ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন মার্কিন কংগ্রেস

শিহাবউদ্দীন কিসলু, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৩
বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন মার্কিন কংগ্রেস

নিউইয়র্ক থেকে: বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, সন্ত্রাসবাদের উত্থানসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির প্রধান অ্যাড রয়েস।

বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত ২টা ৫৫ মিনিটে মার্কিন কংগ্রেসের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক সাব-কমিটির শুনানিতে উপস্থিত থেকে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।



তিনি বলেন, বাংলাদেশে হিন্দুসহ অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, জঙ্গিবাদের উত্থানের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এখনই আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে।

এমনকি বাংলাদেশ পাকিস্তানের পথে এগুচ্ছে কিনা এ নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

একই শুনানিতে সাব-কমিটির চেয়ারম্যান স্টিভ শ্যাবট বলেছেন, বাংলাদেশ ইজ অ্যান ইমপ্রেসিভ স্টোরি।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নির্ধারিত সময়ের ৫৫ মিনিট দেরিতে শুরু শুনানির স্বাগত বক্তব্যে শ্যাবট একথা বলেন।

বাংলাদেশের  চলমান রাজনৈতিক সংকটে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া প্রত্যেকেই তাদের স্ব স্ব অবস্থানে অনড় আছেন।

তিনি তার সাম্প্রতিক সফরের সময় বাংলাদেশে বিএনপির ডাকা ৩ দিনের হরতাল ও সংঘাতের কথা উল্লেখ করে বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে  বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করেছে এবং বাংলাদেশ অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে কঠোর পরিশ্রম করেছে।

স্টিভ শ্যাবট বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যুক্তরাস্ট্রের ঘনিষ্ট বন্ধু হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে ১৫৩ মিলিয়ন মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এত কিছুর পরও বাংলাদেশের উন্নয়ন অব্যাহত ধারায় এগিয়ে যাবে।  

রানা প্লাজার দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করে শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন শ্যাবট।

এসময় কমিটি সদস্য অ্যাড শেরম্যান বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার, এবং মোহাম্মদ ইউনুসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ‘বের করে দেওয়ার’ বিষয়টি আলোচনায় আনার জন্য আহ্বান করেন। কংগ্রেস ওমেন লুসি গেবার্ড সংখ্যালঘুদের অধিকারের বিষয়টি আলোচনায় অন্তর্ভুক্তির আহ্বান জানান।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (‌এইচআরডব্লিউ) এশিয়া অঞ্চলের অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর জন শিফটন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) মুনিরুজ্জামান এবং উড্রো উইলসন সেন্টারের পাবলিক পলিসি স্কলার ড. আলী রীয়াজ শুনানিতে সাক্ষ্য দেন।

৫ মিনিটের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে স্কলার ড. আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ভূমিকা রাখতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশের গণতন্ত্র কিভাবে শক্তিশালী করা যায় বরং সেটি নিয়ে কাজ করা উচিত যুক্তরাষ্ট্রের।

নির্বাচনে পরাজিতদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে রাজনৈতিক সংকটের অবসান সহজ হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রাখার পক্ষে মত প্রকাশ করে তিনি বলেন, এটা দেশের জনগণের দীর্ঘ দিনের দাবি।

তিনি বাংলাদেশকে শান্তিপ্রিয় এবং সেক্যুলার দেশ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ভারতসহ এ অঞ্চলে নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ কখনোই হুমকি নয়।

এসময় জিএসপি সুবিধা বাংলাদেশে দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান ড. আলী রীয়াজ।

অন্যদিকে, মেজর জেনারেল (অব.) মনিরুজ্জামান বর্তমান সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, বর্তমান সরকার বিরোধী দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করতে যাচ্ছে, যা দেশকে আরো কঠিন সংকট ও সংঘাতের দিকেই ঠেলে দেবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনই এ সংকট থেকে দেশকে মুক্তি দিতে পারে।

তিনি বাংলাদেশে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ভারত সীমান্তে নির্বিচারে বাংলাদেশিদেরকে হত্যা করছে। যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এবং দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃস্টি করবে।

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর যে হামলা হচ্ছে তা শুধু ইসলামপন্থিরা করছে এমন নয়, আওয়ামী লীগ-বিএনপিও হামলা চালাচ্ছে।

তবে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (‌এইচআরডব্লিউ) এশিয়া অঞ্চলের অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর জন শিফটন বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা এখনই না দেওয়ার পক্ষে কথা বলেন।

বাংলাদেশ কি পাকিস্তানের পথে যাচ্ছে-অ্যাড রয়েসের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জন শিফটন জানান, পাকিস্তানের উগ্রপন্থিদের সহায়তা করে সে দেশের সরকার আর সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু বাংলাদেশে চিত্র ভিন্ন। বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদে সরকার বা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সহায়তা করে না। যদি সহায়তা করতো তাহলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতো।

ওয়াশিংটন ক্যাপিটল হিলের রেবার্ন অফিস ভবনের ২১৭২ নম্বর রুমে ‘বাংলাদেশ ইন টারময়েল: এ নেশন অন দ্য ব্রিংক’ শীর্ষক এই শুনানি বুধবার যুক্তরাষ্ট্র সময় দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেল ৪টা ১২ মিনিটে। মার্কিন কংগ্রেসের পররাষ্ট্র বিষয়ক সাব কমিটির চেয়ারম্যান স্টিভ শ্যাবট এই শুনানিতে সভাপতিত্ব করেন।

প্রসঙ্গত হাউজ কমিটি অন ফরেন অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যান অ্যাড রয়েস ।

স্টিভ শ্যাবটের নেতৃত্বে সাব কমিটি এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ অঞ্চলের দেশগুলোর রাজনৈতিক সম্পর্কে প্রভাব, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের উদ্যোগ, নির্দিষ্ট দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও সে বিবেচনায় আইন প্রণয়ন, জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ ,বৈশ্বিক সাহায্যের নীতিমালার বাইরেও প্রাকৃতিক দুর্যোগে, সীমান্ত সমস্যা ও আন্তর্জাতিক দাবি নিয়ে আইন প্রণয়ন,এবং আর্থিক ঋণ অথবা অন্য আর্থিক সাহায্য, এ অঞ্চলে যুক্তরাস্ট্রের স্বার্থ রক্ষা ও ভবিষ্যৎ সমস্যা মোকাবেলায় বিভিন্ন উপায় খুঁজে বের করা, আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহযোগিতায় সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের অধিকার নিয়ে কাজ করে এবং অন্যান্য বৈদেশিক সাহায্যের প্রভাব বিষয়ে নজর রাখে।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৩/আপডেটেড: ০৬১৮ ঘণ্টা
এসকে/এসএটি/এসএফআই/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।