ঢাকা: দক্ষিণ চীন সাগরে ২২৭ যাত্রী ও ১২ ক্রুসহ বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজের হতাহতদের উদ্ধারে দক্ষিণ চীন সাগরে দুটি জাহাজ পাঠিয়েছে চীন। ভিয়েতনামও উদ্ধারকারী দল পাঠাচ্ছে।
ভিয়েতনাম নৌ বাহিনী এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম খবরটি দিয়েছে। তবে মালয়েশিয়ার সরকার ভিয়েতনামের এ তথ্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা বলছেন কোনো ধরনের হতাহত কিংবা বিধ্বস্তের খবর আমাদের কাছে নেই।
ভিয়েতনামের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, এক ঊর্ধ্বতন নৌ কর্মকর্তা দক্ষিণ চীন সাগরের ভিয়েতনাম উপকূলে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্তের কথা নিশ্চিত করেছেন।
ভিয়েতনামের অ্যাডমিরাল নগো ভান পাতকে জানিয়েছেন, মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি মালয়েশিয়ার সমুদ্র সীমার ভেতরে বিধ্বস্ত ‘হতে পারে’।
মালয়েশিয়ার উদ্ধারকারী কর্মকর্তাদের উড়োজাহাজারে অবস্থান নিয়ে হিসাব-নিকাশের ভিত্তিতে তিনি এ কথা জানিয়েছেন বলে জানায় রয়টার্স।
তবে বাংলাদেশ সময় ১২টা ৫৯ মিনিটে বিবিসি জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার পরিবহনমন্ত্রী সেরি হিশাম উদ্দিন বলেছেন, এখন পর্যন্ত তাদের কাছে নিখোঁজ হওয়া উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য নেই।
বিধ্বস্ত হওয়ার গুজবকে বিশ্বাস না করার কথাও বলেন হিশাম। তিনি বলেন, আমাদের ক্ষমতার মধ্যে থেকে আমরা উড়োজাহাজটির অবস্থান শনাক্ত করার চেষ্টা করছি।
কুয়ালালামপুরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তারা যথেষ্ট স্বচ্ছ রয়েছেন। কোনো তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা জানাচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময় ১২টা ৩০ মিনিটে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স এক বিবৃতিতে উড়োজাহাজটির সন্ধান না পাওয়ার কথা জানালেও বিধ্বস্ত হওয়ার ব্যাপারে কিছু বলেনি।
এর কয়েক মিনিট আগে রয়টার্স চীন সাগরের ভিয়েতনাম উপকূলে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর জানায়।
বিধ্বস্তের ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে ভিয়েতনামের নৌ বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করছে মালয়েশিয়ার নৌবাহিনী। মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী দাতুক সেরি হিশাম উদ্দিন তুন হুসেইন বলেছেন, (বিধ্বস্তের) তথ্যকে ‘অসত্য’ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছে।
তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ভিয়েতনামের নৌ বাহিনী যেহেতু তথ্য দিয়েছে, তাই তাদের কাছে আমাদের সত্যতা যাচাই করতে হবে। ’
কোন স্থান থেকে উড়োজাহাজটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় তা সনাক্ত করতে সরকার মালয়েশিয়ার সব নৌযানকে মোতায়েন করেছে বলে জানিয়েছেন হিশাম উদ্দিন তুন হুসেইন।
সিএনএন জানিয়েছে, উদ্ধার কাজে দক্ষিণ চীন সাগরে দুটি জাহাজ পাঠিয়েছে চীন। ভিয়েতনামও উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে।
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে চীনের বেইজিংগামী ওই উড়োজাহাজটিতে ১৪টি দেশের নাগরিক ছিলেন। মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের উড়োজাহাজে চীনের ১৫৩, মালয়েশিয়ার ৩৮, ইন্দোনেশিয়ার ১২, অস্ট্রেলিয়ার ৭, ফ্রান্সের ৩, যুক্তরাষ্টের ৩, নিউজিল্যান্ডের ২, ইউক্রেনের ২, কানাডার ২, রাশিয়ার ১, ইতালির ১, তাইওয়ানের ১, নেদারল্যান্ডসের ১ ও অস্ট্রিয়ার ১ নাগরিক রয়েছেন। এদের মধ্যে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই শিশু রয়েছে। এছাড়াও উড়োহাজাহটিতে ১২ জন ক্রু ছিলেন।
বোয়িং ৭৭৭-২০০ সিরিজের উড়োজাহাজটি স্থানীয় সময় শুক্রবার দিনগত রাত ১২টা ৪১ মিনিটে বেইজিংয়ের উদ্দেশে কুয়ালালামপুর ছেড়ে যায়। এর দুই ঘণ্টা পর ভিয়েতনামের আকাশসীমায় নিখোঁজ হয় উড়োজাহাজটি। উড়োজাহাজটি সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে চীনের রাজধানীতে পৌঁছানোর কথা ছিলো।
বিধ্বস্তের খবর পাওয়ার আগে এদিকে ভিয়েতনামের ওয়েবসাইট ভিএন এক্সপ্রেস জানায়, ভিয়েতনামের সন্ধান ও উদ্ধার কর্মকর্তারা ভিয়েতনামের দক্ষিণাঞ্চলীয় কা মাউ প্রদেশের ১২০ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে সর্বশেষ উড়োজাহাজটির সংকেত পেয়েছিলেন।
সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহমেদ জৌহারি ইয়াইয়া বলেছিলেন, ‘আমার অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, বেইজিংয়ের উদ্দেশে রাত ১২টা ৪১ মিনিটে কুয়ালালামপুর ত্যাগকারী এমএইচ৩৭০ ফ্লাইটটির সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করতে পারছি না। ’
তিনি জানান নিখোঁজদের উদ্ধারে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন। এরমধ্যে নিখোঁজযাত্রীদের ৮০ শতাংশের আত্মীয়-স্বজনরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, উড়োজাহাজটি চালাচ্ছিলেন ক্যাপ্টেন জাহারি আহমেদ শাহ। ৫৩ বছর বয়সী এ মালয়েশীয়র ১৮ হাজার ৪৬৫ ঘণ্টা উড়োজাহাজ পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি ১৯৮১ সালে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সে যোগ দেন। আর উড়োজাহাজের প্রধান কর্মকর্তা ফারিক হামিদের ২ হাজার ৮০০ ঘণ্টা উড়োজাহাজ পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ২৭ বছর বয়সী এ পাইলট ২০০৭ সাল থেকে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সে কর্মরত।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, উড়োজাহাজটি ভিয়েতনাম নিয়ন্ত্রিত আকাশসীমায় হারিয়ে যায়। প্রায় ১৬০ চীনা যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটি চীন নিয়ন্ত্রিত আকাশসীমায় প্রবেশ করেনি এবং চীনের নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
১৯৮১ সাল থেকে সেবা প্রদানকারী মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের সবশেষ ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৯৫ সালে। ওই সময় এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ মালয়েশিয়ার তাওয়াউ শহরে বিধ্বস্ত হয়। এতে ৩৪ জনের প্রাণহানি ঘটে।
গত ২০ বছরে বোয়িং ৭৭৭ কোনো ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়েনি। তবে ২০১৩ সালের জুলাইয়ে সান ফ্রান্সিসকো দুর্ঘটনায় ২৯১ যাত্রী ও ১৬ ক্রুবাহী ফ্লাইটটির তিনজন নিহত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৯ ঘণ্টা/আপডেটেড: ১৪০০ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৪
**নিখোঁজ মালয়েশীয় উড়োজাহাজে কোনো বাংলাদেশি নেই
**২৩৯ যাত্রীসহ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ নিখোঁজ