ঢাকা: গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করার পর মিশরের চলমান অস্থিরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ। শুক্রবার দুপুরের পর থেকে মুরসি সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিশরের নেতাদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানিয়েছে। অন্য দিকে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন প্রতিবাদ ও বিক্ষোভকারীদের নিরাপত্তা দিতে সেনা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানিয়েছে।
মিশরের বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে সকল পক্ষকে ধৈর্য্য ধারণ করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করার আহবান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স।
এদিকে মুরসির পতনের পর সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানালেও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়, মিশরের বর্তমান সংকট কাটিয়ে উঠতে সকল পক্ষের ধৈর্য্য ধারণ আবশ্যক।
মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর মিশরের সদস্যপদ স্থগিত করলেও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশটির স্থিতিশীলতা কামনা করেছে আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ)।
গত বুধবার বিরোধীদের বিক্ষোভের মুখে সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন প্রেসিডেন্ট মুরসি। কিন্তু দেশটির ইতিহাসে প্রথম বারের মতো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের এই পতন মানতে পারেনি মুরসির দল মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থকরা। প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার থেকেই রাস্তায় নেমে পড়ে তারা।
মুরসিকে স্বপদে বহাল করতে শুক্রবার রাজধানীর উপকণ্ঠের নাসর সিটিতে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক মুসলিম ব্রাদারহুড।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া হলেও বিক্ষোভকারীরা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দিকে এগোতে থাকলে গুলি ছোঁড়ে সেনাবাহিনী। এতে ঘটনাস্থলেই ৩ মুরসি সমর্থক নিহত ও অনেকে আহত হয়।
তারপর শুক্রবার রাতভর থেমে থেমে রাজধানী কায়রো ও মিশরজুড়ে সহিংসতা চলে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়, এখন পর্যন্ত ৩০ জন নিহত ও হাজার খানেকেরও বেশি লোক আহত হয়েছে।
সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মুরসিকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে গৃহবন্দি রাখার পাশাপাশি তার দল মুসলিম ব্রাদারহুডের তিন শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে সেনা কর্তৃপক্ষ।
ইতোমধ্যে ব্রাদারহুড নেতা মোহাম্মদ বদিই, খায়রাত এল-শাতেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক শাখা ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির প্রধান সাদ এল-কাতাতনি, উপপ্রধান রাশেদ আল-বায়োউমিকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করা হয়। যদিও তাদের ছেড়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রিয় সংবাদ মাধ্যম।
এ দিকে, প্রেসিডেন্ট মুরসিকে স্বপদে বহাল রাখার জন্য সেনাপ্রধানের ওপর মাঠ পর্যায়ের সেনাকর্মকর্তারা চাপ দিচ্ছেন এমন খবর অস্বীকার করে ফেসবুক পেজে বিবৃতি দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।
দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতি মুরসি সমর্থক ও বিরোধী উভয় পক্ষেরই উচিত জাতীয় স্বার্থে সংলাপে বসা। অন্যথায় মিশরের অস্থিতিশীলতা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০১৩
সম্পাদনা: হুসাইন আজাদ, নিউজরুম এডিটর-eic@banglanews24.com