ঢাকা: মালয়েশীয় উড়োজাহাজ এমএইচ৩৭০ নিখোঁজ হওয়ার পর বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য, বিভিন্ন আশঙ্কার কথা বলা হলেও স্পষ্ট কোনো কারণ বের করতে ব্যর্থ হয়েছে এ ঘটনার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। আধুনিক প্রযুক্তি, স্যাটেলাইট সত্ত্বেও উড়োজাহাজের এখনও হদিস না মেলায় সন্দেহ বা গুজব দিনে দিনে বাড়ছে।
বোয়িং৭৭৭-২০০ইআর-এর যাত্রী ও ক্রুদের আদ্যোপান্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার পরও উড়োজাহাজ নিখোঁজের সম্ভাব্য কোনো কারণ উদ্ঘাটন করা যায়নি।
২৩৯ আরোহীবাহী উড়োজাহাজটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিধ্বস্ত করা হয়েছে, নাকি এর পেছনে অপরাধীদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিংবা এ দুই উদ্দেশ্যে কেউ উড়োজাহাজটি ছিনতাই করেছে-তারও কোনোটির বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারছেন না মালয়েশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ বিভিন্ন দেশের সামরিক ও উড়োজাহাজ বিশেষজ্ঞেরা।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, নিজেদের এ ব্যর্থতা স্বীকার করেছেন পশ্চিমা নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও চীনা কর্তৃপক্ষ।
মালয়েশিয়া জানিয়েছে, এমএইচ৩৭০ এর সন্ধান অভিযান নিয়ে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
৮ মার্চ নিখোঁজ হওয়া উড়োজাহাজটির খোঁজে এখন ২৬টি দেশ অভিযানে নেমেছে। কাস্পিয়ান সাগর থেকে ভারত মহাসাগরের দক্ষিণাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত করা হয়েছে সন্ধান অঞ্চল।
এতোদিন জলে সন্ধান অভিযান চললেও চীন মঙ্গলবার থেকে স্থলে অভিযান চালু করেছে। আপাতত নিজ ভূখণ্ডে এ অভিযান চালাচ্ছে চীন। চীনা বলেছে, তাদের দেশের ১৫৩ নাগরিকবাহী উড়োজাহাজটি নিখোঁজের পেছনে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রমাণ তারা পায়নি।
মালয়েশিয়া বলছে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে উড়োজাহাজটির গতিপথ পাল্টানো হয়েছে। গতিপথ পাল্টে শেষ শনাক্ত স্থান মালাক্কা প্রণালী থেকে উত্তরাঞ্চল বা দক্ষিণাঞ্চলে পাড়ি দিয়েছে ১৪ দেশের নাগরিকবাহী উড়োজাহাজটি।
মালয়েশিয়ার এমন বক্তব্যের পর কাজাখস্তান ও তুর্কমেনিস্তান থেকে থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চল ও ইন্দোনেশিয়া থেকে ভারত মহাসাগর রুটের দিকে নজর দিয়ে সন্ধান অভিযান চালানো হচ্ছে।
তদন্তে সম্পৃক্ত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলেছেন, উড়োজাহাজের প্রত্যেক আরোহীর আদ্যোপান্ত বিভিন্ন দেশের সরকার যাচাই-বাছাই করেছে। কিন্তু সোমবার পর্যন্ত জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা কিংবা উড়োজাহাজ নিখোঁজ হওয়ার অন্য কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উড়োজাহাজের পাইলট, কো-পাইলটের বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ, জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তাদের পরিবারের সদস্যদের, পাইলটের বাড়ি থেকে জব্দ করেছে সিমুলেটর।
কিন্তু সরকারবিরোধী উদ্দেশ্যে তারা উড়োজাহাজ ছিনতাই করেছে কিনা সেটিও স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না তদন্তকারীরা। যদিও দুই প্রধান পাইলট জাহারি আহমেদ শাহ ও কো-পাইলট ফারিক আব্দুল হামিদের এক সঙ্গে উড়োজাহাজ চালানোর ক্ষেত্রে মালয়েশীয় এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের কোনো নির্দেশনা ছিল না।
তাছাড়া দীর্ঘ ৩৩ বছরের বৈমানিক জীবনে জাহারি আহমেদ শাহের বিরুদ্ধে নিয়ম-শৃঙ্খলা বহির্ভূত কর্মকাণ্ড নিয়ে তেমন গুরুতর কোনো অভিযোগও নেই। তবে তার সহকারী ফারিক আব্দুল হামিদের বিরুদ্ধে ককপিটে ধূমপান, যাত্রী প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
রাডার থেকে হারিয়ে যাওয়ার আগে ককপিট থেকে কে শেষ বার্তা ‘সবঠিক আছে, শুভরাত’ (অলরাইট, গুডনাইট) পাঠিয়েছিল সেটি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হলেও সেটি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্তকারীরা। তদন্তকারীরা বলছেন, কো-পাইলটই এ বার্তা পাঠিয়েছিলেন।
মালয়েশিয়ার সামরিক রাডারে উড়োজাহাজের গতিপথ পাল্টানোর বিষয়টি ধরা পড়লেও এরপর কোন দিকে গেছে সেটি নিয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারছে না দেশটির সামরিক বাহিনী।
** একাধিকবার গতিপথ পরিবর্তন করেছে উড়োজাহাজটি!
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৪