ঢাকা: বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের ১৬তম সাধারণ নির্বাচন শুরু হচ্ছে সোমবার। শুরু হচ্ছে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধির মোদি পরীক্ষা।
বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট গুজরাটের তিনবারের সফল মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ভবিষ্যত প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করার পর থেকে প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে এখন পর্যন্ত তিনিই এগিয়ে।
ইউপিএকে হারিয়ে প্রধান বিরোধীদল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের (এনডিএ) জয়লাভের সম্ভাবনা প্রবল, বলছে অধিকাংশ জরিপ। তবে এ নির্বাচনে জিততে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধি ও সহ সভাপতি রাহুল গান্ধি প্রচেষ্টার ত্রুটি রাখছেন না।
এই নির্বাচনের ফলাফল যদি বিজেপির দিকে যায় তবে শুধু সোনিয়া নয়, বাংলাদেশের জন্যও অপেক্ষা করছে মোদি পরীক্ষা। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের যে উষ্ণ সম্পর্ক, তাতে কিছুটা ভাটা পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সাম্প্রদয়িকতার কালি মোদির বিজেপির গা থেকে এখনও যায়নি বলে বিরোধীরা প্রচারণা চালাচ্ছে। বাংলাদেশ-নীতি কী হবে তা নিয়ে প্রকাশ্যে কিছুই না বললেও সম্প্রতি আসামের এক নির্বাচনী জনসভায় ‘বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’দের বিরুদ্ধে তদন্ত চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন বিজেপির সভাপতি রাজনাথ সিং।
স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন এবং তিস্তার পানি চুক্তিতে বাধাদানকারী মমতা ব্যানার্জি যদি বিজেপির সঙ্গে জোট বাঁধে সেক্ষেত্রে সমীকরণ আরো জটিল হতে পারে। তবে বিজেপিতে মমতার যাওয়ার বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। মুসলিমদের ভোট টানতে মমতা কথা দিয়েছেন বিজেপির সঙ্গে নেই তিনি।
তবে সেসব পরীক্ষা নেওয়ার আগে বিজেপিকে জিততে হবে ম্যাজিক ফিগার ২৭২টি আসন। যেখানে দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার মোট আসন সংখ্যা ৫৪৩টি।
আর যদি এর চেয়ে কম আসন পায় বিজেপি, তবে হাত পাততে হবে আঞ্চলিক দলগুলোর কাছে। সেক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে ‘আম্মা’ জয় ললিতা, ‘বহেনজি’ মায়াবতী ও ‘দিদি’ মমতা ব্যানার্জিসহ আঞ্চলিক নেতারা। সরকার গঠনেই প্রধান দলগুলোর চেয়ে এই তিন নারীর দলই প্রভাব বিস্তার করবে।
কংগ্রেস নরেন্দ্র মোদিকে সাম্প্রদায়িতকতা দোষে দুষ্ট বলে প্রচারণায় চালিয়েছে। তাদের দাবি, মোদি প্রধানমন্ত্রী হলে ভারতের সব গোষ্ঠীর মধ্যকার অভিন্নতা নষ্ট হবে। অন্যদিকে বিজেপির হাতিয়ার কংগ্রেসের ক্ষমতাসীন সময়ের দুর্নীতি। কংগ্রেস সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারেনি বলেই প্রচারণা চালিয়েছে তারা। এদিকে এই প্রধান দুই পার্টির মাথা ব্যাথা হয়ে উঠেছে আম আদমি পার্টি। এ পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল তো মোদির আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
প্রথমবারের মতো নির্বাচনের আগেই বিজেপি প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করার মত নতুনত্বসহ ভারতের ১৬তম এ নির্বাচনে আছে বহু চমক। দেশজুড়ে প্রথমবারের মতো নয় দফায় গ্রহণ করা হবে ভোট। যা শেষ হবে আগামী ১২ মে। ফলাফল ঘোষণার সম্ভাবনা ১৬ মে।
আবহাওয়া জনিত কারণে কয়েকটি প্রদেশ ছাড়া পুরো ভারতে ভোটগ্রহণ হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। ভোটাররা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট দেবেন। বিরাট দেশটির এবার নির্বাচনে ভোটার ৮১ কোটি ৪৫ লাখ। যাদের বেশির ভাগই তরুণ। প্রায় নয় লাখ ৩০ হাজার ভোটকেন্দ্রের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ চলবে।
এদিকে বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন মেরুকরণ হতে পারে বলেও মনে করেন অনেক বিশ্লেষক। তারা বলছেন, বাংলাদেশকে ভারতের নানাভাবে প্রয়োজন। এ কারণে ক্ষমতা পরিবর্তন হলে চলতি সম্পর্কের অবনতি না হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিছুদিন আগে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হককে ডেকে তেমন ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত। সরকার পরিবর্তন হলেও সম্পর্ক পরিবর্তন হবে না বলে জানিয়েছে দেশটি।
এসব বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আপাতদৃষ্টিতে বিজেপি সরকার গঠন করলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে মৌলিক পরিবর্তন হবে না বলে মনে করি। তবে বিজেপি যদি এককভাবে সরকার গঠন না পারে মমতার আশ্রয় নেয়, তবে পরিস্থিতি ভাল হওয়ার কথা নয়। কারণ, সেক্ষেত্রে তিস্তা চুক্তি বা সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন বিষয়ে মমতার আপত্তির কথা মানতে হবে। তখন আরো ভালো কূটনীতিক তৎপরতা দরকার পড়বে বাংলাদেশের।
সাবেক রাষ্ট্রদূত আশফাকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, যে দলই ভারতে সরকার গঠন করুক না কেন তাদের পররাষ্ট্র নীতিতে তেমন কোনো পরিবর্তন আসবে না। নব্বই দশকের পর থেকে ভারত এক্ষেত্রে ইউরোপের দেশগুলোর মত আচরণ করে। দল পরিবর্তন হলেও দেশের স্বার্থে তারা পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন আনেনা।
একই সুরে সাবেক রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ভারতের নির্বাচনের ফলাফল যাই-ই আসুক বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক যা আছে তাই থাকবে। কারণ, তাদের সব সরকারই পররাষ্ট্রনীতিতে এক থাকার চেষ্টা করে।
বিজেপির সঙ্গে মমতার জোটের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, মমতা বিজেপিতে না গেলেও ভারতের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি বা স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়ন সহজ হবে না। তিনিও এসব বিষয়ে বাংলোদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে আরো বেশি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে অভিমত দেন।
সদিচ্ছা স্বত্বেও কোনভাবেই বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা বা স্থল সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন করতে পারেনি কংগ্রেস সরকার। মূলত পশ্চিমবঙ্গের নেত্রী মমতার বাধার মুখেই পিছু হটেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। ফলে যে সরকারই আসুক, বাংলাদেশের মাথাব্যাথা থাকছেই।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৪