নয়াদিল্লি: চীন ও ভারতের মধ্যে যখন সীমান্ত নিয়ে চরম উদ্বেগ বাড়ছে- ঠিক তখনই কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ভারত সফরে এলেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং। অর্থাৎ ভারতকে আস্থায় রাখতে তার এ সফর।
নয়াদিল্লি নেমেই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন লি কেকিয়াং। রোববার চারটে নাগাদ তিন দিনের ভারত সফরে দিল্লিতে আসেন। পররাষ্ট্র রাষ্ট্রমন্ত্রী ই আহমেদ বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সরকারি বাংলোর নিকটেই দিল্লি মেট্রো রেলের রেসকোর্স রোড স্টেশন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চীনা প্রধানমন্ত্রীর মনমোহনের ডিনার বৈঠক হয়।
অপরদিকে আগে থেকেই কঠোর নিরাপত্তার সত্ত্বেও সোমবার ঠেকানো গেল না তিব্বতীদের বিক্ষোভ। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের ভারত সফরের বিরোধিতায় দিল্লিতে বিক্ষোভ দেখায় তিব্বতীরা।
সোমবার সকাল থেকেই দিল্লির সেন্ট মার্টিন রোড ও এবং মজুন কা টিলা এলাকায় জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন ভারতের বসবাসকারী তিব্বতীরা।
এদিকে সোমবার থেকে শুরু হল দু’দেশের প্রতিনিধি স্তরে আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় আলোচনা। যার শেষে যৌথ বিবৃতি দেওয়া হবে। প্রাক্তন চীনা প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাওয়ের ভারত সফরের সময়ে যৌথ বিবৃতিতে তিব্বত ও তাইওয়ানের মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলি বাদ দেওয়া হয়েছিল।
কূটনীতিকদের মতে, এবার যৌথ বিবৃতিতে ওই বিষয়গুলির উল্লেখ থাকে কি না তা দেখার বিষয়। পাশাপাশি লাদাখের সাম্প্রতিক অনুপ্রবেশের বিষয়টিও রাখার চেষ্টা করছে নয়াদিল্লি।
সূত্রের খবর, বৈঠকে সীমান্ত সমস্যা, বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা প্রধান্য পাচ্ছে। ভারতকে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী বলে আখ্যা দিয়েছেন লি কেকিয়াং।
ভারত সীমান্তে অনুপ্রবেশ নিয়ে জোর বিতর্কের প্রেক্ষাপটে মার্চেই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর লি সরাসরি ভারত সফরে এলেন। কূটনৈতিক মহলের মতে, তাই সীমান্ত সমঝোতায় বিশেষ জো দেবে দিল্লি। বৈঠকে দু’দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা হবে।
রাজধানীর ধৌলা কুঁয়া এলাকায় সর্দার প্যাটেল মার্গে অভিজাত তাজ প্যালেস হোটেলে উঠেছেন চীনা প্রধানমন্ত্রী। সেজন্য তাঁর আসা-যাওয়ার সময় দিল্লি পুলিশ দুপুর থেকেই বারবার ওই রাস্তা সাধারণ যানবাহনের জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে রাখে।
সোমবার সকালে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত দু’ঘন্টার জন্য রেসকোর্স রোড ছাড়াও উদ্যোগ ভবন, সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট এবং খান মার্কেট এ চারটি মেট্রো রেল স্টেশন বন্ধ করে রাখা হয়।
কারণ, দিল্লি পুলিশের আশঙ্কা- ভারতে নির্বাসনে থাকা হাজার হাজার তিব্বতী চীনা দূতাবাসের সামনে এসে বা চীনা প্রধানমন্ত্রীর যাতায়াতের রুটে ঢুকে পড়ে বিক্ষোভ দেখাতে পারে। তাই মেট্রো স্টেশনগুলিকে বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
যাতে উত্তর দিল্লির মজনু কা টিলা মহল্লায় বসবাসকারী তিব্বতীরা দিল্লির দরবারের এই খাস এলাকায় এসে লি কেকিয়াংকে বিক্ষোভ না দেখাতে পারে।
কয়েক বছর আগে চীনের প্রেসিডেন্ট ও কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন হু জিনতাও যখন ভারত সফরে এসেছিলেন, তখনও তিব্বতী বিক্ষোভকারীরা চাণক্যপুরী এলাকায় চীনা দূতাবাসে পৌঁছে গিয়েছিল।
এবার লি কেকিয়াং-এর সফরকালে তার পুনরাবৃত্তি রুখতে দিল্লি পুলিশ আগাম যাবতীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। শনিবার রাত থেকেই উত্তর দিল্লির মজনু কা টিলা এলাকায় তিব্বতি মহল্লাগুলিতে দিল্লি পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও পাহারা দ্বিগুণ জোরদার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময় : ১৫৩৫ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৩
এসপি, ভিএস, এসবি/ সম্পাদনা: এসএস