কায়রো: গত ৩০ বছর ধরে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকা মিশরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তার পরিবারের সদস্যরাও পাহাড়তুল্য এ সম্পদের মালিক।
বিশ্বের নানা গুরুত্বপূর্ণ শহরে তার সম্পদের বহর দেখে প্রায় চার হাজার বছর প্রাচীন ফারাও রাজবংশের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে মোবারকের শাসনামলকে। সুইস ব্যাংকসহ বিশ্বের নেতৃস্থানীয় ব্যাংকগুলোয় রয়েছে গোপন অ্যাকাউন্ট।
বিশেষজ্ঞদের হিসেবে, মোবারক ও তার পরিবারের মোট সম্পদের পরিমাণ সাত হাজার কোটি মার্কিন ডলার। এ সম্পদ তিনি গড়েছেন মূলত বিমানবাহিনীর কর্মকর্তার সময় সামরিক বাহিনীর যোগসাজসে। তিনি তার সম্পদ পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন।
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞানের প্রফেসর আমানি জামাল বলেন, ‘সামরিক ও সরকারি পর্যায়ে ঠিকাদারি করে তিনি অঢেল সম্পদ জমিয়েছেন। তার শাসনামলে অনেক দুর্নীতি হয়েছে এবং ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে সরকারি সম্পদ লুণ্ঠন করা হয়েছে। ’
তিনি বলেন, মোবারকের বেশিরভাগ সম্পদ রয়েছে মিশরের বাইরে। সম্ভবত যুক্তরাজ্য ও সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান আইএইচএস গ্লোবাল ইনসাইট জানিয়েছে, লন্ডন, প্যারিস, মাদ্রিদ, দুবাই, ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক, ফ্রাংকফুর্টে মোবারক পরিবারের সম্পদ রয়েছে।
প্রফেসর জামাল বলেন, এটাই মধ্যপ্রাচ্যের স্বৈরাশাসকদের প্রবণতা। শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন হলে যাতে এ সম্পদ কেউ ছিনিয়ে না নিতে পারে সে জন্যই এ ব্যবস্থা।
ইংল্যান্ডের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক প্রফেসর ক্রিস্টোফার ডেভিডসন বলেন, মোবারক, তার স্ত্রী ও দুই ছেলে বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হয়ে অর্থ পুঞ্জিভূত করেছেন। মিশরীয় আইনে আছে, বিদেশি কোম্পানিগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ৫১ শতাংশ মালিকানা দেশি অংশীদারকে ছেড়ে দেবে।
ডেভিডসনের হিসেব অনুযায়ী, মোবারক ১৭শ কোটি মার্কিন ডলার নিজের নামে, এক হাজার কোটি ডলার দ্বিতীয় ছেলে গামালের নামে ও চার হাজার কোটি ডলার পরিবারের নামে রেখেছেন। গামালকে মোবারকের উত্তরসূরী ভাবা হয়।
‘দ্য লাস্ট ফারাও: মোবারক অ্যান্ড দি আনসার্টেইন ফিউচার অব ইজিপ্ট ইন দি ওবামা এজ’ বইয়ের লেখক আলাদ্দিন এলাসার বলেন, মোবারক পরিবারের নিজেদের বেশ কয়েকটি বাড়ি রয়েছে মিশরে। এর কতক পেয়েছে আগের প্রেসিডেন্টের (আনোয়ার সাদাত) কাছে, অন্যগুলো মোবারক নিজেই নির্মাণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘দেশব্যাপী তার অনেক বাড়িতে তিনি বেহিসেবি জীবনযাপন করেন। ’
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ প্রকাশিত ২০১০ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, মিশরে প্রায় ২০ শতাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে।
এলাসার তার বইয়ে বলছেন, গামাল ও আলার বড় বড় বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের অংশীদার। চিলির বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ, হিয়ুন্দাই, ভোডাফোন এবং বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেল ও আবাসিক ব্যবসার তারা অংশীদার।
দুই ছেলে বড় আলা ও গামাল। বড় ছেলে আলার রাজনীতিতে তেমন আগ্রহ নেই। গামাল এরই মধ্যে মোবারকের পার্টি এনডিপির মহাসচিবের দায়িত্ব নিয়েছেন।
চলতি বছর ২৫ জানুয়ারি কায়রোর রাস্তায় সরকার বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। মোবারকের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি বছর শেষে ক্ষমতা ছেড়ে দিলেও তার সম্পত্তি অক্ষত থেকে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রয়ারি ০৫, ২০১১