ঢাকা: স্ত্রী ভিজুকে মুম্বাইয়ের কামা হাসপাতালে ভর্তি করলেন শামু লক্ষণ চভান। কয়েক ঘণ্টা পর ভিজু-লক্ষণের ঘরে আসবে নতুন অতিথি।
ভিজুকে ভর্তির সময় হাসপাতালে সবকিছু ছিল স্বাভাবিক। দ্রুত ওষুদপত্র কিনে হাসপাতালে ফিরেন চভান।
হাসপাতালের লিফটে চড়ার আগে তিনি গুলির শব্দ শুনতে পান। তিনি মনে করেছিলেন, ফটকা-আঁতশবাজি ফুটিয়ে ক্রিকেট ম্যাচে ইংল্যান্ডকে পরাজয়ের আনন্দ উদযাপন করছে নগরবাসী।
এরইমধ্যে হাসপাতালে পরিদর্শন সময় শেষ হয়ে গেছে। লিফট অপারেটর চভানসহ সবাইকে বের হয়ে যেতে বলছেন। চভান তখন লিফট অপারেটরকে বোঝাতে চেষ্টা করেন, তার স্ত্রী প্রসব বেদনায় কাঁতরাচ্ছেন। তিনি জরুরি ওষুধ কেনার জন্য বাইরে গেছেন।
কিন্তু চভানকে না নিয়ে লিফট উপড়ে গেলে তিনি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকেন। উপড়ে গিয়ে তিনি মুখোমুখি হন ভয়ঙ্কর দৃশ্যের। তিনি দেখতে পান, লিফটম্যানের পেটে গুলি লেগে রক্ত বেরুচ্ছে। এরপর আরেকটু এগুলে তিনি পাহারাদারকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যেতে দেখেন।
দৌড়ে উপরে উঠেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে বললাম বাইরে গুলি হচ্ছে। করিডরে থাকা সবাইকে ওয়ার্ডের ভেতরে যাওয়ার জন্য বললাম। ’
বন্দুকধারীরা যেন ঘরের ভেতর প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিছানার খাট দরজায় লাগিয়ে দেওয়া হয়। নারীদের ওই ওয়ার্ড থেকে কাউকে বের না হওয়ার জন্য কড়া নির্দেশ দেন চিকিৎসকেরা।
জানালা দিয়ে চভান চিৎকার বা কোনো দেখেন, দুই বন্দুকধারী গ্রেনেড ও গুলি ছুড়ছে। এদিকে সন্ত্রাসী হামলা সত্ত্বেও চভানের স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ডেভিভারী কক্ষে। সেখান থেকে গুলির শব্দ শুনলেও ভয়ে চিৎকার করছেন না তিনি।
জীবন শঙ্কা নিয়েও ভিজুর সন্তান প্রসব করান চিকিৎসেকরা। দীর্ঘক্ষণ নবজাতক ও মাসহ চিকিৎসকেরা আটকা থাকে ডেলিভারী কক্ষে। চভান-ভিজুর ঘরে নতুন অতিথি হিসেবে মেয়ে আসে।
হঠাৎ করে একটি গুলি দরজায় আঘাত করে। কিন্তু কাঁচের দরজার ফেটে গেলেও গুলি ভেতরে আসেনি। জন্মদানের পর ভিজুকে সন্তানকে নিয়ে ফ্লোরে শুয়ে পরার পরামর্শ দেন যেন গুলি না লাগে।
রাত ১০টা ৫৫ মিনিটে চভানকে জানানো হয়, তার মেয়ে এসেছে। তখন হাসপাতালে সন্ত্রাসীদের আক্রমণের ঘণ্টাখানেক হয়ে গেছে।
ভিজু মেয়ের নাম দেন ‘তেজস্বিনী’। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আপোষহীন চরিত্রে একটি বলিউড চলচ্চিত্রে অভিনয়কারী এক নায়িকার নামে এ নাম রাখেন তিনি। কিন্তু চিকিৎসকেরা চভান-ভিজুর মেয়ের নাম দেন ‘গুলি’। তারা ভিজুকে বলেন, ‘তোমার মেয়ের নাম গুলি রাখা উচিত। ’
তেজস্বিনীর চেয়ে ‘গুলি’ হিসেবেই বেশি পরিচিত ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বাইয়ে কামা হাসপাতালে সন্ত্রাসী হামলায় জন্ম নেওয়া চভান-ভিজুর কন্যা।
গুলির জন্ম দেওয়ার সময় প্রচণ্ড কষ্ট হলেছিল ভিজুর। তিনি বলেন, ‘ভিজু, ‘আমি খুবই ভয় পেয়েছিলাম কিন্তু সন্তান প্রসবকে থামাতে পারিনি। আমি বুঝেছিলাম, বাইরে কিছু একটা গণ্ডগোল হচ্ছে, তাই আমি শোরগোল করিনি। ’
সন্ত্রাসী হামলার মধ্যে ‘গুলি’র জন্মদান ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোর শিরোনাম হয়েছিল। মুম্বাইসহ ভারতের আশার প্রতীক মনে করা হয় ‘গুলি’কে।
ভিজু বলেন, ‘প্রতিবেশীরা তাকে ‘গুলি’ বলে ডাকেন, অনেক লোক তাকে একে৪৭ বলে ডাকে (হামলাকারীরা কালাশনিকভ রাইফেল নিয়ে হামলা চালিয়েছিলেন)।
সন্ত্রাসী হামলার কথা স্মরণ রেখেই ‘গুলি’র জন্মবার্ষিকী উদযাপন করেন না তারা বাবা-মা।
২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বাইয়ের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ১৬৬ জন নিহত হয়। এক মাত্র জীবিত হামলাকারী হিসেবে পাকিস্তানি মোহাম্মদ আজমল আমির কাসাবকে জীবিত গ্রেফতার করা হয়। ২০১০ সালের মে মাসে তাকে কারাদণ্ড প্রদান ও ২০১২ সালের ২১ নভেম্বর ফাঁসি দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৪