ঢাকা, শনিবার, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

মমতার রাইটার্স দখলের দিন

ভাস্কর সরদার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট কলকাতা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:০৩, মে ২০, ২০১৩
মমতার রাইটার্স দখলের দিন

কলকাতা : পরিবর্তনের দুই বছর । ২০১১ সালের ১৩  মে রাজভবন থকে মিছিল করে মহাকরণে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

রাজপথে মমতার সাথে  পায়ে পা মিলিয়েছিলেন লাখো মানুষ।

নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাঁধ ভেঙ্গে মানুষের ভিড়ে সেদিন মিশে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ৩৪ বছরের বাম জামানার অবসান ঘটিয়ে এই ২০ মে রাইটার্স দখল করেছিল মা-মাটি-মানুষের নেত্রী  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস।

আজ দুই বছর পূর্তি উৎসব পালন করছে তৃনমূল কংগ্রেস সরকার। এই দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে কলকাতাসহ গোটা রাজ্য জুড়ে লাগানো হয়েছে বিরাট বিরাট হোল্ডিং। এতে সরকারের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরা হচ্ছে।

প্রতিটি জেলায় পালন হচ্ছে সরকারের দুই বছর পূর্তি উৎসব। এই উৎসব উপলক্ষে সোমবার  কলকাতার সাইন্স সিটি অডিটোরিয়ামে এক গুণীজন সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে ছিল বঙ্গ ভূষণ ও বঙ্গ বিভূষণ প্রদান ও বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

 
ইতোমধ্যেই সরকারের সাফল্য নিয়ে পত্রিকা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু বই নয় ফেসবুকেও তিনি জানিয়েছেন তার সরকার এর  কাজের খতিয়ান। তিনি বোরো ধান চাষে প্রথম হওয়ায় অভিনন্দন জানিয়েছেন কৃষকদের।   তিনি জানিয়েছেন শিল্পে বিনিয়োগ হচ্ছে প্রচুর।

আগামীদিনে আরও বিনিয়োগ পশ্চিমবঙ্গে আসবে বলে তিনি জানান। মুখ্যমন্ত্রী ফেসবুকে জানিয়েছেন দুই বছরেই একটি সরকারের সাফল্য ব্যর্থতা বিচার করা যায় না।   তবে দেড় বছরের মাথায় দাঁড়িয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন সরকার এর ৯৯% কাজ শেষ।

তিনি বলেছেন বিরাট ঋণের যে বোঝা পশ্চিম বঙ্গের কাঁধে আছে  তা নিয়ে চলতে হচ্ছে সরকারকে। শিল্প আনার ব্যাপার জোরদার করতে তিনি নিজেই সচেষ্ট হয়েছেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়  বিরোধীদের মুখে কুলুপ এঁটে থাকতে বলেছেন। কিন্তু তারা সে কথা শুনছে না। উন্নয়নের এই দলিলকে একেবারেই মানতে ছাইছে না তৃণমূল সরকারের এক সময়ের জোট সঙ্গী কংগ্রেস।

তারা সরাসরি বলতে শুরু করেছে এই সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। কংগ্রেস দাবি করছে রাজ্য সরকার ভারত সরকারের প্রকল্পগুলি নিজেদের বলে চালাচ্ছেন। কেন্দ্রের বিভিন্ন খাতের টাকা ফেরত যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে কংগ্রেস। সরকার এর দায়িত্ব নেবার কিছুদিন পর থেকেই কেন্দ্রের কাছে বিশেষ সাহায্য চেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কিন্তু কেন্দ্র যা দিয়েছে তা মোটেই যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন মমতা। তাই তিনি তোপ দেগেছেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। কেন্দ্রের বঞ্চনার কথা উড়িয়ে দিয়ে কংগ্রেস দাবী করেছে রাজ্যে আইন শৃঙ্খলার  চূড়ান্ত অবনতি হয়েছে। তাদের কর্মীদের উপর আক্রমণ এর অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস।

তারা অভিযোগ করছে রাজ্যের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়েছে। কংগ্রেস আরও বলেছে এখনই সর্তক না হলে আগামী দিনে আরও অনেক পিছিয়ে পড়বে পশ্চিমবঙ্গ। সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে একটি বইও প্রকাশ করেছে কংগ্রেস।


প্রধান বিরোধী দল সি পি আই (এম) রাজ্য সরকার এর কড়া সমালোচনা করে বক্তব্য রেখেছে। তারা আইন শৃঙ্খলার প্রসঙ্গে তুলে এনেছে পার্ক স্ট্রিট এর মহিলা ধর্ষণের ঘটনার উদাহরণ। যার মূল অভিযুক্তরা আজও আধরা।

সি পি আই (এম) তুলে এনেছে পুলিশই হেফাজতে ছাত্রনেতা সুদীপ্ত গুপ্ত মৃত্যুর কথা। তারা অভিযোগ করছে সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে তাদের কয়েকশ পার্টি অফিস ভাঙচুর করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।

সি পি আই ( এম) জানিয়েছে আজও গ্রামে গ্রামে তাদের কর্মীদের ঘরে ফিরতে না পারার কথা। অর্থনৈতিক প্রতারণা নিয়ে তারা বিঁধেছে মমতাকে।

নির্বাচিত হবার পর  শেখ হাসিনা শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছিলেন "বোন` মমতাকে। কিন্তু তিস্তা চুক্তিতে রাজি হননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন কংগ্রেস তার জোট সঙ্গী।

তবুও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে  যাবেন বলেও তিনি শেষ মুহূর্তে সরে আসেন। অনেকে মনে করছেন তিনি এখন বি জে পি’র কাছাকাছি আসছেন। এই বি জে পি’ই লোকসভায় বেশ কিছুটা কড়া অবস্থান নিয়েছে ছিট মহল নিয়ে। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই নিয়ে এখনও কোন পরিষ্কার অবস্থান ঘোষণা করেননি।

একদিকে বিরোধী দলের সমালোচনা অন্যদিকে সরকারের সাফল্যের প্রচার- এই দুই এর মাঝে বেশ কিছুটা বিড়ম্বনায় পশ্চিমবঙ্গের আমজনতা। যে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম নিয়ে তোলপাড়  করে ক্ষমতায় এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ সেই সিঙ্গুরে কংকালের মত দাঁড়িয়ে আছে টাটা কোম্পানির প্রস্তাবিত কারখানা।

জমি ফেরৎ পাননি অনিচ্ছুক কৃষকরা। তারা হতাশ।   নন্দীগ্রাম সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। অন্যদিকে শহর কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে ভাঙচুর থকে সারদা কোম্পানির টাকা তছরুপ নিয়ে বার বার রাজপথে নেমেছেন সাধারণ মানুষ।    

শিক্ষা ক্ষেত্রে কখনও জলের জগ ছুঁড়ে মহিলা অধ্যাপিকাকে মারার অভিযোগ এসেছে তৃনমূলের সাবেক বিধান সভার সদস্য এর বিরুদ্ধে। কখনও নদীয়ার মাজদিয়া কলেজে অধ্যক্ষকে নিগ্রহের অভিযোগ এসেছে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে।

তবে এগুলো একেবারেই সামান্য ঘটনা- বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।   কলেজ নির্বাচন সামলাতে গিয়ে খুন হয়েছেন পুলিশ কর্মী তাপস দত্ত। তবে রাস্তায় নীল-সাদা রঙ পেয়েছে কলকাতাবাসী।

এই ঋণ এর বোঝা নিয়েও শহরের ফুটপাত থকে আলিপুর জেলসহ প্রায় সমস্ত সরকারী বাড়িতে নীল সাদা রঙ করছে সরকার।

সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। যদিও তাই নিয়েও এখন চলছে সরকার-নির্বাচন কমিশন তরজা। তবে রাজনৈতিক মহল মনে করছে সেই ভোটেই কিছুটা আঁচ পাওয়া যেতে পারে মানুষের মনের।

তার পরেই এই বছরেই ভারতের লোকসভা নির্বাচন সেখানেও নিজের মতামত জানতে পারবেন পশ্চিমবঙ্গের জনগণ। তখনি  পাওয়া যাবে সরকারের কাজের সত্যিকারের মার্কসিট।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৩  
ভিএস/ সম্পাদনা: এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।