের চলমান পদক্ষেপকে গণমাধ্যম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আশঙ্কাজনক হুমকি হিসেবে অভিহিত করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা। একই সঙ্গে মাহমুদুর রহমানের মা ও সংগ্রাম সম্পাদকের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।       

আমার দেশ পত্রিকার নগর সম্পাদক এম আবদুল্লাহ এর পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বিবৃতিদাতা সম্পাদকরা হলেন- ইন্ডিপেন্ডেন্ট সম্পাদক মাহবুবুল আলম, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, নিউজ টুডে সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, ইনকিলাব সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দীন, নয়াদিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন, নিউ এইজ সম্পাদক নুরুল কবীর, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন, নিউ নেশন সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, দৈনিক সংবাদ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুনীরুজ্জামান, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম ও যুগান্তরের নির্বাহী সম্পাদক সাইফুল আলম।

বিবৃতিতে সম্পাদকরা বলেন, “দৈনিক আমার দেশ-এর প্রেসে তালা দিয়ে পত্রিকার ছাপা বন্ধ করা, পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের পর নির্যাতনের অভিযোগ, বিকল্প ব্যবস্থায় ছাপতে না দিয়ে আমার দেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাহমুদা বেগম ও দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দায়ের এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিগন্ত ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ”

সম্পাদকরা বলেন, “আমরা মনে করি, সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকারের ওপর আশঙ্কাজনক হুমকি। এ জাতীয় ঘটনা গণতন্ত্রের ভিতকে যে দুর্বল করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ”
    
বাংলাদেশ সময়: ১২২৩ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৩
এমআইএইচ/ এটি/ সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর, জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর- eic@banglanews24.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।