ইসলামাবাদ: ধর্ম অবমাননার অভিযোগে আটক এক স্কুলছাত্রকে মুক্তি দেওয়ার জন্য পাকিস্তানি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। দেশের বিতর্কিত ব্লাসফেমি (ধর্ম অবমাননা) আইনের আওতায় ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মোহাম্মদ সামিউল্লাহকে (১৭) কারাচি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরীক্ষার খাতায় নবী মোহাম্মদকে অবমাননা করায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। ছেলেটির এ ঘটনা সম্পূর্ণভাবে মানবতাবিরোধী বিষয় বলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ উল্লেখ করে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের শিশু অধিকার বিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক বেদে শেফার্ড বলেন, ‘ব্লাসফেমি আইনের অসদ্ব্যবহারের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করেছে। কিন্তু এক কিশোর পরীক্ষার খাতায় কি লিখলো তার কারণে তাকে এ আইনের আওতায় অভিযুক্ত ও আটক করা প্রকৃত অর্থেই মানবতাবিরোধী। ’
‘স্কুল কর্তৃপক্ষের এ বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। কিন্তু এ ঘটনায় পুলিশ ও বিচার বিভাগের ওই ছেলেটিকে হাজতে ঢোকানো সত্যিই অচিন্তনীয়। ’
এদিকে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ব্লাসফেমি আইন সংস্কারের বিরুদ্ধে অপতৎপরতা চালাচ্ছেন বলে বৃহস্পতিবার উদারপন্থী আইনপ্রণেতা শেরি রেহমান অভিযোগ করেন। একইসঙ্গে মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এর তীব্র সমালোচনা করে।
ধর্মকে কটাক্ষ করায় গত বছরের নভেম্বরে আয়েশা বিবি নামে এক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী নারীকে মৃত্যুদ- দেওয়ার পর ব্লাসফেমি আইন সবার নজরে আসে। এর আগে ২০০৯ সালের জুনে ওই নারী পাঞ্জাবে তার গ্রামে নবী মোহাম্মদকে অপমান করার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেন।
আয়েশা বিবির পক্ষ নিয়ে বিতর্কিত এ আইন সংস্কারের দাবি তোলায় নিজ দেহরক্ষীর হাতে খুন হন পাঞ্জাবের গভর্নর সালমান তাসির। একইসঙ্গে ওই নারীকে শাস্তির হাত থেকে রক্ষায় গত নভেম্বরে এ আইন সংস্কারের জন্য সংসদ বরাবর আবেদন করেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী রেহমান।
কিন্তু তাসিরের হত্যাকা- ও আন্তর্জাতিক নিন্দা সত্ত্বেও এ আইন সংস্কারের প্রস্তাব বাতিল করে দেয় পাকিস্তানি সরকার। একই সময়ে দেশজুড়ে আইন সংস্কারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন ধর্মীয় দলগুলো।
এ বিষয়ে বুধবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি আইনপ্রণেতাদের বলেন, দলের নীতি অনুযায়ী রেহমান তার প্রস্তাবিত বিল প্রত্যাহার করে নেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
তবে এ বিষয়টি নাকচ করে দেন ুব্ধ রেহমান। কিন্তু এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হবে না বলে জানিয়ে দেওয়ার পর এখন তা মেনে চলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বলেও স্বীকার করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘এটা ধর্মের নামে চলা বিচার থেকে আমাদের নাগরিকদের রক্ষার প্রশ্ন। কেননা শান্তি ও ধৈর্য বজায় রাখা এখানে অন্য সব কিছুর তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ’
প্রতিবাদকারীদের হুমকির সমালোচনা করে গত ৩০ ডিসেম্বর ব্লাসফেমি আইন অপরিবর্তিত রাখার অঙ্গীকার করে পাকিস্তানি সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১১