ঢাকা: বাস্তবতা মাঝে মাঝে কল্পনাকেও হার মানায়। তারই আরেকটি উদাহরণ ভারতের ৬৫ বছর বয়সী সুনীতা নায়েক।
কিন্তু বর্তমানে তিনি মুম্বাইয়ের রাস্তার থাকেন, গুরুদুয়ারা দরবারের খাবারে খেয়ে বাঁচেন। একেই বলে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস।
খুব অল্প বয়সেই বাবা-মাকে হারান সুনীতা। আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু বান্ধবদের সহায়তায় ভারতের পুনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি। পাসও করেন মেধাতালিকায়। তারপর ‘গৃহলক্ষ্মী’ নামের একটি মারাঠি ম্যাগাজিনের সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন দীর্ঘদিন।
ক্যারিয়ারের উত্থানকালে সুনীতা ভারতের ওয়ার্লির সেঞ্চুরি বাজারের কাছে দুটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি ওই অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন।
এছাড়া উত্তরাধিকারসূত্রে পুনেতে তিনি বাঙ্গলো পান সুনীতা। ছিল তার দুটি ব্যক্তিগত গাড়িও।
তারই একপ্রতিবেশী ভারতের মিডডে পত্রিকাকে জানায়, সুনীতাকে আমরা কখনোই পাবলিক বাসে যেতে দেখেনি। তিনি সবসময় নিজের গাড়িতে চলাচল করতেন। একজন ব্যক্তিগত সহকারীও ছিল।
কিন্তু কয়েক বছর আগে সেই ম্যাগাজিনটি বন্ধ হয়ে যায়। পতনের শুরু সেখান থেকেই। ১৯৮৪ সালে পুনের ভান্ধর রাস্তার বাঙ্গলোটি ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেন সুনীতা। ২০০৭ সালের মধ্যে ওয়র্লির দুটি ফ্ল্যাট ও ব্যক্তিগত গাড়ি দুটিও বিক্রি করে দেন। একটি চুক্তির মাধ্যমে সর্বমোট আশি লাখ টাকায় থানেতে একটি লিজ নেওয়া বাঙ্গলোতে উঠেন তিনি।
কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি টের পেতে লাগলেন তার ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা রহস্যজনকভাবে কমে যাচ্ছে। তারপর বাধ্য হয়েই আরো সস্তায় ফ্ল্যাটের খোঁজে ভারসোভা শহরে চলে আসেন। কিন্তু ততদিনে শুধু তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থের পরিমান কমেনি সেই সঙ্গে শহরের ফ্ল্যাটের দামও বেড়ে গেছে অনেক। তাই বাধ্য হয়েই ফুটপাতকে বেছে নিলেন সুনীতা।
মুম্বাইয়ের জেপি রোডের ভারসোভায় শিখ ধর্মের উপাসানালয় গুরুদুয়ারার সামনে একটি রাস্তায় ছোট্ট একটি ঘরের মতো করে তৈরী রাস্তার পাশে একটি জায়গায় থাকছেন তিনি। দিন চালাচ্ছেন গুরুদুয়ারার দাতব্য সাহায্যে।
মিডডে পত্রিকাকে এক সাক্ষাতকারে সুনীতা বলেন, আমি জানি না আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এর অর্থ কিভাবে সরে গেল। তবে তিনি ধারণা করেন কামাল রায়কার নামে তার আগের যে কর্মী ছিল তিনিই এসব করে থাকতে পারেন। কারণ গত ১৫ বছর ধরে তিনি সব কিছু দেখাশুনা করছিলেন।
কিন্তু এখন তিনি তার সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছেন না। কারণ ড্রেনে পড়ে তার মোবাইল ফোনের কললিস্ট থেকে কামালের নাম্বারসহ অনেকের নাম্বার হারিয়ে যায়।
পাঁচটি ভাষায় পারঙ্গম সুনীতাকে তার শুভাকাঙ্খী এবং বন্ধুরা থাকার স্থান দিতে চাইলেও সুনীতার সঙ্গে পোষ্য কুকুরটিকে জায়গা দিতে নারাজ। কিন্তু সুনীতা তার সঙ্গে একযুগ ধরে থাকা কুকুরটিকে ছেড়ে যেতে নারাজ তিনি।
তাছাড়া একাধিক স্থান থেকে আর্থিক সাহায্যের অফার ফিরিয়ে দিয়েছেন সুনীতা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৩
সম্পাদনা: কেএইচ/আরকে