ঢাকা: চার্লস ডিকেন্সের অলিভার টুইস্টের কথা কে না জানে। শত বছর আগের সেই গল্পই যেন বাস্তব হয়ে ফিরে এসেছে ভারতে।
সন্তান তার মাকে জেল থেকে জামিনে বের করে আনতে গার্মেন্টস কারখানায় দিনরাত সেলাইয়ের কাজ করে গেছে। অবিশ্রান্ত পরিশ্রমের পর করে চলতি মাস পর্যন্ত ভারতের কানাইয়া কুমারি (১৯) তার মা বিজয়া কুমারির (৪৮) জামিনের জন্য আয় করেছে পাঁচ হাজার রুপি।
প্রতিবেশি হত্যার সঙ্গে যোগসাজোশ থাকার কারণে ১৯৯৩ সালে ভারতের আলিগড় প্রদেশে বিজয়া কুমারি গ্রেফতার হন। তার গর্ভে তখন পাঁচ মাস বয়সী কানাইয়া। বিজয়াকে কারাগারে পাঠানো হলে তিনি হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
১৯৯৪ সালে পাঁচ হাজার রুপি অনাদায়ে আদালত তার জামিন মুলতবি ঘোষণা করে। বিজয়ার স্বামী অর্থ পরিশোধে অস্বীকৃতি জানান।
সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিজয়া বলেন, “আমার পরিবার থেকে কিংবা আমার শ্বশুড়বাড়ি থেকে কেউ আমার সাহায্যের জন্য আসেনি। ”
মা ও ছেলেকে উত্তর প্রদেশের লখনৌতে নারী নিকেতন কারাগারে রাখা হয়। কানাইয়ার ৬ বছর বয়সে তাকে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। সংশোধনাগার থেকে গত বছর বের হয়েই কানাইয়া চাকরি খুঁজতে থাকে মায়ের জামিনের টাকা পরিশোধের জন্য।
কানাইয়া সংবাদ মাধ্যমকে বলে, “আমি মাকে ছাড়া অনেক কষ্টে ছিলাম, মা ছাড়া আমার আর কেউ নেই। ”
অবশেষে জেলে যাওয়ার ১৯ বছর পর কানাইয়া এলাহাবাদ হাইকোর্টে তার মায়ের জামিনের টাকা পরিশোধ করে।
কানাইয়া বলে, “জামিনের টাকা যোগাড় করতে আমাকে অনেক, অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। তারপরও আমি এখন অনেক খুশি। ”
কানাইয়ার চাকরিদাতা এএইচ রহমান বলেন, “তার কোনো কাজ ছিল না, সে না খেয়ে থাকত। সে আমার কাছে কাজ চায় বেঁচে থাকার জন্য। আমি তাকে একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ দিয়ে দেই। ”
এশিয়ান হিউম্যান রাইটস জানায়, এই ঘটনা ভারতের আদালতের অদক্ষতারই প্রমাণ। ভারতের কোনো কোনো আদালতে মামলা নিষ্পত্তি হতে এভাবেই কয়েক যুগ পর্যন্ত লেগে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৩
কামরুল হাসান কাইউম/ সম্পাদনা: কবির হোসেন হাসান শাহরিয়ার হৃদয়, নিউজরুম এডিটর