ঢাকা: ইউক্রেনের রাশিয়াপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় ক্রিমিয়া উত্তেজনাপূর্ণ। রাশিয়ার সমর্থকদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত ক্রিমিয়া অস্ত্রধারীরা সরকার ভবনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা দখলে নিয়েছে, সেসব স্থাপনায় টাঙানো হয়েছে রাশিয়ার পতাকা।
রুশপন্থীরা স্লোগান দিচ্ছে ‘ক্রিমিয়া হচ্ছে রাশিয়া’, অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নপন্থীরা স্লোগান দিচ্ছে ‘ক্রিমিয়া রাশিয়া নয়’।
ক্রিমিয়া ইতিহাস বিজড়িত একটি অঞ্চল। ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গেলের আবির্ভাব এই ক্রিমিয়াকে কেন্দ্র করে, এই ক্রিমিয়ায় বৈঠক হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর ইউরোপকে টুকরো টুকরো করার। আর রাশিয়ার জন্য সামরিক কারণে খুবই গুরুত্বপুর্ণ এই উপদ্বীপ
এক সময় রাশিয়ার অংশ ছিল ক্রিমিয়া
কৃষ্ণ সাগর কূলবর্তী ক্রিমিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার স্বার্থের সম্পর্ক অনেক পুরোনো। নিজের নিয়ন্ত্রণাধীন ক্রিমিয়া ১৯৫৪ সালে ইউক্রেনকে উপহার দিয়েছিলেন রুশ নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ। সেসময় সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ছিল ইউক্রেন।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ক্রিমিয়ার কিছু স্থানীয় পুনরায় রাশিয়ার সঙ্গে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইউক্রেন ও ক্রিমিয়ার আইনপ্রণেতারা ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের সঙ্গে থাকার পক্ষে ভোট দেন।
ক্রিমিয়ার জনগণের বড় অংশ রুশ নৃ-গোষ্ঠী
ক্রিমিয়ায় প্রধানত তিনটি নৃ-গোষ্ঠীর জনগণের বাস। উত্তরে ইউক্রেনীয়, দক্ষিণ রুশ ও মধ্যখানে তাতারস নৃ-গোষ্ঠীর বসতি। ক্রিমিয়ার জনগোষ্ঠীর মাত্র ১৫ থেকে ২০ শতাংশ তাতার নৃ-গোষ্ঠীর। বাকি জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই রুশ।
রুশ নৌবহর
রাশিয়া-ক্রিমিয়া নিয়ে কোনো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুরু করলে তা কৃষ্ণ সাগরে রুশ নৌবহরে মোড় নেবে। ক্রিমিয়ার সেভাস্তপোলে রাশিয়ার চারটি নৌবহরের একটি অবস্থিত। ২৩০ বছর ধরে সেখানে রয়েছে রাশিয়ার এ নৌবহর। মধ্যপ্রাচ্য ও বলকান রাষ্ট্রগুলোতে কোনো সমস্যা হলে এ নৌবহর থেকে সহজে ভূমধ্য সাগরে রুশ নৌবাহিনী প্রবেশ করতে পারে।
বিশ্ব ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নাম ক্রিমিয়া
আধুনিক নার্সিং সেবার প্রবর্তক ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গেল এর আবির্ভাব ঘটেছিল ক্রিমিয়ায়। ১৮৫০ এর দশকে ক্রিমিয়া যুদ্ধে তিনি সেবার আলো নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন। ক্রিমিয়া যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়েছে ব্রিটেন, ফ্রান্স, অটোমান তুর্কির যুদ্ধাহত সৈন্যদের সেবা করে তিনি বিশ্বে ‘ল্যাডি উইথ ল্যাম্প’ নামে পরিচিত পান।
ইউরোপ ভাগের বৈঠক
১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে মিত্র জোটের নেতারা-যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইন্সটন চার্চিল ও সোভিয়েত নেতা যোশেফ স্তালিন ক্রিমিয়ায় বৈঠকে বসেন। ক্রিমিয়ার পর্যটন শহর ইয়াল্টায় বসে বসে তারা ইউরোপ ভাগের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার স্নায়ু যুদ্ধেরও বীজ নিহত ছিল এই ইয়াল্টা বৈঠকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৪