ঢাকা: সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ দ্রুত খতিয়ে দেখবে জাতিসংঘ। এজন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ জরুরি বৈঠক করেছে।
বুধবার সিরিয়ার বিদ্রোহীরা দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছিল। অভিযোগে তারা বলেছিল, আসাদ বাহিনী বিদ্রোহীদের অবস্থানরত দামেস্কের পূর্বাঞ্চলে রাসায়নিক অস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
নিরাপত্তা পরিষদের দুই ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর জাতিসংঘের আর্জেন্টিনা দূত মারিয়া ক্রিস্টিনা পার্সিভাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা এ অভিযোগের বিষয়ে পুরোপুরি সচেতন রয়েছেন। পরিস্থিতি দ্রুত খতিয়ে দেখে, সেখানকার অবস্থা সম্পর্কে স্বচ্ছতা প্রকাশ করা হবে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনার নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্তের নিশ্চয়তার বিষয়ে পরিষদের সদস্যরা মহাসচিব বান কি মুনের দৃঢ় সংকল্পকে স্বাগত জানিয়েছেন। ’
বৈঠকে চলমান সহিংসতা বন্ধে যুদ্ধবিরতির আহবান জানানো হয় বলেও জানান পার্সিভাল।
জাতিসংঘের সহকারী মুখপাত্র এদুয়ার্দো জানিয়েছেন, বুধবার রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগের বিষয়টিকে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছেন।
এর আগে সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের তিনটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত রোববার জাতিসংঘের ২০ সদস্য বিশিষ্ট রাসানিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের একটি দল দেশটিতে পৌঁছেছে। ঠিক তার পরপরই বুধবারের ঘটনায় বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকে আবারও রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ উঠল।
নিউইয়র্ক থেকে আল-জাজিরার সংবাদদাতা নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতিকে অস্পষ্ট ও দুর্বল উল্লেখ করে জানিয়েছেন, নিরাপত্তা পরিষদ সিরিয়া ইস্যুতে বেশি দূর যেতে পারেনি। তারা কোন বিষয়ে একমত হতে পারছেন না।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সহ ৩৫টি দেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের প্রধান তদন্তকারী কর্মকর্তা অ্যাক সেলস্ট্রমকে এ ঘটনার যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত করতে বলা হয়েছে। সেলস্ট্রমের তদন্ত দল এখন সিরিয়ায় রয়েছে।
বিদ্রোহীদের আপলোড করা ভিডিওচিত্রগুলোয় দেখা গেছে, চিকিৎসকরা শ্বাসকস্টে ভোগা হতাহতদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। আবার কয়েকটি ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, প্রায় শ’খানেক মানুষ কোন ধরনের আঘাতের চিহ্ন ছাড়াই শুয়ে আছে।
এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হয়নি নিহত কিংবা আহতের সংখ্যা। সিরিয়ায় অবস্থানরত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক মানবধিকার পর্যবেক্ষক দল জানিয়েছে, হামলায় কমপক্ষে ১০০ মানুষ নিহত হয়েছে।
অন্যদিকে বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, হামলায় কমপক্ষে ১৬০০ মানুষ নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে শত শত মানুষ।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, প্রধান তদন্তকারী কর্মকর্তা অ্যাক সেলস্ট্রম এ হামলার অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিরিয়ার সরকারের সাথে আলোচনা করেছে।
দামেস্কের মিডিয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও অস্থায়ী চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করে জানিয়েছে, হামলায় হাম্মৌরিয়ায় ১৫০ জন, কফার বাতনায় ১০০ জন, সাকবায় ৬৭ জন, দৌমায় ৬১ জন, মৌয়াদামিয়ায় ৭৬ জন ও দামেস্কের বিভিন্ন স্থানে ৪০ জনের লাশ নিশ্চিত করা গেছে।
তারা জানায়, এদের মধ্যে কমপক্ষে ৭০ ভাগ মানুষ বিষাক্ত গ্যাসে নিহত হয়েছে।
দেশটির চলমান সংঘাতে সরকার ও বিদ্রোহী উভয় দলই একে অপরের বিপক্ষে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ করছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিশ্বাস সিরিয়ায় বিষাক্ত সারিন গ্যাসসহ বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক অস্ত্রের মজুদ রয়েছে। তবে দেশটির সরকার বরাবরই এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
গত জুনে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছিল, বাশার আল আসাদ বাহিনী্র বিদ্রোহীদের উপর রাসায়নিক অস্ত্র হামলা চালানোর ব্যাপারে তাদের কাছে উপযুক্ত প্রমাণ রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৩
কেএইচকিউ/জিসিপি