ঢাকা: মিশরে বুধবার সেনাবাহিনীর অভিযানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৩৮ জনে পৌছেছে। বৃহস্পতিবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিবিসি অনলাইন এ খবর জানিয়েছে।
এছাড়া ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনকারীদের হঠাতে ওই অভিযানে আহত হয়েছে সহস্রাধিক। তবে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে কারণ অনেক মৃতদেহ এখন পর্যন্ত হাসপাতালে নথিভুক্ত হয়নি।
মুরসির দল মুসলিম ব্রাদারহুড এখনও দাবি করছে সেনাবাহিনীর হাতে দুই হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, সহিংসতায় অধিকাংশই শহরে নিহত হয়েছে। তবে মিশরের অন্যান্য শহরেরও বিক্ষিপ্ত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়।
আর দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী ওই সংঘর্ষের পর আবারো ব্রাদারহুড হতাহতের প্রতিবাদে বড় ধরনের আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে।
এদিকে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, তুরস্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহিংসতার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিবের দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে মিশরের কর্তৃপক্ষ বলপ্রয়োগের পথ বেছে নেওয়ায় বান কি মুন মর্মাহত।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি গতকালের অভিযানকে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান ক্যাথেরিন অ্যাশটন মিসরে সহিংসতার ঘটনায় কড়া নিন্দা জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, সহিংসতায় কোনো সমাধান আসবে না। সত্যিকার অর্থে ক্ষমতার রদবদল ও গণতন্ত্রের জন্য সব পক্ষকেই ছাড় দিতে হবে।
তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইপে এরদোয়ান সহিংসতাকে গণতন্ত্রে ফেরার আশার ওপর মারাত্মক আঘাত বলে অভিহিত করেছেন।
গত ৩ জুলাই মুরসিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। এর পর থেকে তাঁকে পুনর্বহালের দাবিতে কায়রোর রাব্বা আল-আদাবিয়া মসজিদের পাশে এবং কায়রোর কেন্দ্রস্থলে আল-নাহদা স্কয়ারে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে আসছিলেন ব্রাদারহুডের কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁদের হটাতে এর আগে গত ২৭ জুলাই রাব্বা আল-আদাবিয়া মসজিদের পাশে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে প্রায় ৮০ জন নিহত হয়। এর পরও তাদের সরকার সেখান থেকে তাদের সরাতে পারেনি।
গতকাল খুব সকালে রাব্বা আল-আদাবিয়া ও নাহদা স্কয়ার ঘিরে ফেলেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। প্রথমে তাঁরা বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। তখন ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দিয়ে রুখে দাঁড়ায় মুখে গ্যাস মাস্ক পরা বিক্ষোভকারীরা। নিরাপত্তা বাহিনীর ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেল দ্রুত তুলে নিয়ে উল্টো তাদের দিকে ছোড়ে। এর পরই দুই পক্ষে শুরু হয় তুমুল গোলাগুলি।
দিনভর ব্যাপক সহিংসতার পর মিশরজুড়ে মাসব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করেছে দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আদলি মনসুর। অন্য দিকে সেনা অভিযানে আড়াই শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার জের ধরে পদত্যাগ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ এল বারাদি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৩
সম্পাদনা: কবির হোসেন, নিউজরুম এডিটর