নয়াদিল্লি: সৌদি আরবের পর এবার কুয়েত সমস্যায় পড়তে চলেছেন বিদেশি কর্মীরা। উপসাগরীয় দেশগুলি বিদেশি কর্মী কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছে।
কেবলমাত্র অবৈধ ভিসা বহনকারীরাই এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছেন কুয়েত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবর উদ্দিন। অনেক ভারতীয় ‘ডোমেস্টিক ভিসা’ নিয়ে কুয়েতে গিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরি করছেন। নতুন এই আইনে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। দেশে ফিরে আসতে হতে পারে তাদের।
তবে, ভারতীয় দূতাবাস ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে কুয়েত সরকারের সঙ্গে কথা বলছে। আসলে ভারতকে লক্ষ্য করে এই নীতি গ্রহণ করা হয়নি। এই নয়া নীতির মূল উদ্দেশ্য অবৈধভাবে চাকরি করা বিদেশিদের দেশে ফেরানো বলে জানিয়েছেন সৈয়দ আকবর উদ্দিন।
কুয়েত সরকারের তরফে বলা হয়েছে- দেশে ফেরার টিকিটও বিদেশি কর্মচারীদের দিয়ে দেওয়া হবে। সৌদি আরবের নয়া নাতাকাত আইন নিয়ে ইতিমধ্যেই কথাবার্তা চলছে ভারত ও সৌদির মধ্যে। সেখানে প্রায় ২০ লক্ষ ভারতীয় কর্মচারী চাকরি করে।
সৌদি সরকার ইতিমধ্যে ৭২ হাজার ভারতীয়কে দেশে ফেরার সার্টিফিকেট মঞ্জুর করেছে। সৌদির নয়া আইন অনুসারে যেকোনও ব্যবসাক্ষেত্রে প্রতি দশজন বিদেশি কর্মচারীর জন্য একজন সৌদির কর্মচারী রাখতে হবে।
ভারতীয় কর্মচারীদের এই অবস্থার জন্য গত ২৪ মে আরব সফর করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সলমন খুরশিদ। তিনদিনের আরব সফরে নাতাকাত আইনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
তাঁর সঙ্গে এই সফরে ছিলেন অনাবাসী ভারতীয় বিষয়ক মন্ত্রী ভাইলার রবিসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা। কীভাবে কর্মচ্যুত ভারতীয় কর্মচারীদের সাহায্য করা যায় সে বিষয়েও সৌদির সঙ্গে আলোচনা হয় ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের।
কুয়েত সরকার ইতিমধ্যেই ৮ হাজার ভারতীয় কর্মচারীর জন্য ‘এমার্জেন্সি সার্টিফিকেট’ ইস্যু করেছে। মুম্বাই পর্যন্ত ফেরার খরচও বহন করছে কুয়েত সরকার। তবে, মুম্বাই থেকে ভারতীয় ঠিকানায় পৌঁছানোর খরচ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ভারতীয় দূতাবাসকে।
কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আকবর উদ্দিন বলেছেন, ভারতীয় কর্মচারীদের রুজি-রুটিতে আঘাত করার জন্য এই আইন করা হয়নি। বরং সৌদি সরকার ভারতীয় কর্মচারীদের কাজের প্রশংসা করেছে। ইতিমধ্যেই জেদ্দা এবং রিয়াদে ভারতীয় কর্মচারীদের সাহায্যের কাজে লেগেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি।
নাতাকাত আইনের তিনমাসের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। আগামী তিন জুলাই এর নির্ধারিত সময় শেষ হবে। আকবর উদ্দিন বলেছেন, নয়া এই নীতির ফলে ঠিক কত সংখ্যক ভারতীয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার সঠিক হিসাব তাঁর কাছে নেই।
দেশে ফেরার সার্টিফিকেট পেতে নিজেদের দেশের দূতাবাসে ভিড় করছে বিভিন্ন দেশের কর্মচারীরা। দূতাবাসগুলির বক্তব্য এত কম সময়ের মধ্যে বিপুল পরিমাণ মানুষের কাগজপত্র ঠিক করা প্রায় অসম্ভব। এদিকে সময়সীমাও শেষ হতে চলেছে।
সৌদি আইনে অবৈধ ভিসা নিয়ে চাকরি করলে বিপুল অঙ্কের ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। তাতে রীতিমতো উদ্বিগ্ন ভারতীয় কর্মচারীসহ অন্যান্য বিদেশি কর্মচারীরা। শুধু ক্ষতিপূরণ নয়, একইসঙ্গে শাস্তি হিসেবে কারাদণ্ডও হতে পারে তাদের। ক্রমশ ভিড় বাড়ছে দূতাবাসগুলির সামনে।
সৌদিতে কাজ করে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ। সৌদি থেকে দেশে ফিরে আসার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন তাদের পরিবার-পরিজনেরা। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানানো হয়েছে, দেশে ফেরার ব্যাপারে ভারতীয়দের সমস্ত রকম সহযোগিতা করবে সেদেশের সরকার। তাছাড়াও বৈধ ভিসা নিয়ে যারা রয়েছেন তাদের কোন সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ সময় : ১১৫৩ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৩
এস পি/ সম্পাদনা: এসএস