ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ ভাদ্র ১৪৩২, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

খণ্ডকালীন শিক্ষকদের বেতন কমিয়ে দিল ত্রিপুরা সরকার

আগরতলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:৩৯, জুলাই ৩১, ২০১৩
খণ্ডকালীন শিক্ষকদের বেতন কমিয়ে দিল ত্রিপুরা সরকার

আগরতলা(ত্রিপুরা): ত্রিপুরার বিভিন্ন কলেজে কর্মরত খণ্ডকালীন শিক্ষকদের ক্লাশের সংখ্যা কমিয়ে দিল সরকার। তারা এখন থেকে বছরে ২০০ ক্লাশের পরিবর্তে ১৭০টি ক্লাশ নিতে পারবেন।

 

রাজ্যের বেশিরভাগ কলেজ চলছে খণ্ডকালীন শিক্ষকদের মাধ্যমে। রাজ্যে বর্তমানে ২১টি সাধারণ ডিগ্রি কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি কলেজ গত শিক্ষাবর্ষে চালু করা হয়েছে। কলেজ থাকলেও নেই প্রয়োজনীয় শিক্ষক। প্রতিটি কলেজেই রয়েছে শিক্ষক স্বল্পতা‌। এ অবস্থায় খণ্ডকালীন শিক্ষকরাই রাজ্যের কলেজগুলির মূল ভরসা। মূলত খণ্ডকালীন শিক্ষকদের দিয়েই কলেজগুলিতে শিক্ষাদান পদ্ধতি চালু রয়েছে।

গত বছর রাজ্যের কলেজগুলিতে ৩১৫ জন খণ্ডকালীন শিক্ষক বা গেস্ট লেকচারার নিয়োগ দিয়েছিলো সরকার। তাদের সাথে সরকা্রের উচ্চশিক্ষা দফতর বছরে ২০০ ক্লাশ করানোর চুক্তি করে। নির্ধারিত হয় ক্লাশ প্রতি শিক্ষকরা ২৫০ টাকা করে পাবেন। অর্থাৎ একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক বছরে  পঞ্চাশ হাজার টাকা পাবেন। সে হিসেবে প্রতি মাসে তারা পাবেন ৪ হাজার ১৬৬ টাকা। এবার কমতে চলল সে টাকা্র পরিমাণ।

খণ্ডকালীন শিক্ষকদের অল ত্রিপুরা গেস্ট লেকচারার অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠনও রয়েছে। এ সংগঠনটি বামপন্থী সংগঠন বলেই পরিচিত। এ রাজ্য সংগঠনের নেতা খণ্ডকালীন শিক্ষক আশিস রায় জানান, নিয়ম থাকলেও খণ্ডকালীন শিক্ষকদের দিয়ে বেশি ক্লাশ করানো হয়। তাদের বছরে অন্তত ৩০০টি ক্লাশ নিতে হয়। অনেকের আরও বেশি ক্লাশ নিতে হয়। কিন্তু তারা ২০০টি ক্লাশের টাকাই পান। বেশি ক্লাশ নেওয়ার জন্য তাদের অতিরিক্ত কোনো টাকা দেওয়া হয় না।

তিনি আরও জানান, প্রতি বছর খণ্ডকালীন শিক্ষকদের সাথে নতুন করে চুক্তি করা হয়। সেক্ষেত্রে প্রায় সময়ই ব্যক্তিগত পছন্দকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ সংগঠনের আরেক সদস্য জানান, ক্লাশের সংখ্যা নিয়ে কথা তুললে বা দুশোর বেশি ক্লাশ করতে অনীহা দেখালে ঐ গেস্ট লেকচারারের সাথে পরবর্তী বছর আর চুক্তি করা হয় না। এজন্য প্রতিবারই অনেক গেস্ট লেকচারারদের বাদ দিয়ে দেয় বিভিন্ন কলেজ কর্তৃপক্ষ।

কলেজে শিক্ষকতার নামে খণ্ডকালীন শিক্ষকদের এক প্রকার শোষণ করেছে ত্রিপুরার উচ্চশিক্ষা দফতর। অল ত্রিপুরা গেস্ট লেকচারার অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে গত মাসে খণ্ডকালীন শিক্ষকরা উচ্চশিক্ষামন্ত্রী ভানু লাল সাহার সাথে দেখা করেন।

জুন মাসেই এ সংগঠনটি ঘটা করে তাদের প্রথম সম্মেলন উদযাপন করে। সেখানেও প্রধান অতিথি হিসাবে নিমন্ত্রণ করা হয় উচ্চশিক্ষা মন্ত্রীকে। দুবারই সংগঠনের পক্ষ থেকে খণ্ডকালীন শিক্ষকদের বরাদ্দ ক্লাশের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানানো হয়। এমনিতেই তারা বেশি ক্লাশ নেন। তাদের দাবি, উচ্চশিক্ষা দফতর যেনো কাগজে কলমে তাদের অতিরিক্ত ক্লাশের মর্যাদা দেয়। তাহলে আর্থিক দিক থেকে তারা কিছুটা লাভবান হবেন।

কিন্তু সংগঠনের এ দাবির উল্টো ফল হল সরকারি সিদ্ধান্তে। বরং আগের তুলনায় আরও ৩০ টি ক্লাশ কমিয়ে দেওয়া হল তাদের। যার ফলে এখন একজন খণ্ডকালীন কলেজ শিক্ষকের দৈনিক মজুরি হবে ১১৮ টাকা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ নিয়োগ পাওয়া গেস্ট লেকচারাররা। কিন্তু কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। তাহলে এই মজুরিও হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয় রয়েছে।

উচ্চশিক্ষা দফতরের আধিকারিকরা শুনিয়েছেন অন্য কথা। তা্রা জানিয়েছেন, এবার রাজ্য সরকার নিয়মিত কলেজ শিক্ষক নিয়োগ করতে যাচ্ছে। তাই গেস্ট লেকচারারদের ক্লাশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কবে নাগাদ নিয়মিত কলেজ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে সে ব্যাপারে তারা কিছু জানাতে পারেননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৩
সম্পাদনা: কামরুল হাসান কাইউম, নিউজরুম এডিটর-eic@banglanews24.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।