ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

দেশের জনগণই মিশর শাসন করবেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১১
দেশের জনগণই মিশর শাসন করবেন

ব্রিটেনের দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে মিশরের চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলন নিয়ে লিখেছেন আহদাফ সাউইফ। আহদাফ মিশরের গুরুত্বপূর্ণ গল্পকার, ঔপন্যাসিক।

বিভিন্ন সময়ে তিনি রাজনীতি ও সংস্কৃতি নিয়েও লেখালেখি করেন। সন্তানাদিসহ পালাক্রমে লন্ডন ও কায়রো শহরে থাকেন। মঙ্গলবার প্রকাশিত তার লেখাটি অনুবাদ করেছেন নুসরাত জাহানরাবেয়া আশরাফী পিংকি

আমরা প্রত্যাশা করি, মিশর কিভাবে পরিচালিত হবে এমন কল্পনাশক্তি আমাদের জনপ্রিয়, তারুণ্যদীপ্ত এবং শান্তিকামী গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকেই বিকাশ লাভ করবে।

গতকালের (সোমবার) আহ্বানে সাড়া দিয়ে আজ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মূল কেন্দ্র কায়রোর তাহরির চত্ত্বরে দশ লাখ মানুষের সমাবেশ ঘটেছে। আমিও তাদের মধ্যে একজন।

প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার চেষ্টা করছে। অথচ এর গঠন কাঠামো মিশরীয় জনগণের দাবি দাওয়া পূরণে পুরোপুরি একেবারেই ব্যর্থ হয়েছে। আজকের ‘লাখো জনতার মিছিল’ মূলত এটাই প্রমাণ করে, নতুন মোড়কে পুরাতন সরকার ব্যবস্থা জনগণকে বোকা বানাতে পারবে না। (ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীসহ সবাই মোবারকের ঘনিষ্ঠ। )

এমনকি তারা আগের সরকারের শাসনব্যবস্থা থেকেও বের হয়ে আসতে পারবে না। এই সরকার ইন্টারনেট, ইমেইল, মোবাইল ফোন এবং সপ্তাহ শেষে আল-জাজিরার মতো টিভির সম্প্রচার নিষিদ্ধ করেছে।

আমাদের সরকার আমাদের ওপর যে নিষ্ক্রিয়তা চাপিয়ে দিয়েছে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করেছি। মিশরের জনগণ স্বতর্স্ফূতভাবে পাশ্ববর্তী দেশের দৃষ্টান্ত কাজে লাগিয়েছেন। রাস্তায় তারা অসিহংস আন্দোলনের পরিবেশ বজায় রেখেছেন।  

গত সপ্তাহের ঘটনাগুলো এটাই প্রমাণ করে যে ৩০ বছর ধরে চলে আসা শাসনব্যবস্থা এখন আর জনগণের উপযোগী নয়। বেশিভাগ মানুষের এটা দৃঢ় বিশ্বাস।

আমরা এখন মোবারক এবং তার দোসরদের পদত্যাগ চাই। তবে এরপর কি হবে এটা অবশ্য সর্বস্তরের জনগণের জন্যই একটা বড় প্রশ্ন।  

কেননা এখানে এমন কোনো দল নেই যারা এ বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এখানে সবাই সবার নেতা। যদিও বিক্ষোভের অধিকাংশ জুড়েই আছেন দেশের তরুণ সম্প্রদায়। তারাই মূলত বিক্ষোভে শক্তি জোগাচ্ছেন, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক স্তর থেকে বিভিন্ন সংস্থার জোগান দিচ্ছেন। একইসঙ্গে তারা সেসব শ্রদ্ধাশীল জনপ্রিয় ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পেয়েছেন যারা তাদের বিশেষ দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে এ আন্দোলনে প্রতিনিয়ত যোগ করে যাচ্ছেন নতুন মাত্রা ।    

প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠনের জন্য স্বচ্ছ ও স্বাধীন নির্বাচনই মিশরীয়দের অন্যতম প্রধান দাবি। এছাড়াও সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মুক্ত বিতর্কেরও প্রয়োজন রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমাদের জন্য কোনটি সঠিক, প্রেসিডেন্সিয়াল না সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা? এক্ষেত্রে বিচারকম-লীর ক্ষেত্রে আমাদের প্রয়োজন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি এবং এমন রাজনীতিক যারা এখনও সম্মানিত, সর্বজন শ্রদ্ধেয়।

আমরা একচেটিয়া শাসন চাই না, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বরং সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ দেখতে চাই। তবে বর্তমান মিশরীয় সরকার শান্তিপ্রিয় জনগণের ওপর রাবার বুলেট এবং তাজা গুলি নিক্ষেপ করেছেন। তাহরির স্কয়ারে মসজিদের পাশে নির্মিত অস্থায়ী হাসপাতালে ভয়াবহ আহত মানুষদের নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে।  

এটি কোথায় যাচ্ছে? কেউ সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর দিতে পারবেন না। কিন্তু আমাদের শান্তিকামী, জনপ্রিয়, গণতান্ত্রিক এবং তৃণমূল পর্যায়ের আন্দোলন ভবিষ্যৎ মিশরীয় শাসনব্যবস্থার একটি ইঙ্গিত দেবে বলেই আমরা আশা করছি। যেখানে এ দেশ শাসন করবেন দেশের জনগণ এবং তাদের মিত্ররা, আর এমনটা আমরা এখন আশা করতেই পারি।  

ভীতসন্ত্রস্ত মার্কিনী ও ইউরোপীয় লোকজন বলছেন, এটা ইসলামপন্থীদের কাজ। কিন্তু তা সত্যি নয়। এটা সব দল, ধর্মের উর্ধ্বে। এটা হচ্ছে মিশরের সেই তরুণ জনগণ যারা তাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণে রাস্তায় নেমেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।