ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

হারানো ছেলেকে চিনিয়ে দিল ট্যাটু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৩
হারানো ছেলেকে চিনিয়ে দিল ট্যাটু

ঢাকা: হারানোর ২৪ বছর পর পরিবারকে খুঁজে পেয়েছেন ভারতের পুলিশ বাহিনীর এক সদস্য। গনেশ রঘুনাথ ছয় বছর বয়সে হারিয়ে গিয়েছিলেন।



১৯৮৯ সালে বন্ধুদের সঙ্গে ট্রেন ভ্রমণে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন মুম্বাইয়ের গনেশ। ছয় বছরের শিশু গনেশের বাড়ি ফিরে আসা আর হয়নি। এরপর মুম্বাইয়ের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছেন তিনি। কেউ তার খোঁজ নেয়নি।   ট্রেনের ফ্লাটফর্ম পরিষ্কার করেছে, দরগায় আর মন্দিরে খুঁজে খুঁজে খাবার খেয়েছেন তিনি।

অবশেষে এক জেলে তাকে বাড়িতে নিয়ে যায়। জেলের বাড়িতে ঘুমালেও খাবাবের বিনিময়ে দিতে হতো টাকা। খাবারের টাকা যোগাতে ট্রেনে ঘুরে ঘুরে তাকে ভিক্ষা করতে হতো।

একদিন ট্রেন দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। কয়েকমাস তাকে হাসপাতালের কোমায় থাকতে হয়। বেওয়ারিশ হওয়ায় তাকে ওরলির এতিমখানায় দেওয়া হয়।

ওরলির আনন্দ আশ্রমে বেড়ে ওঠেন গনেশ। সেখানেই তার প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ। আশ্রমে স্টান্ডার্ড ফাইফ পর্যন্ত পড়াশোনার পর তাকে থানের আরেকটি এতিম খানায় দেওয়া হয়। সেখানে তিনি স্টান্ডার্ড সিক্স পর্যন্ত পড়েন। এরপর থানের সঙ্কেত বিদ্যালয় ও জুনিয়র কলেজ পড়াশোনা করেন তিনি।

স্বাস্থ্যবান গনেশ রাজ্যে ও জাতীয় পর্যায়ে বেশ কয়েকবার খেলাধুলায় ‍অংশ নিয়েও সুনামও করেছেন। উদীয়মান ক্রীড়াবিদ হওয়ায় তার পড়াশোনার ব্যয়ভার বহন করা হয় রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি ক্রীড়া প্রবোধিনী থেকে। ২০১১ সালে পুলিশ নিয়োগ পান তিনি।

দুর্ঘটনায় আহত হওয়ায় বাড়ি, পরিবার সম্পর্কে ভুলে যাওয়া স্মৃতি ফিরে পেতে অনেক কাঠখড়ি পোড়াতে হয় তাকে। পুলিশে যোগ দেওয়ার আগে থানা গুলোতে নিখোঁজদের তথ্য তন্ন তন্ন করে খুঁজেছেন। ‍

কিন্তু আশা ছেড়ে দেননি তিনি। দুর্ঘটনার আগে তিনি প্রথম যে এতিমখানায় ভর্তি হয়েছিলেন, সেখানে বাসস্থান হিসেবে বলেছিলেন ‘মামা ভাঞ্জা’র নাম। ‘মামা ভাঞ্জা’ মুম্বাইয়ের পার্শ্ববর্তী একটি জেলার বণাঞ্চল এলাকা।

চলতি মাসের শুরুতে গনেশ ওই এলাকায় তার সহকর্মীদের সঙ্গে ফিরে আসেন। ‘মান্দা’ নামে একজনের খোঁজ শুরু করেন তিনি। গ্রামবাসীরা পাহাড়ের ওপর একটি খড়ের ঘর দেখিয়ে দিয়ে বলেন, সেখানে কয়েক বছর ধরে থাকছেন মান্দা। মান্দা গনেশের মা।

গনেশ ওই নারীর কাছে, তার ছেলে হারানোর গল্প শুনতে চান। ওই নারী বলেন, ‘অনেক অনেক বছর আগে তার ছেলে হারিয়ে যায়। ’

ছেলেকে সনাক্ত করার কোনো চিহ্ন আছে কিনা-এমন প্রশ্নে ওই নারী বলেন, ‘তার বাহুতে একটি ট্যাটু ছিল। ’

এ কথা শোনার সাথে সাথে ‍মাকে ‘নিজের বাহুতে লেখা ‘মান্দা’ শব্দটি দেখান গনেশ। হারানো বুকের ধনকে ফিরে পেয়ে অবাক হয়ে যান মা। কোনো কথা নেই মুখে। ছেলের অবস্থাও একই। কিছুক্ষণ পর ছেলেকে বুকে টেনে নেন মা। চোখ ভেসে জল আসে মা-ছেলের।

২৪ বছর আগে হারানোর মাকে এতো তাড়াতাড়ি ফিরে পাবেন এমনটি ভাবনাতীত ছিল গনেশের। তিনি বলেন, ‘আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না, এতো তাড়াতাড়ি মাকে খুঁজে পাব। এটি সত্যিই বিধাতার ইচ্ছা। অলৌকিক ঘটনা। ’

এতোদিন বাবা-মাকে ছেড়ে থাকার ক্ষতিটা পুষিয়ে নিতে চান তিনি। সুযোগ মিললেই পরিবারের সঙ্গে ইচ্ছেমতো সময় কাটাবেন তিনি।

মা ছাড়াও তার পরিবারের রয়েছে দুটি আদরের ভাই-বোন। তাদেরও বাহুতে রয়েছে ট্যাটু। পরিবারের সদস্যদের যেন সনাক্ত করা যায় তাই বংশ পরম্পরায় ট্যাটু এঁকে আসছেন গনেশের পরিবারের সদস্যরা।

এই ঐতিহ্যের বদৌলতে হারানো ছেলেকে ফিরে পেলেন মা।

বাংলাদেশ সময়:  ১৭৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৩
এসএফআই/এমজেডআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।