ঢাকা: বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করার অনুমোদন দিয়েছে মিয়ানমার। আর এর মাধ্যমে শিগগিরই রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মিয়ানমারে ফিরে যাবে।
মিয়ানমারের একটি সংবাদ মাধ্যম বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হকের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কর্মসূচি পুনরায় চালু করতে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে। মিয়ানমারের রাজধানী নাইপিদোয় ১২ থেকে ১৭ জুন দু’দেশের পররাষ্ট্র কর্মকর্তাদের বার্ষিক পরামর্শ বৈঠকে চুক্তিটি হয়।
তবে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার কর্মসূচি কবে নাগাদ শুরু হচ্ছে তা এখনও ঠিক হয়নি বলে জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব। তিনি জানান, এটি অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল।
মিয়ানমার টাইমসকে শহিদুল হক বলেন, “এ (রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার) প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করতে আমরা মিয়ানমার সরকারকে উৎসাহিত করেছি। তারা সম্মত হয়েছেন এবং কর্মসূচি ফের শুরু করতে উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করছেন তারা।
“আমরা চাচ্ছি মিয়ানমারের যেসব নাগরিক বাংলাদেশে আছে তাদেরকে নিরাপদে ফেরত পাঠাতে। তারা তাদের নিজ দেশে ভালো ও সুন্দর জীবনের শুরু করতে পারে। ”
২০০৫ সালে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার-বাংলাদেশ একটি চুক্তি হয়। কিন্তু ২০০৫ সালের জুলাই মাসে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়া কর্মসূচি স্থগিত করে মিয়ানমার সরকার।
২০০৯ সালে ফের শুরু হয় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কর্মসূচি। কিন্তু ওই সময় নয় হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানালে তা স্থগিত হয়ে যায়। তারপর থেকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের পাঠানো নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়।
মিয়ানমার এখনও রোহিঙ্গাদের নিজ দেশের নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে নারাজ। দেশটির দাবি, তারা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে অবৈধভাবে বসবাস শুরু করে বা ব্রিটিশদের ক্ষমতা দখলের সময় বা পরে বাংলাদেশ থেকে তারা মিয়ানমারে প্রবেশ করেছে।
বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমারের এ দাবি অস্বীকার করেছে। অনেক রোহিঙ্গাও নিজেদের মিয়ানমারের আদিবাসী হিসেবে দাবি করেন।
মিয়ানমারের ওই সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাকারে এক রোহিঙ্গা শরণার্থী শিক্ষক বলেন, “আমরা অন্যান্য নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মতো যথাযথ অধিকার পেলে আরাকান রাজ্যে ফিরে যেতে আগ্রহী। আমরা ১৯৯১-১৯৯২ সাল থেকে বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে বাস করছি। কিন্তু আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ দেখছি না। আমরা বড় ধরনের একটি জেলে রয়েছি। আমরা স্থায়ী সমাধান চাই। ”
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) জানিয়েছে, মিয়ানমারে সহিংতা ও নিপীড়নের কারণে ১৯৭৮ সালে ও ১৯৯১-১৯৯২ সালে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। গত বছরের জুন ও অক্টোবরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে অনেক শরণার্থী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়।
গত জুনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, অবৈধভাবে প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
বাংলাদেশ সরকারের হিসাব মতে, সমুদ্রকূলবর্তী কক্সবাজারে দু’টি শিবিরে প্রায় ৩০ হাজার শরণার্থী রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৩ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৩
সম্পাদনা: শরিফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর, eic@banglanews24.com