ঢাকা: ওয়েবসাইট ও টেলিভিশন মন্তব্যে ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগে এক ব্লগার ও অ্যাক্টিভিস্টকে ৭ বছরের কারাদণ্ড ও ৬০০ বেত্রাঘাতের নির্দেশ দেয় সৌদি আদালত।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) তাদের ওয়েবসাইটে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
সাইবার অপরাধ বিষয়ক আইনের অধীনে রাইফ বাদায়ি নামের অ্যাক্টিভিস্টকে এ সাজা দেয় আদালত। বাদায়ি গত বছরের জুন থেকেই কারাগারে রয়েছেন।
এইচআরডব্লিউ ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণভাবে স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য বাদায়ির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। সৌদি আরবের ধর্ম ও রাজনীতি বিষয়ে মুক্তচিন্তা প্রসারের ভাবনাকে উৎসাহিত করতে বাদায়ি ২০০৮ সালে তার অনলাইন কার্যক্রম শুরু করেন।
বাদায়ি ২০১২ এর ১৭ জুন গ্রেফতারের পর থেকে জেদ্দার বুরাইম্যান কারাগারে রয়েছেন। সৌদির ফৌজদারি আদালতের বিচারক ফারিস আল-হার্বি বাদায়ির বিরুদ্ধে স্বধর্ম ত্যাগের জন্য প্রাণদণ্ডের অভিযোগ প্রত্যাহার করেন যখন বাদায়ি আদালতে নিজেকে মুসলমান বলে পরিচয় দেন।
এইচআরডব্লিউয়ের মধ্যপ্রাচ্যের সহকারি পরিচালক নাদিম হৌরি বলেন, ‘একজন স্বাধীন চিন্তাধারার মানুষ ধর্ম নিয়ে আলোচনা করার জন্য একবছর ধরে কারাগারে বন্দী রয়েছে। তাকে এজন্য সাত বছর জেলখানায় কাটাতে হবে এবং ৬০০ বেত্রাঘাত সহ্য করতে হবে। ’ তিনি এ শান্তিপ্রিয় ব্লগারের কারাদণ্ডকে ‘অবিশ্বাস্য রকম নিষ্ঠুর’ বলে উল্লেখ করেন।
সৌদির সংবাদ সংস্থা জানায়, সৌদি আরবে স্কাইপি, ভাইবার ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো জনপ্রিয় সাইটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে যদি না টেলিযোগাযোগ সেবাদানকারী অপারেটরগুলো নিয়ম-কানুন এবং এ সংক্রান্ত নীতিমালা মেনে না চলে।
বাদায়ির পক্ষের আইনজীবী ওয়ালিদ আবু আল-খাইর এইচআরডব্লিউকে জানিয়েছেন, বিচারক আল-হার্বি সোমবার রায় পাঠ করেন। আদালত ৬ আগস্টের মধ্যে তাকে এ সংক্রান্ত একটি লিখিত কপি পাঠাবে। এর ৩০ দিনের মধ্যে তারা আপিল করতে পারবে।
বাদায়ির স্ত্রী এনসাফ হায়দার এ খবরে পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছেন। তিনি বলেন, আমি জানিনা এখন কি করতে হবে। রাইফ তো ভুল কিছুই করেনি।
বাদায়ির স্ত্রী তিন সন্তানসহ এখন লেবাননে বাস করছেন। এভাবে বিচ্ছিন্ন হবার পর আবার সন্তানসহ সৌদিতে ফিরে যাওয়া অসম্ভব বলে জানান তিনি।
একটি সাক্ষাৎকারে কান্না জড়ানো কন্ঠে তিনি বলেন, ‘মনে হবে সবাই আপনার বিরুদ্ধে। যেনো আপনার সাথে যুদ্ধ চলছে। ’
সিএনএন জানিয়েছে, এ ব্যাপারে মতামত জানার জন্য তারা অনেকবার সৌদি সরকারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পারেনি।
বাদায়ি ২০০৮ সালে ‘ফ্রি সৌদি লিবারেলস ওয়েবসাইট’ খোলার পর থেকেই তার এ ধরনের আইনি ঝামেলা শুরু হয়। তাকে একদিনের জন্য আটক করে ওয়েবসাইটটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এসময় কিছু ধর্মীয় নেতা তাকে অবিশ্বাসী ও স্বধর্মত্যাগী আখ্যা দেয়।
বাদায়ি গ্রেফতারের পর এইচআরডব্লিউ একটি লিখিত বক্তব্যে সৌদি সরকারের কাছে তার মুক্তির অনুরোধ জানায়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৩
সম্পাদনা: কামরুল হাসান কাইউম, নিউজরুম এডিটর-eic@banglanews24.com