হজের নির্ধারিত বিধান অনুযায়ী বুধবার দুপুরে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হাজিদের উদ্দেশে খুতবা দিয়েছেন সৌদী আরবের গ্র্যান্ড মুফতী শায়খ আব্দুল আযিয আলশায়খ।
খুতবায় তিনি বলেন, এ দ্বীন ইসলাম আমাদের কাছে আল্লাহর আমানত।
খুতবায় আরো বলা হয়, প্রতিটি ইবাদত আমাদের ওপর আমানত। সেগুলোকে নবীর দেখানো পথে আদায় করা আমাদের কর্তব্য। ধৈর্য, ক্ষমা, ভ্রাতৃত্ব এবং সমুদয় অসৎ স্বভাব থেকে বেঁচে থাকা ইসলামের অনুসারী হিসেবে আমাদের ওপর আমানত। অপর মুসলমান ভাইয়ের সম্মান, সম্পদ এবং তার প্রাণ আমাদের ওপর হারাম। সুতরাং পারস্পরিক সংঘাতে একে অন্যের ওপর আক্রমণাত্মক হওয়া আমাদের জন্য কখনো বৈধ নয়। নবী সা. আমাদেরকে এ থেকে সতর্ক করেছেন। তিনি তো এটাও বলেছেন, যে ধোঁকা দেয়, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
মুসলমান হিসেবে আমাদের পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিকসহ সমুদয় ক্ষেত্রে শরীয়তই আমাদের প্রধান উৎস। একে কেন্দ্র করেই আমাদের জীবন চালাতে হবে। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে ভালো কাজে ব্যয় করতে হবে। আপনি আপনার যৌবন, জীবন, সম্পদ, বুদ্ধি-বিবেকসহ প্রতিটি বিষয়ে দায়িত্ববান এবং আপনাকে এ নিয়ে জবাবদিহী করতে হবে আল্লাহর কাছে।
বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা উন্নতি, প্রগতি এবং সভ্যতার মোহে অনৈসলামী আদর্শ ও সংস্কৃতির প্রতি যেভাবে মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন এবং কোনটি ইসলামের সঙ্গে সম্পর্কিত কিংবা কোনটি সাংঘর্ষিক- সেসব ভুলে গিয়ে অন্ধ অনুকরণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, এতে আমাদেরই ঈমান-আকিদা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উন্নতির পরিবর্তে বিপরীত চিত্র আজ সর্বত্র দেখা যাচ্ছে। সুতরাং বিপদঘেরা এমন দুঃসময়ে আল্লাহ পাকের নির্দেশিত পথে ফিরে আসাই সবচেয়ে কার্যকর সমাধান। এ প্রত্যাবর্তনের এখনই সময়। আল্লাহর রুজ্জু আঁকড়ে ধরা ছাড়া আমাদের কল্যাণ এবং সমাধানের কোনো অন্য বিকল্প নেই।
আমাদের ইতিহাসে যাদের হাতে বিভিন্ন দেশ ও শহর বিজিত হয়েছে, তাদের এ বিজয় কোনো সংখ্যা কিংবা শক্তির ভিত্তিতে ছিল না, বরং শুধুমাত্র ঈমানের দৃঢ়তা, দ্বীনের প্রতি তাদের বিশ্বাস এবং তাদের উন্নত চরিত্রই ছিল এর প্রথম ও শেষ শক্তি।
খুতবায় তিনি মুসলিম শাসকদেরকে তাদের জনসাধারণের প্রতি আদায়যোগ্য দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সততা ও ইনসাফের গুরুত্ব দেন। নিজেদের ব্যক্তি ও পারিবারিক এবং দলীয় স্বার্থের চেয়ে জাতীয় স্বার্থকে এবং মুসলিম উম্মাহর জন্য উপকারি বিষয়কে সবার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান। মুসলিম বিশ্বের আলেম সমাজকে তিনি আহ্বান জানান, যাতে তারা নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব আদায়ে সচেষ্ট থাকেন। মুসলমানদের ঈমান ও আদর্শ রক্ষায় তাদের অগ্রণী ভূমিকার কথা মনে করিয়ে দেন। সমাজের লেখক ও চিন্তাবিদদেরকে তাদের মেধা, শ্রম ও সাধনার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর উপকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, শত্রুদের যাবতীয় ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক করে সবাইকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করার দায়িত্ব আমাদের সবার। মুসলমান অভিভাবক তাদের সন্তানদের সম্পর্কে দায়িত্ববান। সেই দায়িত্ব পালনে নিজেদের পূর্বসুরীদেরকে অনুসরণের আহ্বান জানান।
সৌদী আরবের গ্র্যান্ড মুফতি তার খুতবায় বিশেষ করে যুবসমাজের প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, মাদক এবং নেশাদ্রব্য সমূহের বিস্তার যারা করছে, তারা এ জাতি ও উম্মাহর সঙ্গে সবচেয়ে জঘন্য খেয়ানত করছে। তারা পুরো উম্মাহকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তিনি এ ভয়াবহ বিপদ থেকে নিজেদের সন্তান ও স্বজনদেরকে রক্ষার জন্য উদাত্তভাবে আহ্বান জানান। বর্তমান হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরবের গৃহিত যাবতীয় পদক্ষেপের প্রশংসা করেন এবং মুসলিম উম্মাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানান।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৩
টিআর/এসএইচ/আরআইএস