ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

৩০ বছর পর ফাঁসির আসামির মুক্তি!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৪
৩০ বছর পর ফাঁসির আসামির মুক্তি!

ঢাকা: ৩০ বছর পর ফাঁসির আসামি আবার মুক্তজীবনে ফিরে এসেছেন! অবিশ্বাস্য মনে হলেও ঘটনা সত্যি! শুধু তাই নয়, ৩০ বছর পর প্রমাণিত হয়েছে যে, ওই ফাঁসির আসামি আসলেই নির্দোষ! তাও আবার খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে!

আদালতের ভুল রায়ে গ্লেন ফোর্ড নামে ওই ব্যক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লুইজানার কারাগারে ৩০ বছর সাজা খেটেছেন। তার বর্তমান বয়স ৬৪ বছর।

মুক্তির আগে দিন গুণেছেন ফাঁসির দড়ি গলায় লটকানোর দৃশ্য কল্পনা করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এত সময় বিনাদোষে ফাঁসির জন্য অপেক্ষা করেছেন এমন ঘটনা বিরল। তবে ভুল রায়ের ঘটনা অনেকবারই ঘটেছে সে দেশে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
   
গার্ডিয়ান জানায়, লুইজানা স্টেটের প্রসিকিউটর শ্রেফপোর্ট আদালতের বিচারককে জানান, ফোর্ডকে আর আটকে রাখা যায় না। এরপরই তাকে আদালত মুক্তির আদেশ দেন। এরপর সম্প্রতি মুক্তি পান ফোর্ড।

২০১৩ সালের শেষ দিকে লুইজিয়ানা স্টেট থেকে ফোর্ডের আইনজীবীকে জানানো হয়, একটি খুনের ঘটনায় চার খুনির অপর একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে।

১৯৮৪ সালে আদালত গ্লেন ফোর্ডকে ফাঁসির আদেশ দেয়। এর আগে এ বছরের নভেম্বরে ইসাডোর রোজম্যান নামে এক শ্বেতাঙ্গ ‘শ্রেফপোর্ট জুয়েলারি’ নামে একটি গহনার দোকান মালিক খুন হন। ফোর্ড মূলত গহনা আনা-নেওয়ার কাজ করতেন। নিরাপত্তার জন্য তাকে একটি .৩৮ বোরের একটি রিভলবার দেন মালিক।

রোজম্যান খুন হওয়ার পর পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে তখন গ্লেন ফোর্ড আটক করে নিয়ে যায়। এরপর খুনিদের একজন হিসেবে বিবেচনা করে আদালত তাকে ফাঁসির আদেশ দেয়। এরপর দীর্ঘ ৩০ বছর কারাগারে ফাঁসির অপেক্ষায় সময় কাটাতে হয়েছে গ্লেন ফোর্ডের।

মুক্ত হওয়ার পর জেলগেটে স্থানীয় ডব্লিউএএফবি-টিভিকে জানান, ‘খুব ভালো লাগছে। আমার মন যা চায়, তাই করতে পারবো। আহ! খুব ভালো লাগছে। ’

তিনি বলেন, ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে আমাকে ভুল করে আমাকে জেলে পাঠানো হয়। হ্যাঁ, শুধুমাত্র এই কারণেই আমাকে ৩০ বছর জেলে কাটাতে হয়েছে। অথচ যে অপরাধ আমি করিনি, সেই অপরাধে আমাকে ফাঁসির দিন গুণতে হয়েছে।

হতাশ স্বরে ফোর্ড বলেন, আমি এখন আর সেই সময় অর্থাৎ ৩৫, ৩৮ কিংবা ৪০ বছরে ফিরে যেতে পারবো না। শুধু তাই নয়, তখন যা করতে পারতাম, এখন আর সে কাজ করতে পারবো না!

১৯৮৪ সালের খুনের ঘটনায় লুইজিয়ানা স্টেট কোনো প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীকে আদালতে হাজির করতে ব্যর্থ হয়। এ ছাড়া ওই রিভলবার যে, খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত হয়েছে, সেটিও প্রমাণ করতে পারেনি।

শেষমেষ, সাক্ষীদের আবার ডাকা হলে এক সাক্ষী মার্ভেলা ব্রাউন বলেন, ‘আমি আদালতকে মিথ্যা বলেছিলাম। আমি সবকিছুই মিথ্যা বলেছিলাম। ’

মার্ভেলা ব্রাউন অন্য সন্দেহভাজন খুনির গার্লফ্রেন্ড ছিলেন। তাকে বাঁচাতেই তিনি গ্লেন ফোর্ডের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।

গ্লেড ফোর্ডের ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থার অসঙ্গতিকেই তুলে ধরেছে বলে জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান। সন্দেহ নেই যে, এ ঘটনা ফাঁসির আদেশদানকারী বিচারপতিদের অস্বস্তিতে ফেলবে। শুধু তাই নয়, ঘটনাটি সে দেশের মৃত্যুদণ্ড বিরোধী আন্দোলনকারীদের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে।

গ্লেন ফোর্ড আফ্রিকা-আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ। আর যিনি খুন হয়েছিলেন, তিনি এবং জুরিরা শ্বেতাঙ্গ হওয়ার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন, গ্লেন ফোর্ড।

গ্লেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফাঁসির আদেশ পাওয়ার পর মুক্তিপ্রাপ্তদের ১৪৪তম।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫২ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।