ঢাকা: আগামী কয়েক দশকে বিজ্ঞানীরা বিশ্বে গড়ে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির কথা বলেছেন। আর তাতে দক্ষিণ এশিয়া দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ।
বুধবার বিশ্বব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত নতুন এক বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসছে। এতে বলা হয়, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দারুণভাবে অগ্রসরমান বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিবেশ জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে ৮০ প্রষ্ঠার এই প্রতিবেদনে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, অত্যধিক তাপমাত্রা এবং ঘন ঘন সাইক্লোনের ফলে দেশটির দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন, মানুষের জীবন-জীবিকা, অবকাঠামো এবং দারিদ্র হ্রাসের চলমান অগ্রগতি হুমকির মুখে পড়বে বলে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদেনে বাংলাদেশকে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করে বলা হয়, সাইক্লোন সিডরে প্রায় ৩৫ লাখ লোক জলাবদ্ধতার শিকার হয়। আর ২০৫০ সালে এরূপ সাইক্লোন হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রায় এক কোটি মানুষ। কৃষির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে বিশাল প্রাণহানিও ঘটবে।
প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে দেওয়া দিয়ে বলা হয়, বর্তমানে যে হারে তাপমাত্রা বিরাজ করছে তাতে আগামী ২০-৩০ বছরে সামান্য বৃষ্টিতেই প্রচণ্ড জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সেচ এমনকি খাবারের জন্যও যথেষ্ট পানির সংকট দেখা দেবে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে।
বাংলাদেশ ও নেপালে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর জোহানেস জাট এ প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশ দ্রারিদ্র হ্রাসে যে বিস্ময় দেখাচ্ছে তা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হুমকির মুখে পড়বে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যুকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নিজেকে কর্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে এমনটি উল্লেখ করে জোহানেস জাট বিশ্বব্যাংক বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশকে সাহায্য করছে বলেও প্রতিবেদনে দাবি করেন।
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন, প্রভাব এবং টেকসই উন্নয়ন নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান পোস্টডাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চ (পিআইকে) বিশ্বব্যাংকের জন্য এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। বিশ্বের ৯০ জন বিজ্ঞানীকে নিয়ে তৈরি এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৯০ সাল পর্যন্ত গড়ে যদি ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পায় তাহলে আগে দ. এশিয়ার যে ক্ষয়ক্ষতির কথা বলা হয়েছিল তার চেয়েও অধিক ক্ষতির মুখে পড়বে এই অঞ্চল।
৬৫ সেমি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৪০ ভাগ উর্বর ভূমি হারিয়ে যাবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হবে এ অঞ্চলের দরিদ্র মানুষ। কৃষির ক্ষতির কারণে ব্যাপক হারে নগরায়ন ঘটবে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ইজাবেলা গুয়েরো জানান, জলবায়ুর পরিবর্তনের লক্ষ্মণ ইতোমধ্যেই এ অঞ্চলের দেশগুলোতে দেখা দিয়েছে। অধিক ক্ষয়ক্ষতি থেকে দ. এশিয়ার এদেশগুলোকে রক্ষা করতে হলে জরুরি ভিত্তিতে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবেলায় সাহায্য করার ক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখছি। ইতোমধ্যেই আমরা দাতাগোষ্ঠীর অর্থে বিশাল অঙ্কের ফান্ড গঠন করেছি। এরা বিভিন্ন অঞ্চলে নানাবিধ প্রজেক্ট শুরু করে দিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৩
সম্পাদনা: কবির হোসেন, নিউজরুম এডিটর