ঢাকা: ‘সব ঠিক আছে, শুভ রাত্রি’ (অলরাইট, গুড নাইট) ছিল নিখোঁজ হওয়া মালয়েশীয় উড়োজাহাজের। ২৩৯ আরোহীসহ ছয়দিন আগে হারিয়ে যাওয়া ফ্লাইট এমএইচ ৩৭০-এ থেকে এ বার্তা কে পাঠিয়েছেন তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।
মালয়েশিয়ার সিভিল অ্যাভিয়েশন অফিসার জুলাজরি মোহাম্মদ আহনুর বলেছেন, এগুলো মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৩৭০ এর ককপিট থেকে শোনা সবশেষ শব্দ ছিলো।
কিন্তু কে পাঠিয়েছে (বার্তা)? তিনি কি পাইলট না তার প্রথম সহচর ছিলেন? বা তাদের সঙ্গে ককপিটে অন্য কেউ ছিলেন?
শনিবার এমএইচ ৩৭০ নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে অসংখ্য প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। পাইলট কারা ছিলেন, তারা দক্ষ ছিলেন কিনাসহ অনেক প্রশ্ন শুধু পাইটলকে নিয়েই।
শুক্রবার মালয়েশিয়ার পরিবহনমন্ত্রী জানান, উড়োজাহাজ নিখোঁজ হওয়ার সম্ভাব্য সব আশঙ্কা বিবেচনা করছেন তদন্তকারীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, যাত্রীবাহী বোয়িং ৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা আকাশে উড়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এ দাবি নাকচ করে দিয়েছে মালয়েশিয়া।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্তকারীদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, মালয়েশিয়ার সামরিক রাডার পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, একটি অচিহ্নিত উড়োজাহাজ ইচ্ছাকৃতভাবে গতিপথ পরিবর্তন করে উল্টো পথে কয়েকশ মাইল উড়িয়েছে। সম্ভবত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের দিকে গেছে উড়োজাহাজটি। তারা মনে করছে, উড়োজাহাজটি এমএইচ ৩৭০ হবে।
উড়োজাহাজ নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে ক্যাপ্টেন জাহারি আহমেদ শাহ’র বাড়ির বাইরে অবস্থান করছে পুলিশ। কিন্তু তারা বাড়ির ভেতরে যাচ্ছেন না।
জাহারি আহমেদ শাহ ১৯৮১ সালে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সে যোগ দেন। ৩৩ বছরের বৈমানিক জীবনে ১৮ হাজার ৩৬৫ ঘণ্টা ফ্লাইট পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।
এমএইচ৩৭০ এ তার সহকারী হিসেবে ছিলেন ফারিক আব্দুল হামিদ। তিনি ২০০৭ সালে মালয়েশীয় এয়ারলাইন্সে যোগ দেন। তার ২ হাজার ৭৬৩ ঘণ্টা ফ্লাইট পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
সিএনএনের অ্যাভিয়েশন করেসপন্ডেন্ট রিচার্ড কুয়েস্ট একবার এমএইচ ৩৭০ এর যাত্রী হিসেবে ভ্রমণের সময় ফার্স্ট অফিসার ফারিক আব্দুল হামিদের সঙ্গে ককপিটে দেখা করেছিলেন। সেসময় হামিদ প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন। ওই সময় কুয়েস্ট দেখেন, সিনিয়র এক পাইলটের নির্দেশনা অনুযায়ী উড়োজাহাজ অবতরণ করছেন। পাইলট হামিদের অবতরণকে ‘পারফেক্ট’ বলে উল্লেখ করেছিলেন।
তবে শুধু রিচার্ড কুয়েস্টই নন, অনেকেই হামিদের সঙ্গে ককপিটে দেখা করেছেন।
থাইল্যান্ড থেকে মালয়েশিয়া ভ্রমণের সময় জন্টি রোস নামের এক যাত্রীর ককপিটে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। ওই ফ্লাইটটিতে সহকারি হিসেবে ছিলেন ফরিক পরিচালনা করছিলেন। ফরিক ও তার সহকর্মীদের ধুমপান করতে দেখতে পান।
দক্ষিণ আফ্রিকান এক নারী দাবি করেছেন, ২০১১ সালে কুয়ালালামপুর থেকে থাইল্যান্ডের ফুকেতে যাওয়ার সময় ককপিটে গিয়েছিলেন তিনি। তার সঙ্গে অন্যান্য নারীও ছিল।
ফরিকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারীদের বক্তব্য সত্য হলে উড়োজাহাজটি নিখোঁজ হওয়ার দিন ককপিটে তৃতীয় কোনো ব্যক্তি প্রবেশ করে থাকতে পারেন।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজে ককপিটে যাত্রীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। তবে অন্যান্য অনেক দেশে এ আইন কার্যকর করা হয়নি।
শুক্রবার দিনগত রাত গ্রিনিচমান সময় ১৬৪১ মিনিটে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের উদ্দেশে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর ত্যাগ করে বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজটি। কিন্তু উড্ডয়নের ৫০ মিনিটের মধ্যে উধাও হয়ে যায় ১৪টি দেশের নাগরিকবাহী উড়োজাহাজটি।
এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও এর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। নিখোঁজ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ভিয়েতনামের এক নৌ কর্মকর্তা দাবি করেছিলেন, দক্ষিণ চীন সাগরের ভিয়েতনাম উপকূলে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হতে পারে। কিন্তু মালয়েশিয়া এ দাবি নাকচ করে দেয়। ভিয়েতনামও নিজেদের দাবির পক্ষে জোড়ালো কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
এরপর চীন উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার কথা জানায়। গুগল মানচিত্রে তার ধ্বংস চিহ্ন পাওয়ার দাবি করলেও মালয়েশিয়া এটিও নাকচ করে দেয়। পরে চীন থেকেও তাদের দাবি প্রত্যাহার করা হয়। গুগল কর্তৃপক্ষও জানায়, গুগল মানচিত্রে এমন কোনো চিহ্ন আসলে পাওয়া যায়নি।
দক্ষিণ চীন সাগর থেকে মালাক্কা প্রণালীতে চালানো হয় সন্ধান অভিযান। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞেরা দাবি করেন, উড়োজাহাজটি গতিপথ পরিবর্তন করে মালাক্কা প্রণালীর দিকে উড়েছে। এরপর শুরু হয় মালাক্কা প্রণালীতে তল্লাশি।
যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম ও ভারতের অভিযানে নিখোঁজ উড়োজাহাজের কোনো খোঁজ না পেয়ে অভিযান অঞ্চল ভারত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞেদের ধারণা, উড়োজাহাজটি গতিপথ পাল্টে ভারত মহাসাগরের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দিকে উড়েছে।
এ দাবির আগে তারা জানায়, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরও ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা উড়োজাহাজটি আকাশে উড়েছে।
উড়োজাহাজ নিখোঁজ নিয়ে রহস্য ঘুরপাক খাচ্ছে। নিখোঁজ হওয়ার পর উদ্ঘাটিত হয় ইতালি ও অস্ট্রিয়ার দুই নাগরিক চোরাই পাসপোর্ট ব্যবহার করে উড়োজাহাজে ভ্রমণ করেছেন দুই ইরানি যুবক। কিন্তু তাদের পরিচয় শনাক্ত করার পর মালয়েশীয় পুলিশ জানায়, কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা নেই।
অনেকে বলছেন, ক্রিমিয়া নিয়ে ইউক্রেন ও পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে রাশিয়ার যে উত্তেজনা বিরাজ করছে তা থেকে বিশ্ববাসীর নজর এড়াতে রাশিয়া উড়োজাহাজ নিখোঁজের পেছনে হাত রাখতে পারে।
** ইচ্ছা করে আন্দামানের পথে উড়েছে উড়োজাহাজটি!
বাংলাদেশ সময়: ২২০১ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৪