ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

একজন মায়ের মহানুভবতা!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৪
একজন মায়ের মহানুভবতা! শেষ মুহূর্তে ছেলের খুনির ফাসিঁর দড়ি খুলছেন আবদুল্লাহ'র মা

ঢাকা: চোখ বাঁধা হয়েছে। গলায় পরানো হয়েছে ফাঁসির দড়ি।

বেদিতে দাঁড় করিয়ে কেবল ক্ষণ-গণনা চলছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে শুধু মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত খুনির পায়ের নিচ থেকে চেয়ার ফেলে দেওয়ার অপেক্ষা। হয়তো খুনি তখন ভাবছিল, সবুজ পৃথিবীর সর্বশেষ শ্বাসটি নিচ্ছে সে। সবার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা, কখন সরছে চেয়ারটি...!

কিন্তু না, আর সহ্য করতে পারলেন না ‘মা’, দৌঁড়ে গিয়ে ছেলের খুনির গালে এক চড় বসিয়ে গলার দড়ি খুলে দিতে বললেন। চেয়ার সরানোর অপেক্ষায় পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা ‘বাবা’ও খুলতে থাকলেন ছেলের খুনির গলায় পেঁচানো দড়ি। দু’জনেই হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। একজন মায়ের ‘মাতৃত্ববোধ’র কাছে হেরে গেল ‘ন্যায়বিচারের দাবি’ও।

স্থানীয় আইন অনুযায়ী প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় ক্ষমার এমন বিরল দৃষ্টান্ত দেখালেন ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় মাজানদারান প্রদেশের রায়ান শহরের একজন ‘মা’।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায়, সাত বছর আগে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে ১৮ বছর বয়সী আবদুল্লাহ হোসেইনজাদেহকে ছুরিকাঘাত করে খুন করে ২০ বছর বয়সী বেলাল। ওই ঘটনার পর বেলাল পালিয়ে যান। তবে, পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ছয় বছর বিচারের সম্প্রতি তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেশ আদালত।

শরিয়া আইন অনুযায়ী, বেলালের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় উপস্থিত থেকে তার পায়ের নিচ থেকে চেয়ার সরানোর কথা খুনের শিকার ছেলের মা-বাবা ও পরিবারের। কিন্তু এরপর যা ঘটলো সেটা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দেশ ইরানে একেবারেই বিরল ঘটনা।

শেষ মুহূর্তে ছেলের খুনিকে ‘চড়‘ মেরে তাকে ক্ষমা করে দিয়ে ফাঁসির বেদি থেকে সরিয়ে গলার দড়ি খুলে দিতে বললেন ‘মা’, আর গলার দড়ি খুলতে লাগলেন ‘বাবা’।

আবদুল্লাহর মায়ের এই ক্ষমার দৃষ্টান্ত আরও বেশি স্মরণীয় এই কারণে যে, শুধু এই একটি ছেলেই তিনি হারাননি, এর আগে তার ১১ বছর বয়সী ছেলে আমিরহোসেইনও মোটরবাইক দুর্ঘটনায় নিহত হয়।

আবদুল্লাহর বাবা আবদুলঘনি হোসেইনজাদেহ বলেন, বাকবিতণ্ডার জের ধরে আমার ছেলেকে ছুরিকাঘাত করেছে বেলাল। কিন্তু বেলাল আসলে ইচ্ছাকৃতভাবে আবদুল্লাহকে খুন করেনি। সে এ ব্যাপারে জানতো না, এমনটি হবে সে ভাবতেও পারেনি।

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, আবদুল্লাহর পরিবার এর আগেও বেলালের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর বিলম্বিত করে।

আবদুল্লাহর বাবা আবদুলঘনি বলেন, একটি সুন্দর স্বপ্ন আমার স্ত্রীর হৃদয়কে পরিবর্তন করে দেয়। সে তিন দিন আগে স্বপ্নে দেখে, আমার ছেলে বলছে, তারা খুব ভাল জায়গায় আছে এবং কোনো প্রতিশোধ না নিতে...!

ইরানের একটি আধা-সরকারি সংবাদ মাধ্যমের চিত্রগ্রাহক আরাশ খামুশি’র তোলা ছবিতে দেখা যায়, বেলালের গলা থেকে ফাঁসির দড়ি খোলার পর হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন আবদুল্লাহর মা, আর দৌঁড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন খুনি বেলালের মা। একজন কাঁদছিলেন ছেলে হারানোর শোকে, আরেকজন ছেলের প্রাণ বেঁচে যাওয়ার আনন্দে!

একজন মা কীসের তাড়নায় ছেলের খুনিকেও ক্ষমা করে দিলেন সে প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া গেলেও দু‌ই ‘মা’য়ের কান্না ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের চোখের কোণে চিকচিক করিয়েছে এটা বলা নিশ্চয় ভুল হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।