ঢাকা, বুধবার, ১৮ ভাদ্র ১৪৩২, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির একবছর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, নয়াদিল্লি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:০১, জুলাই ২২, ২০১৩
রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির একবছর

নয়াদিল্লি: কাজ ফেলে রাখার মানুষ তিনি নন। সাংসদ হিসেবে যেমন ‘করিতকর্মা’ ছিলেন, রাষ্ট্রপতি হিসেবেও তেমন তৎপরতাই দেখিয়েছেন প্রণব মুখার্জি।

ফলে এক দশকের বেশি ঝুলে থাকা আজমল কাসব ও আফজল গুরুর ফাঁসি দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি রাইসিনা হিলে কাটিয়ে ফেললেন একবছর। সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধতার যে শপথ তিনি নিয়েছিলেন তাতে তিনি সফল বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

কোনো বিষয়ে মন্ত্রিসভার সঙ্গে মতবিরোধ হোক তা তিনি চান না। বিষয়টি তিনি জানিয়েছেন প্রকাশ্যে। প্রয়োজনে ‘কপিবুক’ রাষ্ট্রপতি হতেও তার বাধা নেই। ভারতের রাষ্ট্রপতি পদ অনেকটা সাম্মানিক। সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক থেকে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত তিনি। এ পদের মর্যাদা রক্ষা করা তার কর্তব্য। অরাজনৈতিক ব্যক্তিদেরই এ পদে নির্বাচন করা হতো। সোনিয়া গান্ধী কংগ্রেসের সভানেত্রী হওয়ার পর রাজনৈতিক ব্যক্তিদের এ পদে সমর্থন করেন। প্রধানত তার ইচ্ছাতেই রাষ্ট্রপতি হন কংগ্রেস ঘরানার নেত্রী প্রতিভা পাতিল।

বিরোধীদের বড় অভিযোগ, তিনি কংগ্রেসের হয়ে কাজ করেছেন। তার বিদেশ সফল ঘিরে বিতর্কের অন্ত নেই। কোটি কোটি টাকা খরচ করেছেন। প্রণব মুখোপাধ্যায়ও রাজনীতির জগতের মানুষ। লোকসভার দলনেতার পদ থেকে রাষ্ট্রপতি পদে উন্নীত হন তিনি।

প্রায় এক দশক তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। তাই ভয় ছিল কংগ্রেসের ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’ হিসেবে যে দায়িত্ব তিনি পালন করে এসেছেন, তিন দশক ধরে স্বভাববশত রাষ্ট্রপতি হয়ে সেই একই আচরণ করবেন না তো! কিন্তু প্রণব মুখার্জি সব আশঙ্কাকে অমূলক প্রমাণ করে রাষ্ট্রপতি ভবনকে আলাদা উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তার নামের আগে ‘হিজ এক্সেলিন্সি’ ব্যবহার তিনি বন্ধ করেছেন।

গণতান্ত্রিক ভারত নিয়ে তার গর্বের শেষ নেই। সেই গর্বের কথা জানিয়েছেন অকপটে। একবছরে তিনি ২৩ রাজ্য সফর করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাঁচ রাজ্য। ৩৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছেন। উঠে এসেছে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কথা। যা তিনি মন্ত্র হিসেবে প্রচার করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকার সময় অনেকবারই বিচার বিভাগের অতি সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। বিশ্বাস করতেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই শেষ কথা।

সেই চেনা ‘প্রণবদা’ই এখন অন্য মানুষ। দেশের সংবিধান রক্ষার গুরুদায়িত্ব তার কাঁধে। তাই মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত মেনে মুম্বাই হামলার একমাত্র জীবিত জঙ্গি আজমল কাসব বা সংসদ হামলার অন্যতম চক্রী আফজল গুরুর ফাঁসির সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েছেন তিনি।

এরপরেও প্রকাশ্যে মুড়িমুড়কির মতো ফাঁসির ছাড়পত্র দেওয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। খাদ্য নিরাপত্তা বিল নিয়ে অধ্যাদেশ জারি করে কেন্দ্র তা অনুমোদনের জন্য তার কাছে পাঠায়। তিনি তিনদিন ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এ অধ্যাদেশের বিরোধিতা করেছিল। তাই প্রকাশ্যে না বলে দেরি করে বার্তা দিয়েছিলেন সংসদের আলোচনা হলে ব্যাপারটা আরও ভালো হতো। কেননা একরফা সিদ্ধান্তের থেকে আলোচনার পক্ষপাতী তিনি।

ওই একবারই তিনি সঙ্কট তৈরির পথে হেঁটেছিলেন। পরে অবশ্য তিনি স্বাক্ষর করেন। তার পরীক্ষা হবে ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তখন ত্রিশঙ্কু লোকসভা হবে। তখন কাকে তিনি সরকার গঠন করতে ডাকবেন? একক সংখ্যা গরিষ্ঠ দল না কোনো জোট? এখনও পর্যন্ত বিষয়টি অমীমাংসিত। বিতর্কিতও বটে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৩
এসপি/সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ