ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

সাগরে মিললো বিধ্বস্ত মালয়েশীয় উড়োজাহাজের চিহ্ন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৫ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৪
সাগরে মিললো বিধ্বস্ত মালয়েশীয় উড়োজাহাজের চিহ্ন

ঢাকা: থাইল্যান্ড উপসাগরের প্রবেশপথে দক্ষিণ চীন সাগরের কাছে মিললো বিধ্বস্ত মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজের চিহ্ন।

শনিবার বিকেলে মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামের জলসীমার মাঝামাঝি স্থানে প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ তেলের রেখা চিহ্নিত করে ভিয়েতনামের সিভিল অ্যাভিয়েশন বিভাগ।



ধারণা করা হচ্ছে, মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বিধ্বস্ত উড়োজাহাজ থেকে তেল নিঃসরিত হয়ে এই রেখা সৃষ্টি হয়েছে।

শনিবার ভোরে নিখোঁজ হওয়ার পর দিনের শেষে বিধ্বস্ত জাহাজের তেলের রেখা চিহ্নিত হওয়ার কথা জানান ভিয়েতনামের সিভিল অ্যাভিয়েশন বিভাগের পরিচালক লাই জুয়ান থানহ।

লাই জুয়ান বলেন, ভিয়েতনামিজ নৌবাহিনীর এএন২৬ নামী একটি বিমান অনুসন্ধান এলাকায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি তেলের রেখা চিহ্নিত করেছে। এটাকে বিধ্বস্ত বোয়িং বিমানের তেলের রেখা হিসেবে মনে করা হচ্ছে। আমরা এই তথ্য সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি এবং তল্লাশি অব্যাহত রেখেছি।

তবে, এই তেলের রেখা থাইল্যান্ড উপসাগরের প্রবেশপথে মালয়েশিয়া নাকি ভিয়েতনামের জলসীমায় পড়েছে এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে জানান লাই জুয়ান।



শনিবার ভোর থেকে নিখোঁজ উড়োজাহাজটির খোঁজে একযোগে ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর ও ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ তল্লাশিতে নামার পর এই খবর এলো।

এর আগে, উড়োজাহাজটির নিখোঁজ থাকা কিংবা বিধ্বস্ত হওয়া নিয়ে বিভিন্নধর্মী তথ্য প্রচার হতে থাকে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স ও সরকার কর্তৃপক্ষ বিমানটির বিধ্বস্ত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথা বললেও ভিয়েতনামের সিভিল অ্যাভিয়েশন বিভাগের বরাত দিয়ে বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যম বিমানটির বিধ্বস্ত হওয়ার খবরই প্রচার করে।

এছাড়া, এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিতে থাকে মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনাম কর্তৃপক্ষও।

২২৭ যাত্রী ও ১২ ক্রু‘বাহী বোয়িং ৭৭৭-২০০ সিরিজের উড়োজাহাজটি স্থানীয় সময় শুক্রবার দিনগত রাত ১২টা ৪১ মিনিটে বেইজিংয়ের উদ্দেশে কুয়ালালামপুর ছেড়ে যায়। এর দুই ঘণ্টা পর ভিয়েতনামের আকাশসীমায় নিখোঁজ হয় উড়োজাহাজটি। উড়োজাহাজটি সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে চীনের রাজধানীতে পৌঁছানোর কথা ছিলো।



নিখোঁজ হওযার পর দক্ষিণ চীন সাগরে দু‘টি জাহাজ পাঠায় চীন। উদ্ধারকারী দল পাঠায় ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ফিলিপাইনও।

ভিয়েতনাম নৌ বাহিনী এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ ‍মাধ্যম খবরটি জানায়।

কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিংগামী উড়োজাহাজটিতে ১৪টি দেশের নাগরিক ছিলেন।   মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের উড়োজাহাজে চীনের ১৫৩, মালয়েশিয়ার ৩৮, ইন্দোনেশিয়ার ১২, অস্ট্রেলিয়ার ৭, ফ্রান্সের ৩, যুক্তরাষ্টের ৩, নিউজিল্যান্ডের ২, ইউক্রেনের ২, কানাডার ২, রাশিয়ার ১, ইতালির ১, তাইওয়ানের ১, নেদারল্যান্ডসের ১ ও অস্ট্রিয়ার ১ নাগরিক রয়েছেন। এদের মধ্যে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই শিশু রয়েছে। এছাড়াও উড়োহাজাহটিতে ১২ জন ক্রু ছিলেন।

বিধ্বস্তের খবর পাওয়ার আগে এদিকে ভিয়েতনামের ওয়েবসাইট ভিএন এক্সপ্রেস জানায়, ভিয়েতনামের সন্ধান ও উদ্ধার কর্মকর্তারা ভিয়েতনামের দক্ষিণাঞ্চলীয় কা মাউ প্রদেশের ১২০ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে সর্বশেষ উড়োজাহাজটির সংকেত পেয়েছিলেন।



সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহমেদ জৌহারি ইয়াইয়া বলেছিলেন, ‘আমার অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, বেইজিংয়ের উদ্দেশে রাত ১২টা ৪১ মিনিটে কুয়ালালামপুর ত্যাগকারী এমএইচ৩৭০ ফ্লাইটটির সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করতে পারছি না। ’

তিনি জানান নিখোঁজদের উদ্ধারে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন। এরমধ্যে নিখোঁজযাত্রীদের ৮০ শতাংশের আত্মীয়-স্বজনরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, উড়োজাহাজটি চালাচ্ছিলেন ক্যাপ্টেন জাহারি আহমেদ শাহ। ৫৩ বছর বয়সী এ মালয়েশীয়র ১৮ হাজার ৪৬৫ ঘণ্টা উড়োজাহাজ পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি ১৯৮১ সালে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সে যোগ দেন। আর উড়োজাহাজের প্রধান কর্মকর্তা ফারিক হামিদের ২ হাজার ৮০০ ঘণ্টা উড়োজাহাজ পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ২৭ বছর বয়সী এ পাইলট ২০০৭ সাল থেকে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সে কর্মরত।

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, উড়োজাহাজটি ভিয়েতনাম নিয়ন্ত্রিত আকাশসীমায় হারিয়ে যায়। প্রায় ১৬০ চীনা যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটি চীন নিয়ন্ত্রিত আকাশসীমায় প্রবেশ করেনি এবং চীনের নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।

১৯৮১ সাল থেকে সেবা প্রদানকারী মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের সবশেষ ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৯৫ সালে। ওই সময় এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ মালয়েশিয়ার তাওয়াউ শহরে বিধ্বস্ত হয়। এতে ৩৪ জনের প্রাণহানি ঘটে।

গত ২০ বছরে বোয়িং ৭৭৭ কোনো ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়েনি। তবে ২০১৩ সালের জুলাইয়ে সান ফ্রান্সিসকো দুর্ঘটনায় ২৯১ যাত্রী ও ১৬ ক্রুবাহী ফ্লাইটটির তিনজন নিহত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৪

** ২৩৯ আরোহীসহ বিধ্বস্ত মালয়েশীয় উড়োজাহাজের খোঁজে তল্লাশি

**নিখোঁজ মালয়েশীয় উড়োজাহাজে কোনো বাংলাদেশি নেই
**২৩৯ যাত্রীসহ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ নিখোঁজ

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।