ঢাকা: এবার দক্ষিণ ভারত মহাসাগরে নিখোঁজ মালয়েশীয় উড়োজাহাজের ‘ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন’ পাওয়ার দাবি করেছে চীন। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের উপগ্রহে (স্যাটেলাইট) নতুন করে ধরা পড়া চিত্র নিখোঁজ উড়োজাহাজের ‘ধ্বংসাবশেষ’র কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
চীন সরকারের এ দাবির কথা শনিবার বিকেলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়ান পরিবহনমন্ত্রী হিশামুদ্দীন হুসেইন।
নিয়মিত ব্রিফিংকালে হিশামুদ্দীন হুসেইন বলেন, দক্ষিণাঞ্চলীয় তল্লাশি এলাকায় (মালাক্কা প্রণালী ও তৎসংলগ্ন এলাকা থেকে থাইল্যান্ড উপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত) চীনা উপগ্রহে ধরা পড়া সম্ভাব্য ধ্বংসাবশেষের বস্তুটির আকার দৈর্ঘ্যে ১৩ মিটার এবং প্রস্থে ২২ মিটার।
এছাড়া, চীনা সরকারই শনিবার এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দেবে বলে জানান তিনি।
এর আগে, দক্ষিণ ভারত মহাসাগরেরই অস্ট্রেলিয়ার পার্থ উপকূলে উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়া দু’টি বস্তু মালয়েশীয় উড়োজাহাজের ‘ধ্বংসাবশেষ’ বলে অনুমান করা হলেও অনুসন্ধানে সেটি সঠিক প্রমাণিত হয়নি।
৮ মার্চ উড্ডয়নের ঘণ্টাখানেকের মধ্যে উধাও হওয়া মালয়েশীয় উড়োজাহাজের সন্ধান শনিবার পর্যন্ত মেলেনি। ২৬ দেশের সন্ধান অভিযান গড়িয়েছে তিন সপ্তাহে, দিন যত যাচ্ছে হতাশা তত বাড়ছে।
সবশেষ উদ্ধার অভিযান চলছে ভারত মহাসাগরের পশ্চিমা অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম শহর পার্থের উপকূলে। দু’দিন আগে উপগ্রহে পার্থ থেকে ২৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারত মহাসাগরে ভাসমান দু’টি বস্তু শনাক্ত করা গেছে। কিন্তু ওই বস্তু দু’টি নিখোঁজ উড়োজাহাজের বিধ্বস্তের ধ্বংসাবশেষ কিনা সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
নিখোঁজ হওয়ার পর একে একে ২৬টি দেশে সন্ধান অভিযানে নেমেছে। প্রথমে দক্ষিণ চীন সাগরের ভিয়েতনাম উপকূলে ২৩৯ আরোহীবাহী এমএইচ ৩৭০ ফ্লাইটি বিধ্বস্তের খবর পাওয়া গেলেও এর কোনো প্রমাণ মেলেনি।
তারপর দক্ষিণ চীন সাগরে উপগ্রহ চিত্রে সম্ভাব্য ধ্বংসাবশেষের বস্তু শনাক্ত করা গেছে বলে দাবি করে চীন। এ দাবির পক্ষেও সত্যতা উপস্থাপন করা যায়নি।
এরপর রাডারের তথ্য বিশ্লেষণ করে মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞেরা জানতে পারেন, কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিংগামী উড়োজাহাজটি উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে গতিপথ পরিবর্তন করেছে। আর রাডার থেকে হারিয়ে যাওয়ার পরও ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা আকাশে উড়েছে।
গতিপথ পরিবর্তনের বিষয়টি সামনে আসার পর সন্ধান অভিযান চালানো শুরু হয় মালাক্কা প্রণালীতে। বলা হয়, মালয়েশীয় উপকূলের মালাক্কা প্রণালী থেকে হয়তোবা উত্তরাঞ্চল নতুবা দক্ষিণাঞ্চলে গেছে উড়োজাহাজটি।
এরপর মধ্য এশিয়ার কাজাখস্তান ও তুর্কমেনিস্তান থেকে থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চল এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে ভারত মহাসাগর রুটের দিকে নজর রেখে সন্ধান অভিযান চালানো হয়।
নিখোঁজ হওয়ার পর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ নিয়ে বিভিন্ন রকম সম্ভাবনার কথা প্রকাশ করে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি রেডিও জানায়, বাংলাদেশের ৯টি স্থানসহ বিশ্বের ২৬টি দেশের ৯৩৪টি স্থানে উড়োজাহাজটি অবতরণের সম্ভাবনা থেকে থাকতে পারে।
উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত না ছিনতাই হয়েছে তা নিয়েও এখন পর্যন্ত কোনো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
দু’দিন আগে পৃথিবীর দুর্গম অংশ ভারত মহাসাগরের অস্ট্রেলিয়ার পার্থ থেকে ২৫০০ কিলোমিটার দূরে ভাসমান দুটি বস্তুকে উড়োজাহাজের বিধ্বস্তের চিহ্ন হিসেবে মনে করা হয়। ভাসমান এ বস্তু উদ্ধারে বিভিন্ন দেশের উড়োজাহাজ ও জাহাজ অংশ নেয়। নরওয়ের একটি জাহাজ এতে অংশ নেয়।
উড়োজাহাজ উধাওয়ের প্রথম দিকে ছিনতাইয়ের সম্ভাবনা যতটুকু ছিল এখন আর সেভাবে দেখা হচ্ছে না।
উড়োজাহাজের দুই যাত্রী চোরাই পাসপোর্ট ব্যবহার করে ভ্রমণ করেছে-এমন তথ্য প্রকাশের পর ছিনতাই হওয়ার সম্ভাবনাকে বেশি করে দেখেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু ওই দুই যাত্রীর পরিচয় উন্মোচন হওয়ার পর তাদের সঙ্গে জঙ্গিদের কোনো সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উড়োজাহাজের পাইলট ও যাত্রীদের ব্যাপারেও আদ্যোপান্ত খোঁজ-খবর নিয়েছেন মালয়েশীয় ও যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। কিন্তু যাত্রীদের কারও সম্পর্কে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোনো তথ্য এখনও পর্যন্ত জানায় মালয়েশিয়াসহ তদন্ত কাজে নিয়োজিত দেশের কর্মকর্তারা।
ককপিট থেকে ‘অলরাইট, গুডনাইট’(সব ঠিক আছে, শুভরাত্রি) বার্তা নিয়ে সন্দেহের উদয় হলেও সেটিরও মীমাংসা হয়ে গেছে।
জানা গেছে, কো-পাইলট শেষ বার্তা পাঠিয়েছিলেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বার্তাটি রেকর্ডকৃত হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৯ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৪