ঢাকা, রবিবার, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

মিশরে ক্যু নয়, নয়া বিপ্লব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:২৩, জুলাই ৫, ২০১৩
মিশরে ক্যু নয়, নয়া বিপ্লব

ঢাকা: রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায়, কোনো বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতা থেকে সেনাবাহিনী হটিয়ে দিলেই সেটি হয়ে যায় ‘ক্যু’ বা ‘সামরিক অভ্যুত্থান’। বিশ্ব তথ্যকোষ উইকিপিডিয়াতে বলা হয়েছে, একটি সরকারকে হঠাৎ সরিয়ে বা ক্ষমতাচ্যুত করাই হচ্ছে ক্যু।

ক্ষমতাচ্যুত করার কাজটি করতে পারে রাষ্ট্রযন্ত্রের যে কেউ বিশেষ করে সামরিক বাহিনী। সামরিক বা বেসামরিক যেকোনো ধরনের সরকার নতুন করে গঠিত হতে পারে।

বুধবার রাতে মিশরের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে সরিয়ে দেয়ার ঘটনাটিকে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোও সামরিক অভ্যুত্থান হিসেবে দেখছে। সেনাবাহিনীর হাতে আটক থাকা মোহাম্মদ মুরসিও বলেছেন, এটি ‘পুরোপুরি একটি সামরিক ক্যু’।

কিন্তু তত্ত্বের ধার ধারেন না মিশরীয়রা যারা সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থানে সমর্থন দিয়েছেন। একে তারা আখ্যা দিয়েছেন নব জাগরণ বা নতুন বিপ্লব নামে। দেশটির সংবাদ মাধ্যমেগুলোর একটি অংশও ‘ক্যু’ শব্দটি ব্যবহারের বিরোধী।

মুরসির ক্ষমতাচ্যুতিকে ক্যু বলতে নারাজ কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহমেদ ঈদ। ১৯ বছর বয়সী আহমদ বলেন, “ক্যু? না! আমাদের প্রেসিডেন্ট খুবই খারাপ ছিলেন। সেনাবাহিনী আমাদের ভাই। ”

৬৪ বছর বয়সী কাতিয়া রামজি মেয়ে নিকে পতাকা দোলাতে দোলাতে বলেন, “সেনাবাহিনী আমাদের সঙ্গে, বিপ্লবের সঙ্গে রয়েছেন। এটি ক্যু নয়। ”

মুরসিবিরোধী আমর মুসার মতে, এটি কেন ‘ক্যু’ হবে। এটি ‘জনতার অভিশংসন’। সাবেক স্বৈরশাক হোসনি মোবারকের আমলের এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিশরের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে ‘দিকনির্দেশিকা’ তৈরির দায়িত্ব পেয়েছেন।

তিনি বলেন, “কিছু পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম বলতে চাচ্ছে যে মিশরে ‍সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। আসলে এটি অসত্য। ”

দু বছর আগে আরব লীগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী মুসা বলেন, “এটি একটি জনপ্রিয় বিদ্রোহ, একটি জনপ্রিয় বিপ্লব। আসলে জনগণেই প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করেছে। ”

তিনি ‍জানান, মুরসিকে সরানোর সিদ্ধান্ত সেনাবাহিনী এককভাবে নেয়নি। জনগণই সেনাবাহিনীকে বাধ্য করেছে এমন পদক্ষেপ নিতে।

তিনি জানান, সাবেক প্রেসিডেন্ট মুরসি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হলেও তার কর্মকাণ্ড ছিল জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে। জনগণের ইচ্ছায় মুরসিকে সরানোয় আন্তর্জাতিক মহল থেকে ইতিবাচক সাড়া আসবে।

আন্দোলন শুরু হওয়ার পর মুরসির কাছে নিজের পদত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছিলেন মোহাম্মদ কামেল আমর।

এখনও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে থাকবেন তিনি।

তিনিও মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার ঘটনাটিকে সামরিক ক্যু হিসেবে দেখছেন না। মুরসিকে সরানোর পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করে তিনি জানান, ওয়াশিংটন যেন কায়রোকে সহায়তা দেয়া বন্ধ না করে।

মিশরে যা হয়েছে তা সামরিক ক্যু নয়।

আমরের মতে, “সামরিক ক্যু মানে বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে তাদের আসনে বসবে সামরিক সরকার।

আসলে যা ঘটেছে তা পুরোপুরিই বিপরীত। ...কোনোভাবেই এটি সামরিক অভ্যুত্থান নয়। ”

মিশরের  পত্রিকা আহরাম অনলাইনে বলা হয়েছে, এটি দ্বিতীয় বিপ্লব।

তবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মিশরে যা হয়েছে তা সামরিক অভ্যুত্থান। ব্রুকিংস দোহা সেন্টারের শাদি হামিদ বলেন, “আমি বুঝতে পেরেছি নেতিবাচক গূঢার্থের কারণে মিশরীয়রা ‍‘ক্যু’ শব্দের ব্যাপারে খুবই সংবেদনশীল। ”

তিনি আরও বলেন, “এটি যথার্থ অর্থে ক্যু নাহলেও কিন্তু পাঠ্যপুস্তক অনুযায়ী ক্যু। নির্বাচন ব্যতিত ‘জনগণের ইচ্ছা’ জানার কোনো মাপকাঠি নেই। ”

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০১৩
সম্পাদনা: শরিফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর-eic@banglanews24.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।