ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

একান্ত সাক্ষাৎকারে বিমান বোস

তিস্তা সমস্যা জিইয়ে রাখা উচিৎ নয়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০:৪৯, জুন ১৭, ২০১৩
তিস্তা সমস্যা জিইয়ে রাখা উচিৎ নয়

কলকাতা: বিমান বোস। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান, ভারতের মার্ক্সবাদী কম্যুনিস্ট পার্টি তথা সিপিআই(এম)-এর রাজ্য সম্পাদক ও পলিটব্যুরো-এর সদস্য।

রাজনীতি বিশ্লেষক হিসেবেও তিনি পরিচিত। কুটনৈতিক বিষয়েও তিনি বোদ্ধা। সম্প্রতি বিমান বোসের মুখোমুখি হয়েছে বাংলানিউজ।

তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি, ছিটমহল হস্তান্তর, ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘুদের অবস্থা, গোর্খা ল্যান্ড, পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলাসহ ইত্যকার বিষয়ে সোজা সাফটা কথা বলেছেন। বাংলাদেশের কোনো সংবাদমাধ্যমকে দেয়া এটাই তার প্রথম সাক্ষাৎকার। গত শনিবার সিপিআই (এম)-এর রাজ্যের সদর দপ্তরে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ভাস্কর সরদার

তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে আপনি বা আপনার দল কি ভাবছেন?

বিমান বোস: তিস্তা জলবণ্টন নিয়ে আমারা আগেও বলেছি নদী বিশারদের মতামত নিয়ে দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে যৌথ ভাবে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা দরকার। এটি একটি আন্তর্জাতিক বিষয়, আমারা মনেকরি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এই সমস্যার সমাধান হওয়া উচিৎ। বাংলাদেশ আমাদের প্রতিবেশী দেশ। প্রতিবেশীর সঙ্গে সবসময়ই সুসম্পর্ক রাখা দরকার। পৃথিবীর বহু দেশে এই ধরনের সমস্যার সমাধান হয়েছে। তিস্তা জলবণ্টন এর মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বেশি দিন ফেলে রাখা উচিৎ নয়।

সোমবার (১৬জুন) তিস্তা জলবণ্টন নিয়ে যে যৌথ আলোচনা সভার ডাক দেওয়া হয়েছে তাতে রাজ্য সরকারের পক্ষে কেউ হাজির থাকছেন না।   খবরে প্রকাশ পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ঐ অঞ্চলের মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেচ দপ্তরের মন্ত্রীকে সেখানে পাঠাচ্ছেন না। এই প্রসঙ্গে আপনার মতামত কি?

বিমান বোস: বিষয়টি আন্তর্জাতিক হলেও যেহেতু তিস্তা আমাদের রাজ্যের উপর দিয়েই গেছে সেই কারণে রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো বর্তমান। তাই এই বিষয়ে রাজ্যের মতামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সরকার কেন প্রতিনিধি পাঠাচ্ছেন না সেটা আমি বলতে পারব না। যখন জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তখন গঙ্গা-পদ্মা জলবণ্টন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হয়ে বিষয়টি সম্পাদন করেছিলেন। এই ধরনের সমস্যা জিইয়ে রাখা উচিৎ নয়। এর ফলে দুই দেশের সম্পর্কের উপর প্রভাব পড়বে। বর্তমান রাজ্য সরকারের এই বিষয়ে আরও আন্তরিক হওয়া উচিৎ।

রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী  বলেছেন জলবণ্টন হলে উত্তরবঙ্গের মানুষ ক্ষতির সম্মুখিন হবে। এ বিষয়ে আপনারা কি ভাবছেন?

বিমান বোস: নদীটির উপর দিকের অংশ ভারতের মধ্যে নীচের দিকটা বাংলাদেশে। পৃথিবীর কোন নদীতেই সব মরশুমে (মৌসুমে) একই পরিমাণ জল থাকে না।   মরশুম অনুযায়ী জলের পরিমাণের তারতম্য ঘটে। তাই আমার মনে হয় আন্তর্জাতিক আইন মেনে চুক্তি হলে কোন দেশেরই অসুবিধা হবে না।

তিস্তা জলবণ্টন নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কল্যাণ রুদ্র কমিটি নিয়ে আপনার বক্তব্য কি?

বিমান বোস: এই কমিটির রিপোর্টের ব্যাপারে আমার কিছু  জানা নেই।

ছিটমহল হস্তান্তর বিষয়টি আপনি বা আপনার দল কীভাবে দেখছেন?

বিমান বোস: ছিটমহল বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল। আমার মনেহয় একাধিকার দুই দেশের প্রতিনিধিদের আলোচনার মাধ্যম সমস্যার সমাধান করতে হবে। ভারত-পাকিস্তান যখন ভাগ হয়েছিল তখন এই সমস্ত দিক পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার বিশ্লেষণ করে ভাগ করা হয়নি। তাই এই ধরনের নানা সমস্যা রয়ে গেছে। তবে আমার মনে হয় দুই দেশের সহমতের  ভিত্তিতে এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করা দরকার।

ছিটমহল হস্তান্তরের বিষয়টি সমাধান করতে যদি সংবিধান সংশোধন করার দরকার হয় তবে আপনারা কি অবস্থান নেবেন?

বিমান বোস: আগে এই প্রস্তাব উঠুক তখন অবশ্যই এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারব।

ছিটমহল নিয়ে ভারতের জনতা দল(বিজেপি) এবং তৃনমূল কংগ্রেস যে  অবস্থান গ্রহণ করেছে সেই নিয়ে আপনার বিশ্লেষণ কি?

বিমান বোস: কোন ধর্মীয় চিন্তা ধারার দ্বারা পরিচালিত হয়ে এই সমস্যার সমাধানে চেষ্টা করা উচিৎ নয়। তাই আমার মতে নিরপেক্ষভাবে এই সমস্যার সমাধান করে উচিৎ।  

তৃনমূল কংগ্রেস এই নিয়ে চুপ। আপনি কি তৃনমূল কংগ্রেস ও বিজেপিকে কি একইভাবে দেখছেন?

বিমান বোস: তৃনমূল কংগ্রেস এর অবস্থান নিয়ে আমি নিশ্চিত নই। ওদের কোনো ‘অ্যাজেন্ডা’ নেই। ওরা কখনও কংগ্রেসের সাথে থাকে কখনও বিজেপি-এর সঙ্গে থাকে।

বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী দাবী করছেন যে পশ্চিমবাংলার মুসলিম সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের দুই বছরেই ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে। এই  নিয়ে আপনার দলের কি মন্তব্য?

বিমান বোস: মুসলিমদের উন্নতি করতে হলে তাদের শিক্ষার দিক থেকে উন্নতি করতে হবে। বামফ্রন্ট সরকারের সময় মাদ্রাসা গুলিতে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার করা হয়েছিল। এটাই সঠিক পথ। আলিয়া ইউনিভার্সিটিতে বহু মুসলিম গবেষক আছেন। তারা ভাল কাজ করছেন। রাজ্যের বিভিন্ন পরীক্ষায় মুসলিম ছাত্ররা ১ থেকে ১০-এর মধ্যে জায়গা করে নিচ্ছে। মুসলিমদের উন্নতির জন্য ধারাবাহিক প্রচেষ্টার দরকার। এটা দুইবছরে হয়নি। এটা বামফ্রন্ট আমলের পরিকল্পনার ফল।

পশ্চিমবঙ্গে ইমামদের ভাতা দেওয়া হচ্ছে, এই নিয়ে আপনার বিশ্লেষণ?

বিমান বোস: আগেই বলেছি মুসলিমদের উন্নতি করতে হলে ধারাবাহিকভাবে কাজ করতে হবে। চমক দিয়ে আদতে কোন উন্নতি হয় না।

গোর্খা ল্যান্ড-এর সমস্যা  বর্তমান সরকার অতিদ্রুত সমাধান করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন।   রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন পাহাড় হাসছে, পাহাড়ের পরিস্থিতি এখন কোন জায়গায়?

বিমান বোস: ওই অঞ্চলে মানুষদের কিছু সমস্যা আছে। ধৈর্য ধরে তার সমাধান করতে হবে। কাঞ্চনজঙ্ঘায় চূড়ায় যখন সূর্যের আলো পড়ে দেখে মন তৃপ্ত হয়ে যায়। মনে হয় পাহাড় হাসছে। কিন্তু মানুষ হাসছে কি? মানুষের সমস্যার সমাধান হয়েছে কি? এটাই সবথেকে বড় প্রশ্ন। ‘পুলটিস’ দিয়ে কিচ্ছু হবে না।
 
পশ্চিমবঙ্গের আইন শৃঙ্খলা নিয়ে নানা প্রশ্ন প্রতিদিনই উঠে আসছে, এই নিয়ে  প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আপনাদের বক্তব্য কি?

বিমান বোস: রাজ্যে অদ্ভুত পরিস্থিতি চলছে। গত ৫ দিনে ৪ জন ছাত্রী ধর্ষণের শিকার। তাদেরকে খুন করা হয়েছে। উত্তর চব্বিশ পরগনা–এর বারাসাত, গেদে, মুর্শিদাবাদ, গাইঘাটা একের পর এক ঘটনা ঘটছে। কলকাতার পার্ক স্ট্রীট এর ধর্ষণের ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন সাজানো ঘটনা। তদন্তে ধর্ষন বলে মনে হচ্ছে জানানোর পরেই বদলি হয়ে গেলেন আইপিএস অফিসার দময়ন্তী সেন। এই সব নির্দশনে পুলিশে-প্রশাসনের কাছেও খারাপ বার্তা যাচ্ছে।

পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে রাজ্য সরকার এবং নির্বাচন কমিশন লড়াই আদালত পর্যন্ত গড়িয়ে ছিল। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে আপনার দলের পর্যবেক্ষণ কি?

বিমান বোস: কমিশন তার এখতিয়ারের প্রশ্ন নিয়ে আদালতের কাছে গিয়েছিল। আদালত রায় দিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন পরিচালনার সমস্ত দায়িত্ব কমিশনের। কমিশনকে শক্ত হাতে নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে। কমিশনকে সক্রিয় হতে হবে। অনেক জায়গাতে আমাদের প্রার্থীদের উপর আক্রমণ হচ্ছে। বিভিন্ন  জায়গায় প্রার্থী পদ প্রত্যাহারের জন্য আমাদের প্রার্থিদের উপর চাপ আসছে। হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি।  

সদ্য শেষ হওয়া হাওড়া লোকসভা উপ-নির্বাচনে সি পি আই(এম) এর ভোট বেড়েছে ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে কি ফলাফল হতে পারে বলে আপনার ধারনা?

বিমান বোস: শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট হলে বামফ্রন্ট ভাল ফল করবে।

আপনার ব্যস্ত সময়ের মধ্যে সময় দেবার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

বিমান বোস: ধন্যবাদ, নমস্কার।
.
বাংলাদেশ সময়:  ০০৩৬ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৩
সম্পাদনা: আদিত্য আরাফাত, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।