ঢাকা: জনসাধারণের ফোনকল ও অনলাইন কার্যক্রমে মার্কিন প্রশাসনের অবৈধ নজরদারির তথ্য ফাঁসকারী ও সিআইএ’র সাবেক কর্মকর্তা এডওয়ার্ড স্নোডেনকে আশ্রয় দেওয়ায় রাশিয়ার ওপর ভীষণ ক্ষুব্ধ যুক্তরাষ্ট্র।
স্নোডেনকে আশ্রয় দেওয়ার এ সিদ্ধান্তকে ‘অত্যন্ত হতাশাজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জ্য কার্নির বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে শুক্রবার আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, রাশিয়ার এ সিদ্ধান্তে ভীষণ নাখোশ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
জ্য কার্নি বলেন, ‘বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে স্নোডেনকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য রাশিয়ার প্রতি প্রকাশ্যে এবং গোপনে আমাদের স্পষ্ট ও বৈধ অনুরোধ সত্ত্বেও মস্কোর এ ধরনের সিদ্ধান্ত আমরা অত্যন্ত হতাশ। ’
রাশিয়ার এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হোয়াইট হাউস আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য জি-২০ সম্মেলনের বাইরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যকার বৈঠকের সিদ্ধান্তটিও পুনর্বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে।
অন্য দিকে ওবামার ঘনিষ্ঠ ও ডেমোক্রেট দলীয় সিনেটর চাক শ্যুমার বলেন, ‘রাশিয়ার সিদ্ধান্ত পেছন থেকে চুরিকাঘাত করার মতো। ’ এজন্য সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য জি-২০ সম্মেলন রাশিয়ার বাইরে অন্য কোথাও স্থানান্তর করতেও ওবামার প্রতি আহবান জানান তিনি।
স্নোডেন ইস্যুতে ডেমোক্রেট দলীয় সহকর্মীর মতো ক্ষুব্ধ রিপাবলিকান দলীয় সিনেটররাও।
সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জন ম্যাককেইন বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তের কঠিন জবাব দেওয়া উচিত। ’
তবে স্নোডেন ইস্যু ক্রেমলিন-পেন্টাগন সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে না বলে দাবি করছে রাশিয়া।
এর আগে স্নোডেনের আইনজীবী আনাতোলি কুচেরেনার বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, বৈধ কাগজপত্র পেয়ে শেরেমেতিয়েভো বিমাবন্দর ছেড়েছেন সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা সদস্য।
গত ২৩ জুন থেকে বিমানবন্দরের ট্রানজিট এলাকায় আশ্রয় নেওয়া স্নোডেন গতকাল বিমানবন্দর ছাড়ার সময় রাশিয়ার সরকার ও এর জনগণকে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান।
আইনজীবী কুচেরেনা বলেন, “শরণার্থীর মর্যাদা প্রাপ্ত স্নোডেন যে কোথাও থাকতে পারবেন। ’ তবে স্নোডেন কোথায় গেছেন এ ব্যাপারে কিছু প্রকাশ করেননি তিনি।
স্নোডেনের কাগজপত্রে দেখা গেছে ৩১ জুলাই থেকে আগামী এক বছর রাশিয়ায় থাকতে পারবেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত মে মাসে জনসাধারণের ফোনোকল ও অনলাইন কার্যক্রমে মার্কিন প্রশাসনের অবৈধ নজরদারির তথ্য ফাঁস করে দেন স্নোডেন।
এরপর নিজের নিরাপত্তার জন্য হংকংয়ে চলে যান তিনি এবং সেখান থেকে মস্কো চলে যান যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা। কিন্তু ওয়াশিংটন তার পাসপোর্ট বাতিল করায় মস্কোর শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দরেই আটকা পড়েন তিনি।
বিমানবন্দরে থাকা অবস্থায়ই চীন, ভারত, নরওয়ে, ভেনিজুয়েলাসহ ২১টি দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে দরখাস্ত করেন তিনি। ভেনিজুয়েলাসহ ল্যাটিন আমেরিকার তিনটি দেশ সে আবেদন মঞ্জুর করে। তবে বিমান পথে ওইসব দেশে যাওয়ার সময় যুক্তরাষ্ট্রের হাতে গ্রেফতার হতে পারেন এমন আশঙ্কা থেকে আপাতত রাশিয়ায় আশ্রয় নেওয়ারই সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
অনেক সময় ক্ষেপণ হলেও শেষ পর্যন্ত মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সহযোগিতায় রাশিয়ায় আশ্রয় পান ৩০ বছর বয়সী স্নোডেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১৩
সম্পাদনা: হুসাইন আজাদ, নিউজরুম এডিটর- eic@banglanews24.com