ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

রাশিয়ার গ্যাস খরিদ্দার যুক্তরাজ্য নিষেধাজ্ঞা মানবে না!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৪
রাশিয়ার গ্যাস খরিদ্দার যুক্তরাজ্য নিষেধাজ্ঞা মানবে না!

ঢাকা: ইউক্রেনের উপদ্বীপ ক্রিমিয়াকে নিজ ভূখণ্ডগত করায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এ নিষেধাজ্ঞা আরো বাড়ানোর হুমকি দিয়েছে পশ্চিমারা।

কিন্তু পশ্চিমাদের হুমকিকে থোরাই কেয়ার করছে রাশিয়া।

রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন। ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার মেদভেদেভ বলেছেন, পশ্চিমারা যদিও ‍অধিকতর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলেও যেসব কোম্পানি রাশিয়ায় কাজ করতে চায় তাতে কোনো বাধার সৃষ্টি হবে না। মেদভেদেভের বরাত দিয়ে ইন্টারফ্যাক্স আরও জানায়, সবকিছুই ভালো হবে।

রাশিয়ার এই নিশ্চিন্ত ভাবনার প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে গ্যাস আর তেল। এই প্রাকৃতিক সম্পদে ভর করেই পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞাকে ভয় করছেন না রুশ নেতারা।

মেদভেদেভও বলেছেন, পশ্চিমারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বাড়ালে বিদেশি তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সহযোগিতায় প্রভাব পড়বে।

অযৌক্তিক বলেননি মেদভেদেভ। পশ্চিমাদের অন্যতম শরিক যুক্তরাজ্যের অবস্থান সাদা চোখে দেখলেই নিষেধাজ্ঞা আরোপের কড়াকড়িতে ফাঁকি চোখে ধরা পড়ে।

মস্কোর বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকির মধ্যেই যুক্তরাজ্য নিজেই রাশিয়ার সঙ্গে চলতি বছরে গ্যাস কিনবে। যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম তেল-গ্যাস কোম্পানি সেনট্রিকা গ্যাস কেনার এ চুক্তি ২০১২ সালে করে রেখেছে। ইউক্রেন নিয়ে  ইইউর চাপ সত্ত্বেও চুক্তি থেকে পেছনে আসেনি সেনট্রিকা।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও শঙ্কায় আছেন, নিষেধাজ্ঞা বাড়লে রুশ ধনপতিদের বাজার হারাবে তার দেশ। সম্প্রতি তিনি সতর্ক করে বলেছেন, নিষেধাজ্ঞায় চেলসি ফুটবল ক্লাবের মালিক রোমান আব্রামোভিচের মতো রুশ অভিজাতরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, আর যুক্তরাজ্যে খরচও কমিয়ে দেবেন রুশরা।

যুক্তরাজ্যের দেশজ গ্যাস উৎপাদন প্রতি বছর ৭ শতাংশ করে কমছে। এর আগে রাশিয়া থেকে সরাসরি গ্যাস আমদানি না করলেও এবার সেনট্রিকা তা করবে। রাশিয়া থেকে যুক্তরাজ্যে জার্মানি ও ইউরোপের ‍অন্যান্য দেশের পাইপলাইনের মাধ্যমে আসে।

২০১২ সালে দেশে ব্যবহৃত ৯১ বিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাসের ‍অর্ধেক উৎপাদন করে যুক্তরাজ্য। এর ২৯ শতাংশ নরওয়ে, ৭ শতাংশ নেদারল্যান্ডস, ৩ শতাংম বেলজিয়াম ও প্রায় ১৫ শতাংশ কাতার থেকে আমদানি করা হয়।

তবে টরি রাজনীতিবিদরা মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞার পক্ষে। পার্লামেন্টের ট্রেজারি সিলেক কমিটির প্রভাবশালী সদস্য ও ব্রুকস নিউমার্ক বলেছেন, আমরা অর্থনৈতিকভাবে রাশিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, একইভাবে তার সহচরদেরও। আমরা তাদের ওপর বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক চাপ দিতে পারি।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস কোম্পানি গ্যাজপ্রম যুক্তরাজ্যে ১১ থেকে ১২ বিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাস রফতানি করে। যুক্তরাজ্যের মোট গ্যাসের চাহিদার ১৫ শতাংশ মেটায় রাশিয়া। আর ইউরোপের এক তৃতীয়াংশ গ্যাস সরবরাহ করে মস্কো।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের ক্ষমতাচ্যুতির পর ইউক্রেনের উপদ্বীপ ক্রিমিয়ায় কিয়েভের সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। অবশেষে ইউক্রেনে থেকে আলাদা হয়ে যায় ক্রিমিয়া। গণভোটের মাধ্যমে ইউক্রেন থেকে আলাদা হওয়া ক্রিমিয়াকে নিজ দেশের সঙ্গে যুক্ত করে রাশিয়া। এর আগে ক্রিমিয়ার আঞ্চলিক সরকারের আহ্বানে সেখানে সামরিক বাহিনী পাঠায় রাশিয়া।

রাশিয়ার এমন আচরণকে ‘আগ্রাসন’ হিসেবে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।

নিজের নীতির প্রতি অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন আদায় করার চেষ্টায় রয়েছেন তিনি। ফ্রান্স, জার্মানিও ক্রিমিয়াকে নিজ দেশভুক্ত করায় রাশিয়ার সমালোচনা করেছে। উন্নত দেশগুলোর গোষ্ঠী জি-৮ এর অনুষ্ঠেয় সম্মেলন বাতিল করেছে বাকি ৭ দেশ।

গত বছরের নভেম্বরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে নির্ধারিত চুক্তি থেকে সরিয়ে আসার পর ইউক্রেনের রুশপন্থি প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনে ‍তার সরকারের প্রধানমন্ত্রী, উপ-প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা পদত্যাগ করে। অবশেষে দেশ ছেড়ে পালিয়ে মস্কোয় আশ্রয় নেন ইয়ানুকোভিচ। ইয়ানুকোভিচের ক্ষমতাচ্যুতিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন গণতন্ত্রকামীদের জয় বলে উল্লেখ করলেও একে ‘ক্যু’ হিসেবে উল্লেখ করে রাশিয়া।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।