ঢাকা: বৈধ কাগজ না থাকায় কোরিয়া সরকার জোর করে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে আট বছর বয়েসী বাংলাদেশি শিশু মাহিয়াকে।
২০০০ সালের কাছাকাছি সময়ে ট্যুরিস্ট ভিসায় মাহিয়ার মা অ্যালী (২৯) ও বাবা ফিলিপ (৩৪) কোরিয়ায় আসেন।
এরপর ২০০৫ সালে কোরিয়ার এক অবস্ট্রেটিক হাসপাতালে মাহিয়ার জন্ম হয়। ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে মাহিয়ার বাবা-মা কোরিয়াতে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসে তার নাম নিবন্ধন করেননি। এমন কি বাংলাদেশেও তার কাগজপত্র নেই।
এদিকে, মাহিয়া তার জন্মের পর থেকে আট বছর কোনো কাগজপত্র ছাড়াই কোরিয়ায় বড় হয়।
কোরিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মাহিয়ার নাগরিকত্ব ততক্ষণ দেওয়া হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশে তার জন্ম নিবন্ধন না করা হবে। এখনো মাহিয়া কোনো দেশেরই নাগরিক নয়।
জন্ম সূত্রে মাহিয়া কোরিয়ান হলেও সে দেখতে দক্ষিণ এশিয়দের মতো। জন্মের পর থেকে আট বছর বয়স পর্যন্ত কোরিয়ায় থাকায় সে পুরোপুরি কোরিয়ান হয়ে গেছে।
সে খুব কম সময়ই বাড়িতে বাংলাদেশি খাবার খায়। এমনকি মাশক এলিমেন্টারি স্কুলে দ্বিতীয় বিভাগে পড়ুয়া মাহিয়া ঠিক মতো বাংলাও বলতে পারে না।
বাংলাদেশে ফিরে আসা প্রসঙ্গে মাহিয়া বলে, “আমি কোরিয়ান বন্ধুদের রেখে ফিরে যেতে চাই না। আমি আমার লেখাপড়া এখানেই (কোরিয়া) চালাতে চাই। ”
মাহিয়ার জীবনের লক্ষ্য জানতে চাইলে সে উত্তর দেয়, “আমি ডাক্তার হয়ে শিশুদের চিকিৎসা করতে চাই। ”
মাহিয়ার বাবা ফিলিপ বলেন, “এটা খুবই দুঃখজনক। কোরিয়ার একটি শিশু আমেরিকায় জন্ম নিলে তার পরিচয় হয় আমেরিকান। অথচ আমার মেয়ে কোরিয়াতে জন্ম নেওয়ার পরও সে কোরিয়ার নাগরিকত্ব পাচ্ছে না। ”
মাহিয়ার মা অ্যালী বলেন, “ভুল যেটা হয়েছে, সে জন্য আমরাই দায়ী। আমাদের সন্তানের কোনো দোষ নেই। ”
তিনি বলেন, “১৯৯১ সালের শিশু অধিকার আইনের আর্টিকেল ৭-এ বলা হয়েছে যে, কোনো শিশু জন্ম নেওয়ার পর রাষ্ট্রের দায়িত্ব তার জন্ম নিবন্ধন করা এবং সে সেই দেশের পরিচয়েই পরিচিত হবে। ”
অ্যালী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “আমি আশা করবো, আগামী পাঁচ বছর পরে যখন আমি আবার ফিরে আসবো, তখন কোরিয়া তার এই আইন বদলে ফেলবে। ”
কোরিয়ান সংগঠন ইউএনসিআরসি’র জরিপ অনুযায়ী, কোরিয়াতে প্রায় ৪ হাজার নিবন্ধনহীন শিশু রয়েছে। অথচ সরকারের কাছে এই শিশুদের কোনো তালিকা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৭ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০১৩
এটি/সম্পাদনা: আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর