ঢাকা, শনিবার, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

নারী পাচার রোধে বাঙালি নারীর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৫১, মে ৩০, ২০১৩

কলকাতা: নারী পাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং সোচ্চার আন্দোলন গড়ে তোলার স্বীকৃতি হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটর লিডারশিপ প্রোগ্রাম (আইভিএলপি) পুরস্কার পাচ্ছেন মনিকা সরকার।

৩২ বছরের মনিকা কলকাতা থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কাটিয়া হাটের বাসিন্দা।

পেশায় হস্তশিল্পী। কারিগর মনিকা নারী পাচারের বিরুদ্ধে পুরো জেলাজুড়ে জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। এ জন্যই আইভিএলপি পুরস্কার দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে সমাজসেবামূলক কাজে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার এ পুরস্কার দিয়ে থাকেন। এ পুরস্কার নিতে আগামী মাসেই যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিচ্ছেন মনিকা।

প্রসঙ্গত, ২৩ বছর বয়সে নিজেই প্রায় পাচার হয়েই যাচ্ছিলেন মনিকা। স্বামীর কথা মতো যৌতুকের টাকা না দিতে পারায় তাকে বিক্রি করে দেওয়ার ফন্দি করে মনিকার স্বামী। সেই সময় থেকেই শুরু হয় মনিকার লড়াই।

মনিকা পথে নামেন শুধু তার নিজের জন্য নয়। আরও অনেক মেয়েদের জন্য যারা বিভিন্নভাবে প্রতিদিন পাচার হয়ে যাচ্ছে দেশ-বিদেশের বড় বড় শহরের বাজারে।

মনিকার লড়াই কাটিয়া হাটের মেয়েদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলেছে। এ কারণেই এ অঞ্চলের নারী পাচার আজ প্রায় রুদ্ধ। তবে মনিকার লড়াই থেমে নেই। রোজ ভোরে মনিকা সঙ্গে কজন নারীদের নিয়ে তার কাটিয়া হাট গ্রামের কার্যালয় থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে সেইস্তা নগর গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে নারী পাচার সম্পর্কে সচেতন করে চলেছেন। গত দশ বছরে এ গ্রাম থেকে শতাধিক নারী ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে পাচার হয়ে গেছে।

মনিকা বলেন, আমারা মেয়েদের এভাবে বোঝাই, যখনই কোনো পুরুষ তোমাদের অন্য শহরে কোনো কাজের সন্ধান দেবে বা বিয়ের প্রস্তাব করবে তখনই সতর্ক হবে। ৬ ভাগ মহিলা এ সব গ্রাম থেকে কাজের খোঁজে শহরে যায়। কিন্তু আর ফিরে আসে না।

যদিও কাজটা কঠিন, তবুও কিছুটা সচেতন হয়েছেন এলাকার নারী সমাজ। আগে বছরে ১০-১২ জন নারী পাচার হয়ে যেত। এখন সংখ্যাটা কমে ২-৩ জনে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে পুরস্কারের খবর শুনে বেশ আনন্দিত মনিকা। আবেগ মাখা গলায় দু সন্তানের জননী মনিকা বললেন, আমেরিকা যাওয়া আমার কাছে স্বপ্নের মতো। আমি আমার অভিজ্ঞতার কথা পুরো বিশ্বকে জানাতে চাই।

যাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয় সমাজ তাদের সহজে মেনে নিতে চায় না। এ মনোভাবের অবসান হওয়া দরকার। এ কাজে মনিকা কলকাতার একটি এনজিও এবং গ্রামের নারীদের সহায়তা পেয়েছেন। এদের নিয়েই একদিন নারী পাচার পুরোপুরি বন্ধ করতে পারবেন। এমন বিশ্বাসেই কথাগুলো বললেন মনিকা সরকার।

বাংলাদেশ সময় ১৮০৯ ঘণ্টা, মে ৩০ ২০১৩
ভাস্কর/সম্পাদনা: আশুরা জামান, নিউজরুম এডিটর/ সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।