ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

প্রতিবাদের ভাষা যখন ট্যাটু!

শরিফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৩
প্রতিবাদের ভাষা যখন ট্যাটু!


ঢাকা:
অস্ত্র হাতে প্রতিবাদ করাই হচ্ছে প্রতিবাদের চরম ও শেষ রূপ। কিন্তু যারা অস্ত্র ধরতে পারে না তারা কি করে? তারা কি শোষণ আর নির্যাতনকে মুখ বুঝে সহ্য করে? না, তারাও প্রতিবাদ করে।

তাদের প্রতিবাদের ভাষা হয়, শান্তিপূর্ণ কিন্তু আবেগী এবং অন্যের চোখে জ্বল ঝড়ে তাদরে প্রতিবাদের ভাষা দেখে।

আড়াই বছর ধরে গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়া। এক লাখের বেশি লোক নিহত হয়েছে। ৬৫ লাখ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে সিরিয়া থেকে পালিয়ে দেশান্তরি হয়েছেন। তুরস্ক, জর্ডান, লেবাননে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। কয়েক লাখ সিরীয় দেশের ভেতরে একস্থান থেকে অন্য স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।

আশ্রয়চ্যুতদের মধ্যে বিদ্রোহী সমর্থকরাও রয়েছে আছে, তেমনি রয়েছে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সমর্থকরা।


১১ বছর বয়সী এ মেয়েটি সিরিয়া তার বাড়ির বাইরে বোমার আঘাতে আহত হয়। বোমার তেজস্ক্রিয়তায় ঝলসে যায় তার শরীর। বোমা হামলার পর  কয়েক ঘণ্টা হুদা নামের এ মেয়ের পরিবারের সদস্যদের লুকিয়ে থাকতে হয়েছে। চুপি চুপি দুদিন পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার চাওয়া, ‘আমি আমার জীবন ফিরে চাই’। যুদ্ধবাজরা কি পূরণ করতে পারবে এ শিশুটির এই ছোট চাওয়াটাকে!


মিস্টি চেহারার এ মেয়েটি দেখে বোঝার উপায় নেই, সে আশ্রয়চ্যুত। নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রিত। যুদ্ধ কি তার সংজ্ঞাটা তার জানা না থাকলেও, যুদ্ধের কারণে সে যে তার শিশুকালের মজাটা হারিয়ে তাই বলে দিচ্ছে, দু’হাতের ট্যাটু। আরবি হরফের এ ট্যাটুর অর্থ হচ্ছে ‘কোথায় আমার জীবন?’


শিশু বয়সে খেলাধুলা আর পরিবারের আদরে যাদের বেড়ে ওঠার কথা সেসব শিশু এখন কষ্ট করে সময় কাটাচ্ছে শরণার্থী শিবিরে। এ শিশুটির হাতে লেখা, ‘আমি আমার শৈশব হারাচ্ছি। ’


ইউনিসেফের হিসাব মতে, সিরিয়ার ২০ লাখ শিশু স্কুল থেকে ঝড়ে পড়েছে এবং যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোট ৪০ লাখ শিশু। এদের মধ্যে ১০ লাখ এখন শরণার্থী।


সিরীয় এ শরণার্থী শিশুটি তার বন্ধুদের হারানোর কথা বলছে।


এ শিশুটির এক হাতে লেখা ‘আমি সিরিয়াকে ভালো বাসি’, অন্য হাতে  ‘আমি আমার বন্ধুদের খুবই অনুভব (মিস) করছি’।


এ তরুণি অপেক্ষার প্রহর গুণছে কবে, সিরিয়ায় ফিরবে।

আড়াই বছরব্যাপী যুদ্ধের দামামায় বদলে গেছে সিরীয়দের জীবনাচরণ-খাদ্যাভাস। পানির স্বাদ আর আগের মতো লাগছে না অনেকের কাছে। এ মেয়েটির চোখ দুটি বলে দিচ্ছে, যুদ্ধের ধ্বংস লিলার কথা। দু হাতের পিঠে সে লিখেছে, তার বাড়ির পানির স্বাদ ভিন্ন।


এ সুদর্শন সিরীয় বলছে, হাতে রেখে হাত আমরা বিশ্ব গড়ি। দু হাতের এ লেখার মাঝে হাতের তালুতে ‘সিরিয়া’ ও ‘ভালোবাসা’র প্রতীক।

২০১১ সালের ১৫ মার্চ সিরিয়া সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। এপ্রিলে এ আন্দোলন বেগবান হয়ে ওঠে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারের সরানোর জন্য এক পর্যায়ে অস্ত্র হাতে বিদ্রোহী হয়ে উঠে বিরোধীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৩
এসএফআই/কেএইচ/জিসিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।