ঢাকা: গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর দিল্লির চলন্ত বাসে ২৩ বছর বয়সী মেডিকেল ছাত্রী ‘ভারতকন্যাকে’ গণধর্ষণের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত চারজনকেই মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন দিল্লির একটি দ্রুত বিচার আদালত।
শুক্রবার দুপুরে ভারতের সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গত বুধবারই চারজনকে হত্যা, ধর্ষণসহ ১৩টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চারজন হলেন মুকেশ সিং (২৬), বিনয় শর্মা (২০), অক্ষয় ঠাকুর (২৮) ও পবন গুপ্ত (১৯)। আদালত সূত্র জানায়, মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হওয়ার পরপরই বিনয় শর্মা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, দোষীদের মৃত্যুদণ্ড প্রদানের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলো।
তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এই রায়কে সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপের প্রভাবে পক্ষপাতদুষ্ট বলে দাবি করেন। এছাড়া, রায় ঘোষণার পর আইনজীবী এপি সিং কেঁদে দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করার কথাও জানান আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
আদালত সূত্র জানায়, রায় ঘোষণার পূর্ব মুহূর্তে অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারপতি যোগেশ খান্না বলেন, ওই ছাত্রীকে একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নির্যাতন করা হয়েছিল এবং এই ঘটনাটি ছিল ‘বিরল ঘটনার চেয়েও বিরল’। ন্যায়বিচারে দোষীদের মৃত্যুদণ্ডই প্রাপ্য।
গত বুধবার অভিযুক্ত চারজনকে হত্যা, ধর্ষণসহ ১৩টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করার পর ‘ভারতকন্যা’র মা-বাবা আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দাবি করে করে বলেন, তারা আমাদের মেয়েকে একটুও দয়া করেনি। তাহলে তারা কেন অনুগ্রহ পাবে?
গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর সিনেমা হল থেকে ফেরার পথে ‘ভারতকন্যা’কে গণধর্ষণ করে এবং তার বন্ধুকে বেদম মারধর করে বেহুঁশ অবস্থায় চলন্ত গাড়ি থেকে ছুঁড়ে ফেলে ছয় পাষণ্ড।
ওই ন্যাক্কারজনক ঘটনা দিল্লির ব্যস্ততম সড়কের তিনটি তল্লাশি কেন্দ্রের মধ্যে ঘটলেও দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা একবারের জন্যও ফিরে চাননি। তিনটি পুলিশ তল্লাশি কেন্দ্রকে ঘিরে চলন্ত বাসটি প্রায় ৪৫ মিনিট চক্কর দিয়ে ভারতকন্যা ও তার বন্ধুকে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে। কয়েক ঘণ্টা পর তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বন্ধু সেরে উঠলেও স্থানীয় হাসপাতাল থেকে সিঙ্গাপুরে স্থানান্তরিত হওয়া ‘ভারতকন্যা’ দুই সপ্তাহের লড়াই শেষে মারা যান।
এই বর্বর ঘটনার প্রতিবাদে ভারতসহ সারাবিশ্বে সমালোচনার ঝড় উঠে। অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবিতে দিল্লিসহ ভারতের রাস্তায় নামে হাজারো মানুষ।
গণবিক্ষোভের মুখে ধর্ষণের শাস্তি বাড়াতে আইন সংশোধনেও বাধ্য হয় ভারত সরকার।
এর মধ্যে বিচারকার্য চলাকালে দিল্লির একটি কারাগারে আত্মহত্যা করেন প্রধান আসামি রাম সিং। সম্প্রতি এ ঘটনায় অভিযুক্ত কিশোরকে তিন বছরের সংশোধনাগারে পাঠান দ্রুত বিচার আদালত। গত বুধবার বাকি চারজনকে ধর্ষণ, হত্যাসহ ১৩ টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেন আদালত।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৩/আপডেট ১৬২৪ ঘণ্টা
এইচএ/আরআই/আরআইএস