কলকাতা: বৃহস্পতিবার দেড় ঘণ্টার বৃষ্টিতে জল থই থই তিলোত্তমা নগরী কলকতা। মনে হচ্ছে এক টুকরো নদী নেমে এসেছে কলকাতার বুকে।

সকাল ১১.৩০ ভিক্টোরিয়ার মাথা থেকে মেঘ ছড়িয়ে পড়ে ইডেন গার্ডেনস-এর দিকে। ঘন ঘন বাজ পড়ার আওয়াজ আসছে মেঘের ওপার থেকে। বানী বসুর `গার্ন্ধবী` উপন্যাস থেকে ধার করে বলা যায় "যেন ফৈয়জ খাঁ সাহেবের হলক তানের হুঙ্কার"।
দুপুর ১২টা হুড়মুড় করে এলো বৃষ্টি, সঙ্গে দমকা হাওয়ার ঝাপটা। আচমকা আসা বৃষ্টিতে নাজেহাল অফিস যাত্রী থেকে স্কুল ফেরত ক্ষুদে পড়ুয়ার দল সবাই। যে যার মত মাথা বাঁচাবার চেষ্টায় আশ্রয় নিলো ছাউনির তলায়।
ঝোড়ো হাওয়ার দাপটে ছাতার ছত্রখান অবস্থা। রবীন্দ্র সদনের সিঁড়িতে তখন বৃষ্টি থেকে বাঁচতে জমা হয়েছেন কলেজের প্রজন্ম থেকে দপ্তরে পৌঁছাতে না পারা অফিস যাত্রী। কয়েকজন স্কুল পড়ুয়াও ঠাঁই নিয়েছে সেখানে।
দুপুর ১২.৩০, বাড়ছে বৃষ্টির দাপট। ঝাপসা হয়ে আসছে দুরের উঁচু উঁচু বহুতল। ঠিক উল্টোদিকে একা নির্ভীক দাঁড়িয়ে আছেন অপর এক বাঙালি, যিনি আপামর জাতিকে শিখিয়েছেন শ্রাবণকে অনুভব করতে। যিনি বৃষ্টি ভেজার মন্ত্র দিয়েছেন বাঙালির কানে। গানওয়ালা কবির সুমনের শব্দ ধার করে বলা যায় "রবীন্দ্রনাথ নিজেও ভেজেন, আমায় ভেজান"। দুপুর একটা কমে আসছে বৃষ্টির দাপট। সামনের রাস্তায় অল্প জল। কলকাতার প্রধান রাস্তাগুলোতে আজকাল খুব একটা জল জমে না। আর দাঁড়িয়ে থাকা নয় এবার বেরিয়ে পড়া কলকাতার অন্দর মহলের জলছবি দেখতে।
দুপুর একটা বেজে ২০ মিনিট। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর এলাকা ভবানিপুর। হরিশ মুখার্জি রোড হয়ে কালীঘাট। হাঁটু জলে আটকে গাড়ি। ইঞ্জিনে জল ঢুকে গাড়ি বন্ধ। বিরক্ত মুখে গাড়ি ঠেলার লোক খুঁজছেন গাড়ির মালিক। হাতে জুতো নিয়ে সেই জল পেড়িয়েই ফিরছে এক দল ছাত্রছাত্রী। দেখে মনে হলো বৃষ্টি যেন এদের টানেই বার বার ফিরে আসে শহরে।
সময় পৌনে দুইটা, দক্ষিণ কলকাতার প্রাণকেন্দ্র রাসবিহারী মোড়। বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট যানজটের কারণে ১০ মিনিটের পথ পেড়োতে সময় লাগল প্রায় ৩০ মিনিট।
দুপুর আড়াইটা, গড়িয়া হাটের মোড়। বৃষ্টি তখন থেমেছে। নাজেহাল ট্রাফিক পুলিশ। কর্তব্যরত এক ট্রাফিক পুলিশের কাছে কতক্ষণে যানজট ছাড়তে পারে জানতে চাওয়া হলে, উল্টো তিনি জানতে চাইলেন , "কোন মিডিয়া?" কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন "আজকাল আমারা মিডিয়া থেকে একটু দূরে থাকতে চাই"।
বাংলাদেশের মিডিয়া শুনে একটু হেসে বললেন " বৃষ্টি হোক বা ৪০ ডিগ্রী গরম, আমরা সব সময়ই পথে আছি, কলকাতার মানুষের পাশে"।
পৌনে তিনটা, দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ। প্রায় এক কোমড় জল। গাড়ির চলাচলের মত অবস্থা নেই। ফুটের উপর থেকে পসরা গুটিয়ে নিয়েছে দোকানীরা। ফুটপাত আর রাস্তা একাকার হয়ে গেছে জলে। এর সামান্য দুরেই বাড়ি বর্তমান পঞ্চায়েত মন্ত্রীর। পায়ে হেঁটে গেলে মিনিট দশেকের মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যায় সাবেক মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে।
ছবি তোলা দেখে এক পথ চলতি মধ্য বয়সী মানুষ মুচকি হেসে বললেন "কলকাতা নাকি লন্ডন হবে!" পাশ থেকে উত্তর এলো "লন্ডনের রাস্তাতেও এই রকম বৃষ্টি হলে জল জমে। " প্রতিউত্তর এলো সঙ্গে সঙ্গেই "তবে সেখানে নিশ্চয় ড্রেনের জল পাড়িয়ে রাস্তা পাড় হতে হয় না"
ফিরতি পথে একটা গোলমাল শুনে থেমে যাওয়া। ফুটপাত ভেসে গেছে জলে। এক ফুটপাতবাসী পরিবার তার কোলের শিশুকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন এক বাড়ির দালানে। বাড়ির মালকিন তাদের তিরস্কার করে সরিয়ে দিচ্ছেন। সেই ফুটপাতবাসীর ব্যর্থ চেষ্টা দেখে মনে পড়ল নাগরিক কবিয়াল গেয়েছিলেন "বৃষ্টি মানেই ওদের কাছে শুধুই নোংরা জল"।
এতক্ষণে চোখে পড়ল কলকাতা কর্পোরেশনের লোকজন হাজির হয়েছেন জল সরাতে। তারা জানালেন বেশিক্ষণ থকবে না এই জল। এটাই আশার কথা।
বাংলাদেশ সময়: ০১২০ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৩
ভাস্কর সরদার/ সম্পাদনা: সোহেলুর রহমান, নিউজরুম এডিটর