ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ধেয়ে আসছে এল নিনো!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৪
ধেয়ে আসছে এল নিনো!

ঢাকা: ধেয়ে আসছে ‘এল নিনো’। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ের প্রভাব অনুভূত হবে এশিয়া সহ পুরো বিশ্বে।

বাদ রইবে না বাংলাদেশও।

এল নিনোর প্রভাবে চলতি বছর ভারত,বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বর্ষাকালে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি না হওয়ার আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা।

আবার অতিবৃষ্টির কারণে বিশ্বের অন্যান্য অংশে সৃষ্টি হতে পারে অতি বন্যার।

ইতোমধ্যে এল নিনোর লক্ষণ দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ায়। যখন যুক্তরাষ্ট্রের পুরো উত্তরাঞ্চল প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় কাঁপছে তখন পানির অভাবে হা হুতাশ করছে ক্যালিফোর্নিয়া সহ যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চল।



এল নিনোর প্রভাবে ভারতীয় উপমহাদেশে সৃষ্টি হতে পারে অনাবৃষ্টি এবং খরা। এতে মারাত্মকভাবে হ্রাস পাবে চাল, গম ও চিনি সহ অন্যান্য শস্য উৎপাদন।

স্পেনিশ ‘এল নিনো’ শব্দের অর্থ ‘বালক’। ৪ থেকে ১২ বছরের বিরতিতে প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্টি হয় বিশেষ ধরনের তাপ প্রবাহ। ফলে সারা বিশ্বের আবহাওয়ার ভারসাম্যেই দেখা দেয় নেতিবাচক প্রভাব।

উপমহাদেশের মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রেও এল নিনোর প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য বর্ষা মৌসুমের শেষে এল নিনোর প্রকোপ দেখা দিলে খুব একটা ক্ষতি হবে না। কিন্তু বর্ষা মৌসুমের শুরুতে অথবা মাঝামাঝি সময়ে এর প্রভাব হতে পারে মারাত্মক। উপমহাদেশের গত ১৩০ বছরের ইতিহাসে দুই-তৃতীয়াংশ খরাই হয়েছে এল নিনোর প্রভাবে।

চলতি বছর এল নিনোর সম্ভাবনা প্রবল বলে সতর্ক করে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ব্যুরো অব মেটিওরোলজি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাইমেট প্রেডিকশন সেন্টারও। আশঙ্কা প্রকাশ করছে জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিকাল অরগানাইজেশনও।

সিঙ্গাপুরের ফিলিপ ফিউচারের বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ ভেনেসা তান বলেন, এল নিনোর প্রভাবে পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় বাধার সৃষ্টি হবে। ফলে বেড়ে যাবে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্যের দাম।

এল নিনোর আশঙ্কায় ইতোমধ্যেই বিশ্বে কোকোর দাম বেড়ে গেছে। আফ্রিকার খরা হলে, কোকোর দাম আরও বাড়বে। কারণ পৃথিবীর সবথেকে বেশি কোকো উৎপাদন হয় আফ্রিকায়।
 
ভারতেও এল নিনোর প্রভাব হবে ব্যাপক। দেশটি পৃথিবীর দ্বিতীয় শীর্ষ চিনি, চাল ও গম উৎপাদনকারী দেশ।

ভারতের কৃষক অধিকার সংগঠন কিষাণ জাগৃতি মঞ্চের সভাপতি সুধীর পানওয়ার বলেন, বর্ষা মৌসুমের মাঝামাঝি সময় এল নিনো গ্রীষ্মকালীন ফসল উৎপাদন হ্রাস করবে।

২০০৯ সালেও খরার কারণে শস্য উৎপাদন বিঘ্নিত হয় ভারতে। বিশ্ববাজারে চিনির দাম গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছেছিলো ওই বছরই।
 
ভারতীয় উপমহাদেশের পাশাপাশি এল নিনোর প্রভাব অনুভূত হতে পারে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপিন্স এবং চীনেও। চাল সহ আরও কয়েকটি শস্যের ৯০ শতাংশই উৎপন্ন হয় এশিয়ায়। যদি এশিয়ার খাদ্য উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয় তবে প্রভাব পড়বে পুরো বিশ্বেই।

এল নিনোর প্রভাবে বিশ্বে গমের দামও বেড়ে যেতে পারে। কারণ বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ গম রফতানিকারক দেশ অস্ট্রেলিয়া গত কয়েক মাস ধরেই খরায় ভুগছে। এল নিনোর কারণে পরিস্থিতি হতে পারে আরও সঙ্কটাপন্ন।

এ পরিস্থিতিতে দুর্বল খাদ্য নিরাপত্তার দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের চিন্তার কারণ আছে বইকি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।