কলকাতা: পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ চলে গেলেন। একটি তারা খসে পড়ল বাংলা চলচ্চিত্র জগতের।
চিত্রশিল্পী-তথ্যচিত্র পরিচালক সুনীল ঘোষের পুত্র ঋতুপর্ণ ছোট থেকেই সিনেমার পরিবেশে বড় হয়েছেন। বই আর সিনেমাই তাঁর মননশীলতাকে এক উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যায়।
১৯৬৩ সালের ৩১ আগস্ট কলকাতায় জন্মেছিলেন ঋতুপর্ণ। বাবা-মা দু’জনেই শিল্পী। পড়াশোনা কলকাতার সাউথ পয়েন্ট হাই স্কুলে। এরপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে পড়েন। কোনও নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে কখনওই পড়াশোনাকে আটকে রাখেননি।
ভালবাসতেন নাচ-আঁকা-লেখালিখি-সম্পাদনা-অভিনয়। ভালবাসতেন রবীন্দ্রনাথ আর সত্যজিৎ রায়কে। শুরুতে কাজ করতেন বিজ্ঞাপন জগতে। সেখান থেকেই আসেন ক্যামেরার পিছনে।
ঋতুপর্ণ ঘোষের মৃত্যু সংবাদ পেয়েই তাঁর কলকাতার প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের বাড়ি যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস, তৃণমূল সংসদ সদস্য ডেরেক-ও-ব্রায়েন।
সংবাদ পেয়েই সেখানে ছুটে যান চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
মৃণাল সেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, রঞ্জিৎ মল্লিক, রূপা গাঙ্গীল, গৌতম ঘোষ, দীপঙ্কর দে, সব্যসাচী চক্রবর্তী, কৌশিক গাঙ্গুলী, অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী, অঞ্জন দত্ত, চিত্রা সেন, ঋতুপূর্ণা সেনগুপ্ত, সুজিত সরকার, তাপস পাল, শঙ্কর চক্রবর্তী, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, শ্রীজিত, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, আবীর চট্টোপাদ্যায়, জুন মালিয়া, ইন্দ্রনীল সেন, গৌরব চক্রবর্তী, কৌশিক সেন প্রমুখ শেষ দেখা দেখতে যান ঋতুপর্ণ ঘোষকে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রয়াত পরিচালকের বাড়ি গিয়ে পুষ্পস্তবক দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ঋতুপর্ণ ঘোষ বড় মাপের পরিচালক। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। তাঁর অকাল প্রয়াণে সারা বাংলা স্তম্ভিত। ”
মুখ্যমন্ত্রী সেখানে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শেষকৃত্য নিয়ে কথা বলেন।
ঋতুপর্ণ ঘোষের মৃত্যুতে বিভিন্নজনের শোক:
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় : অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমি খুবই, শোকাহত। এই অকালমৃত্যু মেনে নিতে পারছি না। একটি ছবিতে তার সঙ্গে কাজ করেছি। বহু কাজ দেখেছি তার। চলে যাওয়াটা অত্যন্ত মর্মান্তিক। এত অল্প বয়সে এত গুণী লোক চলে গেলেন ভাবতে পারছি না।
তাপস পাল : এত অল্প বয়সে এত সম্মান, এত খাতি, এত গুণ তিনি অর্জন করেছিলেন। সেই মানুষটা বৃহস্পতিবার সকালে এইভাবে চলে গেলেন ভাবতে পারছি না। শুধু মাত্র সারা বাংলা নয়, সারা ভারতবর্ষ এমনকী সারা বিশ্ব তাঁর নাম জানত। ভাষা দিয়ে এই দুঃখ বোঝাতে পারছি না। তাঁর মৃত্যু বাংলা ছবির জগতে অপূরণীয় ক্ষতি।
কৌশিক সেন : এইভাবে যে মানুষটা ছেড়ে চলে যাবে ভাবতে পারছি না। এত হাসিখুশি ছেলেটা ঘুমের মধ্যে মারা গেল, বিশ্বাস হচ্ছে না।
মধুর ভাণ্ডারকর : অত্যন্ত গুণী এবং শিক্ষিত পরিচালক ছিলেন তিনি। চলচ্চিত্রটা খুব ভাল বুঝতেন। শুধু বাংলাই নয়, সারা ভারতের ছবির জগতের অন্যতম সেরা নক্ষত্র ছিলেন।
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় : আমার মেন্টরের মতো ছিলেন। এই মুহূর্তে কোনও কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই আমি। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। আমি বাকরুদ্ধ।
ব্রাত্য বসু : খুব ভাল একজন বন্ধুকে হারালাম। অনেকদিনের সখ্যতা ছিল তার সঙ্গে আমার। সিনেমা, থিয়েটার আরও অনেক কিছু নিয়ে প্রচুর আড্ডা হত তার সঙ্গে। এত অল্প বয়সে ও আমাদের ছেড়ে এইভাবে চলে যাবে তা ভাবতে পারছি না। দুই বাংলার অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। যেখানে দুই বাংলাকে নিয়ে একত্রে ছবি প্রকাশ করার অন্যতম প্লাটফর্ম ছিলেন ঋতুদা।
দেবজ্যোতি মিশ্র : বিশ্বাস করতে পারছি না- কীভাবে ঘুমের মধ্যে এত অল্প বয়সে ঋতু আমাদের ছেড়ে গেল।
রাইমা সেন : আমি শক্ড। আমি তাকে ফোন করে সবকিছু জিজ্ঞাসা করতাম। তার ছবি ‘চোখের বালি’-তে আমি প্রথম কাজ করি। আমার অভিনয় শিক্ষার সিংহভাগটাই তার কাছ থেকে শেখা।
বাংলার আর এক প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী তাঁর শোক বার্তায় জানান, আমি একজন আমার সহযোদ্ধাকে হারালাম। চলচ্চিত্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের অনক মিল ছিল।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল চারটার সময় তাঁর মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার নন্দনে। সেখানে তাঁর অগণিত ভক্তরা ফুল, মালা দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে থাকেন। নন্দন থেকে তাঁর মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় টেকনিশিয়ানস স্টুডিওতে। এরপর সিরিটি মহাশ্মশানে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।
বাংলাদেশ সময় : ২১১৬ ঘণ্টা, ৩০ মে, ২০১৩
এস পি/এস বি/সম্পাদনা: মাহমুদুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর