কলকাতা: ডিসান হসপিটাল- কলকাতায় আধুনিক ও উন্নতমানের পরিষেবাযুক্ত একটি হাসপাতাল। শুধু কলকাতাই নয় পূর্ব ভারতের নামকরা ১০টি হাসপাতালের মধ্যে ডিসানের নাম অগ্রগণ্য।
ডিসানের অন্যতম হয়ে ওঠার কারণ- আর পাঁচটা বেসরকারি হাসপাতালের মত ডিসান শুধুমাত্র ধনী রোগীদের কথা চিন্তা করে না।
উন্নতমানের আধুনিক পরিষেবার মাধ্যমে সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষকে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে ডিসান বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখে। এক্ষেত্রে শুধু পশ্চিমবঙ্গের রোগীরাই নয়- বাংলাদেশের রোগীদের জন্যও এ হাসপাতালে রয়েছে বিশেষ অগ্রাধিকার।
ডিসানে আছে ইউরোপ, আমেরিকার মানের আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। প্রায় আড়াই লাখ স্কয়ার ফুট বিস্তৃত দশতলা এই হাসপাতাল বর্তমানে কলকাতার সব থেকে উন্নত হাসপাতালগুলোর মধ্যে অন্যতম।
কলকাতার ইএম বাইপাসের ধারে- ডিসান মোড়ে অবস্থিত ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট এই ডিসান হসপিটাল দক্ষিণ কলকাতার প্রাণকেন্দ্র গড়িয়াহাট থেকে কয়েক মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত। অত্যাধুনিক এই হাসপাতাল কলকাতার চিকিৎসা মানচিত্রে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতালটি বদলে দিয়েছে কলকাতার চিকিৎসা পরিষেবার চিত্র।
`ডিসান হাসপাতাল অ্যান্ড হার্ট ইনস্টিটিউট` সব থেকে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ সুপার স্পেশালাইজড কার্ডিয়াক হাসপাতাল। পূর্ব ভারতে একমাত্র ডিসানই ভারত সরকারের ন্যাশনাল অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড ফর হসপিটাল অ্যান্ড হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারস (এন এ বি এইচ) দ্বারা স্বীকৃত হাসপাতাল।
তবে শুধু কার্ডিয়াক নয়- ডিসান হাসপাতালে আছে আরও ২৮টি বিভাগ। এরমধ্যে গ্যাসট্রোএনটারলজি (খাদ্যনালী সংক্রান্ত), অর্থোপেডিক্স (হাড় সংক্রান্ত), মাজা বদলানো, ভাঙ্গা হাড় জোড়া, নিউরোলজি (নার্ভ এর সমস্যা সংক্রান্ত), ডারমাটলজি (ত্বক বা চামড়া সংক্রান্ত), গাইনকোলজি (স্ত্রী রোগ সংক্রান্ত), ইউরোলজি (কিডনি সংক্রান্ত), ইএনটি (নাক, কান গলা সংক্রান্ত) চিকিৎসা অন্যতম। এছাড়াও হাঁটু প্রতিস্থাপনে ডিসান হাসপাতালে আছে বিশ্বমানের ব্যবস্থা।
আরও আছে- অ্যালার্জি ক্লিনিক, হাঁপানির চিকিৎসার জন্য অ্যাসথেমা ক্লিনিক (হাঁপানি সংক্রান্ত), শিরদাঁড়া বা পিঠের ব্যথা নিরাময়ের জন্য জন্য ব্যাকঅ্যাচ ক্লিনিক, পেন ক্লিনিক (পুরানো বা নতুন ব্যথা নিরাময় সংক্রান্ত),থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসা ব্যবস্থা। এ সব ক্লিনিকে আছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা।
শুধু রোগের চিকিৎসা নয়- ‘ডিসান হাসপাতাল অ্যান্ড হার্ট ইনস্টিটিউট` নিয়ে এসেছে সম্পূর্ণ চিকিৎসা পরিষেবা। এখানে কোন ব্যক্তি পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে প্রতিটি বিষয়ে ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ডাক্তারদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে পারেন।
এখানেই শেষ নয়- যে কেউ চাইলেই ডিসান ব্যবস্থা করে দেবে ট্রাভেল এজেন্টের সাথে কলকাতায় থাকার ব্যবস্থাও এবং তা অবশ্যই হবে আগতদের পছন্দমত জায়গায়।
কথা হচ্ছিল `ডিসান হসপিটাল অ্যান্ড হার্ট ইনস্টিটিউট’ এর ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর টি.কে মুখার্জির সঙ্গে।
প্রথমেই জানতে চাইলাম, বাংলাদেশের রোগীদের জন্য কি কোন বিশেষ ব্যবস্থা আছে কি না?
টিকে মুখার্জি- অবশ্যই আছে। বাংলাদেশ আমাদের প্রতিবেশি, সেখানকার মানুষ আমার আপনজন। তাদের জন্য ডিসান সব সময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে রেখেছে। একটি ফোন করুন বা একটি ই-মেইল করে আপনার সমস্যার কথা জানান, আমরা সমস্ত রকম তথ্য পাঠিয়ে দেব।
আমাদের খবর দিলে আমরাই রোগীকে অতি-আধুনিক ব্যবস্থা সম্পন্ন অ্যাম্বুলেন্সে করে সরাসরি বিমান বন্দর থেকে নিয়ে আসি। এছাড়াও রোগীর আত্মীয়দের থাকার ব্যবস্থা থেকে কারেন্সি পরিবর্তন, গাড়ির ব্যবস্থা সব কিছুতেই ডিসান আপনাকে সাহায্য করবে। এছাড়া অন্য দেশের নাগরিকদের জন্য আছে বিশেষ ডিসচার্জ সেল। এর মাধ্যমে অতিদ্রুত ডিসচার্জ এর কাজটি করা হয়।
এছাড়াও আছে আমাদের লাক্সারি স্যুট। এখানে আপনারা ২টি টেলিভিশন, মাইক্রয়েভ, অভ্যন্তরীণ ক্যাফে, কম্পিউটার, ইন্টারনেটসহ প্রয়োজনীয় সব কিছুই পাবেন।
একটা কথা জানিয়ে রাখি আমার শরীরে বইছে বাংলাদেশের রক্ত। আমার পৈত্রিক ভিটে বাংলাদেশের রংপুরে। তাই গোটা ডিসান হাসপাতালের সঙ্গে আমি নিজে থাকব বাংলাদেশের রোগীদের পাশে, সব সময়।
অন্যদের সাথে ডিসান হাসপাতালের তফাৎ কোথায়?
টিকে মুখার্জি- তফাৎ অনেক জায়গাতেই। প্রথম তফাৎ চিকিৎসার শ্রেষ্ঠতায়। আমাদের সবকটি বিভাগে এন এ বি এইচ স্বীকৃতি পেয়েছি। ডিসানই পূর্ব ভারতের একমাত্র সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল- যা স্বীকৃতি পেয়েছে।
এবার আসি পরিকাঠামোর দিকে। পৃথিবীর সেরা চিকিৎসকও আপনাকে সাহায্য করতে পারবে না, যদি তার কাছে সেরা পরিকাঠামোটি না থাকে। ডিসানে শুধু আধুনিক প্রযুক্তিই নয়- আছে সব থেকে আধুনিক পরিকাঠামোও।
সেই আধুনিক পরিকাঠামো সম্পর্কে একটু বলুন
টিকে মুখার্জি- একমাত্র ডিসান ছাড়া কলকাতার কোন হাসপাতালে "স্টিল ওটি" নেই। আর "স্টিল ওটি" না থাকা মানে সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যায়। এছাড়া আমাদের প্রতিটি ‘আই সি ইউ’ বেডের সঙ্গে থাকে একটি সম্পূর্ণ আলাদা ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা। যা অন্য সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালগুলোতে বিরল।
আই সি ইউ এর বিষয়টি বুঝিয়ে বলুন
টিকে মুখার্জি- অন্যান্য হাসপাতালে ১০টি শয্যার ‘আই সি ইউ’তে বড়জোর ৪টি ভেন্টিলেটর থাকে। একই সঙ্গে প্রায় সব সময়ই ৪টি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আপনি যদি পঞ্চম রোগী হয়ে থাকেন তাহলে আপনি ভেন্টিলেটর পাবেন না। একমাত্র ডিসানে ‘আই সি ইউ’তে প্রত্যেকটি বেডের সঙ্গে একটি করে আলাদা ভেন্টিলেটর আছে। যেগুলি ঠিক সময় ব্যবহার করে বহু প্রাণ বাঁচিয়েছে ডিসান। আমাদের হাসপাতালে ৯০টি ‘আই সি ইউ’ বেড আছে এবং প্রতিটি বেডের সাথে ভেন্টিলেটরের সুবিধা আছে।
দ্রুত পরীক্ষা বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। বিষয়টি ডিসানে কি ভাবে দেখা হয়?
টি.কে মুখার্জি- আপনি একেবারে সঠিক কথা বলেছেন। যে কোন রোগীর ক্ষেত্রে দ্রুত পরীক্ষা করার উপর অনেক সময়ই রোগীর ভালো হয়ে ওঠা নির্ভর করে। সময় একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কলকাতাতে একমাত্র ডিসানে আছে স্পেশাল প্যাথলজি টেস্ট করার জন্য অত্যাধুনিক ল্যাব। যেখানে ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যেই রিপোর্ট পাওয়া যায়। তাই এখন আর জটিল পরীক্ষার জন্য মুম্বাই বা পুনের ল্যাবের উপর নির্ভর করতে হয় না। যার ফলে চিকিৎসা শুরু করা যায় খুব তাড়াতাড়ি।
বাইপাস সার্জারি নিয়ে আপনাদের কি বিশেষ ব্যবস্থা আছে?
টিকে মুখার্জি- আমারা অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে বাইপাস সার্জারি করে থাকি। ৭ দিনের মধ্যে রোগী বাড়ি চলে যেতে পারে।
খরচ-খরচা কেমন?
টিকে মুখার্জি- শুনলে অবাক হবেন, ডিসান একমাত্র ‘এন এ বি এইচ’ দ্বারা স্বীকৃত হাসপাতাল যেখানে খুবই কম খরচে বিশ্ব মানের বাইপাস সার্জারি করা হয়। যেটা ভারতের অন্যান্য সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল গুলোর মধ্যে বিরল। শুধু হার্ট বাইপাস কেন আমাদের সমস্ত চিকিৎসার খরচই সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে।
আর পাঁচটা হাঁসপাতালের মত আমরা শুধু ধনী রোগীদের কথা চিন্তা করিনা। সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষও যাতে আমাদের চিকিৎসার সুযোগ পেতে পারেন আমরা সেই দিকেই বেশি নজর দিয়েছি।
আপনাদের প্যাকেজগুলো যদি পাঠকদের জন্য একবার বলেন
টিকে মুখার্জি- আমাদের এনজিওগ্রাম এর খরচ শুরু হচ্ছে ৭ হাজার রুপি থেকে, পেসমেকার বসানো খরচ শুরু হচ্ছে ৭০ হাজার রুপি থেকে, হার্ট বাইপাসের খরচ শুরু ৮৭ হাজার রুপি থেকে আর হাঁটু রিপ্লেসমেন্ট এর খরচ শুরু ৯৭ হাজার রুপি থেকে। যেকোনো সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের থেকে এটা কয়েক গুণ কম।
আমাদের সময় দেবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
টিকে মুখার্জি- বাংলানিউজকেও ধন্যবাদ। আশাকরি আমার দেওয়া তথ্যগুলো বাংলাদেশের মানুষদের কাজে লাগবে, ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
ডিসানে যেতে হলে কার সাথে যোগাযোগ করবেন রোগীরা?
টিকে মুখার্জী- বাংলাদেশর রোগীরা সরাসরি আমার সাথেই যোগাযোগ করতে পারেন। আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে সমস্ত ব্যবস্থা করে দেব। ফোন করুন আমার মোবাইল নম্বরে +৯১-৯৮৩১০৩৬০১৪ অথবা ইমেল করুন tm@desunhospital.com এই মেইল ঠিকানায়, ধন্যবাদ।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৭ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৩
ভিএস/আরআই